প্রাণ-ধারণের বোঝাখানা বাঁধা পিঠের 'পরে, আকাল পড়ল, দিন চলে না, চলল দেশান্তরে। দূর শহরে একটা কিছু যাবেই যাবে জুটে, এই আশাতেই লগ্ন দেখে ভোরবেলাতে উঠে দুর্গা ব'লে বুক বেঁধে সে চলল ভাগ্যজয়ে, মা ডাকে না পিছুর ডাকে অমঙ্গলের ভয়ে। স্ত্রী দাঁড়িয়ে দুয়ার ধরে দুচোখ শুধু মোছে, আজ সকালে জীবনটা তার কিছুতেই না রোচে। ছেলে গেছে জাম কুড়োতে দিঘির পাড়ে উঠি, মা তারে আজ ভুলে আছে তাই পেয়েছে ছুটি। স্ত্রী বলেছে বারে বারে, যে ক'রে হোক খেটে সংসারটা চালাবে সে, দিন যাবে তার কেটে। ঘর ছাইতে খড়ের আঁঠির জোগান দেবে সে যে, গোবর দিয়ে নিকিয়ে দেবে দেয়াল পাঁচিল মেঝে। মাঠের থেকে খড়কে কাঠি আনবে বেছে বেছে, ঝাঁটা বেঁধে কুমোরটুলির হাটে আসবে বেচে। ঢেঁকিতে ধান ভেনে দেবে বামুনদিদির ঘরে, খুদকুঁড়ো যা জুটবে তাতেই চলবে দুর্বছরে। দূর দেশেতে বসে বসে মিথ্যা অকারণে কোনোমতেই ভাব্না যেন না রয় স্বামীর মনে। সময় হল, ঐ তো এল খেয়াঘাটের মাঝি, দিন না যেতে রহিমগঞ্জে যেতেই হবে আজি। সেইখানেতে চৌকিদারি করে ওদের জ্ঞাতি, মহেশখুড়োর মেঝো জামাই, নিতাই দাসের নাতি। নতুন নতুন গাঁ পেরিয়ে অজানা এই পথে পৌঁছবে পাঁচদিনের পরে শহর কোনোমতে। সেইখানে কোন্ হালসিবাগান, ওদের গ্রামের কালো, শর্ষেতেলের দোকান সেথায় চালাচ্ছে খুব ভালো। গেলে সেথায় কালুর খবর সবাই বলে দেবে-- তারপরে সব সহজ হবে, কী হবে আর ভেবে। স্ত্রী বললে, "কালুদাকে খবরটা এই দিয়ো, ওদের গাঁয়ের বাদল পালের জাঠতুত ভাই প্রিয় বিয়ে করতে আসবে আমার ভাইঝি মল্লিকাকে উনত্রিশে বৈশাখে।"