বন্ধু, তুমি বন্ধুতার অজস্র অমৃতে পূর্ণপাত্র এনেছিলে মর্ত্য ধরণীতে। ছিল তব অবিরত হৃদয়ের সদাব্রত, বঞ্চিত কর নি কভু কারে তোমার উদার মুক্ত দ্বারে। মৈত্রী তব সমুচ্ছল ছিল গানে গানে অমরাবতীর সেই সুধাঝরা দানে। সুরে-ভরা সঙ্গ তব বারে বারে নব নব মাধুরীর আতিথ্য বিলাল, রসতৈলে জ্বেলেছিল আলো। দিন পরে গেছে দিন, মাস পরে মাস, তোমা হতে দূরে ছিল আমার আবাস। "হবে হবে, দেখা হবে' -- এ কথা নীরব রবে ধ্বনিত হয়েছে ক্ষণে ক্ষণে অকথিত তব আমন্ত্রণে। আমারো যাবার কাল এল শেষে আজি, "হবে হবে, দেখা হবে' মনে ওঠে বাজি। সেখানেও হাসিমুখে বাহু মেলি লবে বুকে নবজ্যোতিদীপ্ত অনুরাগে, সেই ছবি মনে-মনে জাগে। এখানে গোপন চোর ধরার ধুলায় করে সে বিষম চুরি যখন ভুলায়। যদি ব্যথাহীন কাল বিনাশের ফেলে জাল, বিরহের স্মৃতি লয় হরি, সব চেয়ে সে ক্ষতিরে ডরি। তাই বলি, দীর্ঘ আয়ু দীর্ঘ অভিশাপ, বিচ্ছেদের তাপ নাশে সেই বড়ো তাপ। অনেক হারাতে হয়, তারেও করি নে ভয়; যতদিন ব্যথা রহে বাকি, তার বেশি যেন নাহি থাকি
একদা এ ভারতের কোন্ বনতলে কে তুমি মহান্ প্রাণ, কী আনন্দবলে উচ্চারি উঠিলে উচ্চে-- "শোনো বিশ্বজন, শোনো অমৃতের পুত্র যত দেবগণ দিব্যধামবাসী, আমি জেনেছি তাঁহারে, মহান্ত পুরুষ যিনি আঁধারের পারে জ্যোতির্ময়। তাঁরে জেনে, তাঁর পানে চাহি মৃত্যুরে লঙ্ঘিতে পারো, অন্য পথ নাহি।' আরবার এ ভারতে কে দিবে গো আনি সে মহা আনন্দমন্ত্র, সে উদাত্তবাণী সঞ্জীবনী, স্বর্গে মর্তে সেই মৃত্যুঞ্জয় পরম ঘোষণা, সেই একান্ত নির্ভয় অনন্ত অমৃতবার্তা। রে মৃত ভারত, শুধু সেই এক আছে, নাহি অন্য পথ।
শুধু তোমার বাণী নয় গো হে বন্ধু, হে প্রিয়, মাঝে মাঝে প্রাণে তোমার পরশখানি দিয়ো। সারা পথের ক্লান্তি আমার সারা দিনের তৃষা কেমন করে মেটাব যে খুঁজে না পাই দিশা। এ আঁধার যে পূর্ণ তোমায় সেই কথা বলিয়ো। মাঝে মাঝে প্রাণে তোমার পরশখানি দিয়ো। হৃদয় আমার চায় যে দিতে, কেবল নিতে নয়, ব'য়ে ব'য়ে বেড়ায় সে তার যা-কিছু সঞ্চয়। হাতখানি ওই বাড়িয়ে আনো, দাও গো আমার হাতে, ধরব তারে, ভরব তারে, রাখব তারে সাথে-- একলা পথের চলা আমার করব রমণীয়। মাঝে মাঝে প্রাণে তোমার পরশখানি দিয়ো।