বাতাসে অশথপাতা পড়িছে খসিয়া, বাতাসেতে দেবদারু উঠিছে শ্বসিয়া। দিবসের পরে বসি রাত্রি মুদে আঁখি, নীড়েতে বসিয়া যেন পাহাড়ের পাখি। শ্রান্ত পদে ভ্রমি আমি নগরে নগরে বিজন অরণ্য দিয়া পর্বতে সাগরে। উড়িয়া গিয়াছে সেই পাখিটি আমার, খুঁজিয়া বেড়াই তারে সকল সংসার। দিন রাত্রি চলিয়াছি, শুধু চলিয়াছি-- ভুলে যেতে ভুলিয়া গিয়াছি। আমি যত চলিতেছি রোদ্র বৃষ্টি বায়ে হৃদয় আমার তত পড়িছে পিছায়ে। হৃদয় রে, ছাড়াছাড়ি হল তোর সাথে-- এক ভাব রহিল না তোমাতে আমাতে। নীড় বেঁধেছিনু যেথা যা রে সেইখানে, একবার ডাক্ গিয়ে আকুল পরানে। কে জানে, হতেও পারে, সে নীড়ের কাছে হয়তো পাখিটি মোর লুকাইয়ে আছে। কেঁদে কেঁদে বৃষ্টিজলে আমি ভ্রমিতেছি-- ভুলে যেতে ভুলিয়ে গিয়েছি। দেশের সবাই জানে কাহিনী আমার। বলে তারা, "এত প্রেম আছে বা কাহার!' পাখি সে পলায়ে গেছে কথাটি না ব'লে, এমন তো সব পাখি উড়ে যায় চলে। চিরদিন তারা কভু থাকে না সমান এমন তো কত শত রয়েছে প্রমাণ। ডাকে আর গায় আর উড়ে যায় পরে, এ ছাড়া বলো তো তারা আর কী বা করে? পাখি গেল যার, তার এক দুঃখ আছে-- ভুলে যেতে ভুলে সে গিয়াছে! সারা দিন দেখি আমি উড়িতেছে কাক, সারা রাত শুনি আমি পেচকের ডাক। চন্দ্র উঠে অস্ত যায় পশ্চিমসাগরে, পূরবে তপন উঠে জলদের স্তরে। পাতা ঝরে, শুভ্র রেণু উড়ে চারি ধার-- বসন্তমুকুল এ কি? অথবা তুষার? হৃদয়, বিদায় লই এবে তোর কাছে-- বিলম্ব হইয়া গেল, সময় কি আছে? শান্ত হ'রে, একদিন সুখী হবি তবু-- মরণ সে ভুলে যেতে ভোলে না তো কভু!
একদা এ ভারতের কোন্ বনতলে কে তুমি মহান্ প্রাণ, কী আনন্দবলে উচ্চারি উঠিলে উচ্চে-- "শোনো বিশ্বজন, শোনো অমৃতের পুত্র যত দেবগণ দিব্যধামবাসী, আমি জেনেছি তাঁহারে, মহান্ত পুরুষ যিনি আঁধারের পারে জ্যোতির্ময়। তাঁরে জেনে, তাঁর পানে চাহি মৃত্যুরে লঙ্ঘিতে পারো, অন্য পথ নাহি।' আরবার এ ভারতে কে দিবে গো আনি সে মহা আনন্দমন্ত্র, সে উদাত্তবাণী সঞ্জীবনী, স্বর্গে মর্তে সেই মৃত্যুঞ্জয় পরম ঘোষণা, সেই একান্ত নির্ভয় অনন্ত অমৃতবার্তা। রে মৃত ভারত, শুধু সেই এক আছে, নাহি অন্য পথ।