ভবিষ্যতের রঙ্গভূমি (bhobishyoter rongobhumi)
সম্মুখে রয়েছে পড়ি যুগ-যুগান্তর।
অসীম নীলিমে লুটে ধরণী ধাইবে ছুটে,
প্রতিদিন আসিবে, যাইবে রবিকর।
প্রতিদিন প্রভাতে জাগিবে নরনারী,
প্রতিসন্ধ্যা শ্রান্তদেহে ফিরিয়া আসিবে গেহে,
প্রতিরাত্রে তারকা ফুটিবে সারি সারি।
কত আনন্দের ছবি, কত সুখ আশা
আসিবে যাইবে হায়, সুখ-স্বপ্নের প্রায়
কত প্রাণে জাগিবে, মিলাবে ভালোবাসা।
তখনো ফুটিবে হেসে কুসুম-কানন,
তখনো রে কত লোকে কত স্নিগ্ধ চন্দ্রালোকে
আঁকিবে আকাশ-পটে সুখের স্বপন।
নিবিলে দিনের আলো, সন্ধ্যা হলে, নিতি
বিরহী নদীর ধারে না জানি ভাবিবে কারে,
না-জানি সে কী কাহিনী, কী সুখ, কী স্মৃতি।
দূর হতে আসিতেছে, শুন কান পেতে--
কত গান, সেই মহা-রঙ্গভূমি হতে।
কত যৌবনের হাসি, কত উৎসবের বাঁশি,
তরঙ্গের কলধ্বনি প্রমোদের স্রোতে।
কত মিলনের গীত, বিরহের শ্বাস,
তুলেছে মর্মর তান বসন্ত-বাতাস,
সংসারের কোলাহল ভেদ করি অবিরল
লক্ষ নব কবি ঢালে প্রাণের উচ্ছ্বাস।
ওই দূর খেলাঘরে খেলাইছ কারা!
উঠেছে মাথার 'পরে আমাদেরি তারা
আমাদেরি ফুলগুলি সেথাও নাচিছে দুলি,
আমাদেরি পাখিগুলি গেয়ে হল সারা।
ওই দূর খেলাঘরে করে আনাগোনা
হাসে কাঁদে কত কে যে নাহি যায় গণা।
আমাদের পানে হায় ভুলেও তো নাহি চায়,
মোদের ওরা তো কেউ ভাই বলিবে না।
ওই সব মধুমুখ অমৃত-সদন,
না জানি রে আর কারা করিবে চুম্বন।
শরমময়ীর পাশে বিজড়িত আধ-ভাষে
আমরা তো শুনাব না প্রাণের বেদন।
আমাদের খেলাঘরে কারা খেলাইছ!
সাঙ্গ না হইতে খেলা চলে এনু সন্ধেবেলা,
ধূলির সে ঘর ভেঙে কোথা ফেলাইছ।
হোথা, যেথা বসিতাম মোরা দুই জন,
হাসিয়া কাঁদিয়া হত মধুর মিলন,
মাটিতে কাটিয়া রেখা কত লিখিতাম লেখা,
কে তোরা মুছিলি সেই সাধের লিখন।
সুধাময়ী মেয়েটি সে হোথায় লুটিত,
চুমো খেলে হাসিটুকু ফুটিয়া উঠিত।
তাই রে মাধবীলতা মাথা তুলেছিল হোথা,
ভেবেছিনু চিরদিন রবে মুকুলিত।
কোথায় রে, কে তাহারে করিলি দলিত।
ওই যে শুকানো ফুল ছুঁড়ে ফেলে দিলে,
উহার মরম-কথা বুঝিতে নারিলে।
ও যেদিন ফুটেছিল, নব রবি উঠেছিল,
কানন মাতিয়াছিল বসন্ত-অনিলে।
ওই যে শুকায় চাঁপা পড়ে একাকিনী,
তোমরা তো জানিবে না উহার কাহিনী।
কবে কোন্ সন্ধেবেলা ওরে তুলেছিল বালা,
ওরি মাঝে বাজে কোন্ পূরবীরাগিণী।
যারে দিয়েছিল ওই ফুল উপহার,
কোথায় সে গেছে চলে, সে তো নেই আর।
একটু কুসুমকণা তাও নিতে পারিল না,
ফেলে রেখে যেতে হল মরণের পার;
কত সুখ, কত ব্যথা, সুখের দুখের কথা
মিশিছে ধূলির সাথে ফুলের মাঝার।
মিছে শোক, মিছে এই বিলাপ কাতর,
সম্মুখে রয়েছে পড়ে যুগ-যুগান্তর।