দিবস যদি সাঙ্গ হল, না যদি গাহে পাখি, ক্লান্ত বায়ু না যদি আর চলে-- এবার তবে গভীর করে ফেলো গো মোরে ঢাকি অতি নিবিড় ঘন তিমিরতলে স্বপন দিয়ে গোপনে ধীরে ধীরে যেমন করে ঢেকেছ ধরণীরে, যেমন করে ঢেকেছ তুমি মুদিয়া-পড়া আঁখি, ঢেকেছ তুমি রাতের শতদলে। পাথেয় যার ফুরায়ে আসে পথের মাঝখানে, ক্ষতির রেখা উঠেছে যার ফুটে, বসনভূষা মলিন হল ধুলায় অপমানে শকতি যার পড়িতে চায় টুটে-- ঢাকিয়া দিক তাহার ক্ষতব্যথা করুণাঘন গভীর গোপনতা, ঘুচায়ে লাজ ফুটাও তারে নবীন উষাপানে জুড়ায়ে তারে আঁধার সুধাজলে।
প্রভাতে প্রভাতে পাই আলোকের প্রসন্ন পরশে অস্তিত্বের স্বর্গীয় সম্মান, জ্যোতিঃস্রোতে মিশে যায় রক্তের প্রবাহ, নীরবে ধ্বনিত হয় দেহে মনে জ্যোতিষ্কের বাণী। রহি আমি দু চক্ষুর অঞ্জলি পাতিয়া প্রতিদিন ঊর্ধ্ব-পানে চেয়ে। এ আলো দিয়েছে মোরে জন্মের প্রথম অভ্যর্থনা, অস্তসমুদ্রের তীরে এ আলোর দ্বারে রবে মোর জীবনের শেষ নিবেদন। মনে হয়, বৃথা বাক্য বলি, সব কথা বলা হয় নাই; আকাশবাণীর সাথে প্রাণের বাণীর সুর বাঁধা হয় নাই পূর্ণ সুরে, ভাষা পাই নাই।
প্রত্যুষে দেখিনু আজ নির্মল আলোকে নিখিলের শান্তি-অভিষেক, তরুগুলি নম্রশিরে ধরণীর নমস্কার করিল প্রচার। যে শান্তি বিশ্বের মর্মে ধ্রুব প্রতিষ্ঠিত, রক্ষা করিয়াছে তারে যুগ-যুগান্তের যত আঘাতে সংঘাতে। বিক্ষুব্ধ এ মর্তভূমে নিজের জানায় আবির্ভাব দিবসের আরম্ভে ও শেষে। তারি পত্র পেয়েছ তো কবি, মাঙ্গলিক। সে যদি অমান্য করে বিদ্রূপের বাহক সাজিয়া বিকৃতির সভাসদ্রূপে চিরনৈরাশ্যের দূত, ভাঙা যন্ত্রে বেসুর ঝংকারে ব্যঙ্গ করে এ বিশ্বের শাশ্বত সত্যেরে, তবে তার কোন্ আবশ্যক। শস্যক্ষেত্রে কাঁটাগাছ এসে অপমান করে কেন মানুষের অন্নের ক্ষুধারে। রুগ্ন যদি রোগেরে চরম সত্য বলে, তাহা নিয়ে স্পর্ধা করা লজ্জা বলে জানি-- তার চেয়ে বিনা বাক্যে আত্মহত্যা ভালো। মানুষের কবিত্বই হবে শেষে কলঙ্কভাজন অসংস্কৃত যদৃচ্ছের পথে চলি। মুখশ্রীর করিবে কি প্রতিবাদ মুখোশের নির্লজ্জ নকলে।