নয় (heke uthlo jhor)
হেঁকে উঠল ঝড়,
লাগালো প্রচণ্ড তাড়া,
সূর্যাস্তসীমার রঙিন পাঁচিল ডিঙিয়ে
ব্যস্ত বেগে বেরিয়ে পড়ল মেঘের ভিড়,
বুঝি ইন্দ্রলোকের আগুন-লাগা হাতিশালা থেকে
গাঁ গাঁ শব্দে ছুটছে ঐরাবতের কালো কালো শাবক
শুঁড় আছড়িয়ে ।
মেঘের গায়ে গায়ে দগ্ দগ্ করছে লাল আলো,
তার ছিন্ন ত্বকের রক্তরেখা ।
বিদ্যুৎ লাফ মারছে মেঘের থেকে মেঘে,
চালাচ্ছে ঝক্ঝকে খাঁড়া;
বজ্রশব্দে গর্জে উঠছে দিগন্ত;
উত্তরপশ্চিমের আম-বাগানে শোনা গেল হাঁফ-ধরা একটা আওয়াজ,
এসে পড়ল পাটকিলে রঙের অন্ধকার,
শুকনো ধুলোর দম-আটকানো তুফান ।
বাতাসের ঝট্কা আসে
ছুঁড়ে মারে টুকরো ডাল শুকনো পাতা,
চোখে-মুখে ছিটোতে থাকে কাঁকরগুলো;
আকাশটা ভূতে-পাওয়া ।
পথিক উপুড় হয়ে শুয়ে পড়েছে মাটিতে,
ঘন আঁধির ভিতর থেকে উঠছে ঘরহারা গোরুর উতরোল ডাক,
দূরে নদীর ঘাটে হৈ হৈ রব ।
বোঝা গেল না কোন্ দিকে হুড়্মুড়্ দুড়্দাড়্ ক'রে
কিসের ওটা ভাঙচুর ।
দুর্দুর্ করে বুক,
কী হল, কী হল ভাবনা ।
কাকগুলো পড়েছে মুখ থুবড়িয়ে মাটিতে,
ঠোঁট দিয়ে ঘাস ধরছে কামড়িয়ে,
ধাক্কা খেয়ে যাচ্ছে সরে সরে,
ঝট্পট্ করছে পাখাদুটো ।
নদীপথে ঝড়ের মুখে বাঁশঝাড়ের লুটোপুটি,
ডালগুলো ডাইনে বাঁয়ে আছাড় খায়,
দোহাই পাড়ে মরিয়া হয়ে ।
তীক্ষ্ণ হাওয়া সাঁই সাঁই শান দিচ্ছে আর চালাচ্ছে ছুরি
অন্ধকারের পাঁজরের ভিতর দিয়ে ।
জলে স্থলে শূন্যে উঠেছে
ঘুরপাক-খাওয়া আতঙ্ক ।
হঠাৎ সোঁদা গন্ধের দীর্ঘনিশ্বাস উঠল মাটি থেকে ,
মহূর্তে এসে পড়ল বৃষ্টি প্রবল ঝাপটায়,
হাওয়ার চোটে গুঁড়োনো জলের ফোঁটা,
পাতলা পর্দায় ঢেকে ফেললে সমস্ত বন,
আড়াল করলে মন্দিরের চুড়ো,
কাঁসর-ঘন্টার ঢং ঢং শব্দের দিল মুখচাপা ।
রাত তিন পহরে থেমে গেল ঝড়বৃষ্টি,
কালি হয়ে এল অন্ধকার নিকষ-পাথরের মতো;
কেবলই চলল ব্যাঙের ডাক,
ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ,
জোনাকির মিটিমিটি আলো,
আর যেন স্বপ্নে-আঁতকে-ওঠা দমকা হাওয়ায়
থেকে থেকে জল-ঝরা ঝাউয়ের ঝর্ঝরানি।