দুর্দিন (durdin)
ওই আকাশ-'পরে আঁধার মেলে কী খেলা আজ খেলতে এলে
তোমার মনে কী আছে তা জানব না।
আমি তবুও হার মানব না, হার মানব না।
তোমার সিংহ-ভীষণ রবে,
তোমার সংহার-উৎসবে,
তোমার দুর্যোগ-দুর্দিনে--
তোমার তড়িৎশিখায় বজ্রলিখায় তোমায় লব চিনে--
কোনো শঙ্কা মনে আনব না গো আনব না।
যদি সঙ্গে চলি রঙ্গভরে কিংবা মাটির 'পরে
তবুও হার মানব না হার মানব না।
কভু যদি আমার চিত্তমাঝে ছিন্ন-তারে বেসুর বাজে
জাগে যদি জাগুক প্রাণ যন্ত্রণা--
ওগো না পাই যদি নাইবা পেলেম সান্ত্বনা।
যদি তোমার তরে আজি
ফুলে সাজিয়ে থাকি সাজি,
প্রদীপ জ্বালিয়ে থাকি ঘরে,
তবে ছিঁড়ে গেলে পুষ্প, প্রদীপ নিবে গেলে ঝড়ে
তবু ছিন্ন ফুলে করব তোমার বন্দনা।
তবু নেবা-দীপের অন্ধকারে করব আঘাত তোমার দ্বারে,
জাগে যদি জাগুক প্রাণে যন্ত্রণা।
আমি ভেবেছিলেম তোমায় লয়ে যাবে আমার জীবন ব'য়ে
দুঃখ তাপের পরশটুকু জানব না--
তাই সুখের কোণে ছিলেম পড়ে আন্মনা।
আজ হঠাৎ ভীষণ বেশে
তুমি দাঁড়াও যদি এসে,
তোমার মত্ত চরণ ভরে
আমার যত্নে-গড়া শয়নখানি ধুলায় ভেঙে পড়ে
আমি তাই ব'লে তো কপালে কর হানব না।
তুমি যেমন করে চেনাতে চাও তেমনি করে চিনিয়ে যাও
যে-দুঃখ দাও দুঃখ তারে জানব না।
তবে এসো হে মোর সুদুঃসহ ছিন্ন করে জীবন লহো
বাজিয়ে তোলো ঝঞ্ঝা-ঝড়ের ঝঞ্ঝনা,
আমায় দুঃখ হতে কোরো না আর বঞ্চনা।
আমার বুকের পাঁজর টুটে
উঠুক পূজার পদ্ম ফুটে;
যেন প্রলয়-বায়ু-বেগে
আমার মর্মকোষের গন্ধ ছুটে বিশ্ব উঠে জেগে।
ওরে আয় রে ব্যথা সকল-বাধা-ভঞ্জনা।
আজ আঁধারে ওই শূন্য ব্যেপে কণ্ঠ আমার ফিরুক কেঁপে,
জাগিয়ে তোলো ঝঞ্ঝা-ঝড়ের ঝঞ্ঝনা।