১ স্তব্ধরাতে একদিন নিদ্রাহীন আবেগের আন্দোলনে তুমি বলেছিলে নতশিরে অশ্রুনীরে ধীরে মোর করতল চুমি-- "তুমি দূরে যাও যদি, নিরবধি শূন্যতার সীমাশূন্য ভারে সমস্ত ভুবন মম মরুসম রুক্ষ হয়ে যাবে একেবারে। আকাশবিস্তীর্ণ ক্লান্তি সব শান্তি চিত্ত হতে করিবে হরণ-- নিরানন্দ নিরালোক স্তব্ধ শোক মরণের অধিক মরণ।' ২ শুনে, তোর মুখখানি বক্ষে আনি বলেছিনু তোরে কানে কানে-- "তুই যদি যাস দূরে তোরি সুরে বেদনা-বিদ্যুৎ গানে গানে ঝলিয়া উঠিবে নিত্য, মোর চিত্ত সচকিবে আলোকে আলোকে। বিরহ বিচিত্র খেলা সারা বেলা পাতিবে আমার বক্ষে চোখে। তুমি খুঁজে পাবে প্রিয়ে, দূরে গিয়ে মর্মের নিকটতম দ্বার-- আমার ভুবনে তবে পূর্ণ হবে তোমার চরম অধিকার।' ৩ দুজনের সেই বাণী কানাকানি, শুনেছিল সপ্তর্ষির তারা; রজনীগন্ধার বনে ক্ষণে ক্ষণে বহে গেল সে বাণীর ধারা। তার পরে চুপে চুপে মৃত্যু রূপে মধ্যে এল বিচ্ছেদ অপার। দেখাশুনা হল সারা, স্পর্শহারা সে অনন্তে বাক্য নাহি আর। তবু শূন্য শূন্য নয়, ব্যথাময় অগ্নিবাষ্পে পূর্ণ সে গগন। একা-একা সে অগ্নিতে দীপ্তগীতে সৃষ্টি করি স্বপ্নের ভুবন।
ওকালতি ব্যবসায়ে ক্রমশই তার জমেছিল একদিন মস্ত পসার। ভাগ্যটা ঘাটে ঘাটে কী করিয়া শেষে একদা জজের পদে ঠেকেছিল এসে। সদাই বাড়িতে তার মহা ধুমধাম, মুখে মুখে চারি দিকে রটে গেছে নাম। আজ সে তো কালীনাথ, আগে ছিল কেলে-- কাউকে ফাঁসিতে দেয় কাউকে বা জেলে। ক্লাসে ছিল একদিন একেবারে নিচু, মাস্টার বলতেন হবে নাকো কিছু। সব চেয়ে বোকারাম, সব চেয়ে হাঁদা-- দুষ্টুমি বুদ্ধিটা ছিল তার সাধা! ক্লাসে ছিল বিখ্যাত তারি দৃষ্টান্ত, সেই ইতিহাস তার সকলেই জানত। একদিন দেখা গেল ছুটির বিকালে ফলে ভরা আম গাছে একা বসি ডালে কামড় লাগাতেছিল পাকা পাকা আমে-- ডাক পাড়ে মাস্টার, কিছুতে না নামে। আম পেড়ে খেতে তোরে করেছি বারণ, সে কথা শুনিস নে যে বল্ কী কারণ। কালু বলে, পেড়ে আমি খাই নে তো তাই, ডালে ব'সে ব'সে ফল ক'ষে কামড়াই। মাস্টার বলে তারে, আয় তুই নাবি-- যত ফল খেয়েছিস তত চড় খাবি! কালু বলে, পালিয়াছি গুরুর আদেশ এই শাস্তিই যদি হয় তার শেষ, তা হলে তো ভালো নয় পড়াশুনা করা-- গুরুর বচন শুনে চড় খেয়ে মরা।