কোন্ বাণী মোর জাগল, যাহা রাখবে স্মরণে-- পলে-পলে দলিত সে কালের চরণে। যায় সে কেবল ভেঙে চুরে, ছড়িয়ে পড়ে কাছে দূরে-- জীবনবাণীর অখণ্ড রূপ মিলবে মরণে।
ক্ষণে ক্ষণে পাগল হাওয়ায় ঘূর্ণিধূলিতে প্রাণের দোলে এলোমেলো রয় সে দুলিতে। বৈতরণীর অগাধ নদী পেরিয়ে আবার ফেরে যদি উল্টো স্রোতের সে দান, ডালায় পারবে তুলিতে।
কোন্ বাণী মোর জাগল, যাহা রাখবে স্মরণে, টিঁকবে যাহা নিমেষগুলির পূরণ-হরণে। তারে নিয়ে সারা বেলা চলেছে হার-জিতের খেলা, খেলার শেষে বাঁচল যা তাই বাঁচবে মরণে।
এই দেহটির ভেলা নিয়ে দিয়েছি সাঁতার গো, এই দু-দিনের নদী হব পার গো। তার পরে যেই ফুরিয়ে যাবে বেলা, ভাসিয়ে দেব ভেলা, তার পরে তার খবর কী যে ধারি নে তার ধার গো, তার পরে সে কেমন আলো, কেমন অন্ধকার গো। আমি যে অজানার যাত্রী সেই আমার আনন্দ। সেই তো বাধায় সেই তো মেটায় দ্বন্দ্ব। জানা আমায় যেমনি আপন ফাঁদে শক্ত করে বাঁধে অজানা সে সামনে এসে হঠাৎ লাগায় ধন্দ, এক-নিমেষে যায় গো ফেঁসে অমনি সকল বন্ধ। অজানা মোর হালের মাঝি, অজানাই তো মুক্তি তার সনে মোর চিরকালের চুক্তি। ভয় দেখিয়ে ভাঙায় আমার ভয় প্রেমিক সে নির্দয়। মানে না সে বুদ্ধিসুদ্ধি বৃদ্ধজনার যুক্তি, মুক্তারে সে মুক্ত করে ভেঙে তাহার শুক্তি। ভাবিস বসে যেদিন গেছে সেদিন কি আর ফিরবে। সেই কূলে কি এই তরী আর ভিড়বে। ফিরবে না রে, ফিরবে না আর, ফিরবে না, সেই কূলে আর ভিড়বে না। সামনেকে তুই ভয় করেছিস, পিছন তোরে ঘিরবে এমনি কি তুই ভাগ্যহারা? ছিঁড়বে বাঁধন ছিঁড়বে। ঘন্টা যে ওই বাজল কবি, হোক রে সভাভঙ্গ, জোয়ার-জলে উঠেছে তরঙ্গ। এখনো সে দেখায় নি তার মুখ, তাই তো দোলে বুক। কোন্ রূপে যে সেই অজানার কোথায় পাব সঙ্গ, কোন্ সাগরের কোন্ কূলে গো কোন্ নবীনের রঙ্গ।