© Kriya Unlimited, 2010 - 2024
মণীন্দ্র ছেলেটির বয়স হবে চোদ্দ। তার বুদ্ধি খুব তীক্ষ্ণ কিন্তু পড়াশুনায় বিশেষ মনোযোগ নেই। তবু সে স্বভাবতই মেধাবী বলে বৎসরে বৎসরে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু অধ্যাপকেরা তার কাছে যতটা প্রত্যাশা করেন সে-অনুরূপ ফল হয় না। মণীন্দ্রের পিতা দিব্যেন্দু ছিলেন এই বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ। কর্তব্যে ছেলের শৈথিল্য দেখে তাঁর মন উদ্বিগ্ন ছিল।অক্ষয় মণীন্দ্রের সঙ্গে এক ক্লাসে পড়ে। সে বড়ো দরিদ্র। ছাত্রবৃত্তির 'পরেই তার নির্ভর। মা বিধবা। বহু কষ্টে অক্ষয়কে মানুষ করেছেন। তার পিতা প্রিয়নাথ যখন জীবিত ছিলেন তখন যথেষ্ট উপার্জন করতেন। লোকের কাছে তাঁর সম্মানও ছিল খুব বেশি। কিন্তু ব্যয় করতেও তিনি মুক্ত হস্ত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে দেখা গেল যত তাঁর ঋণ, সম্পত্তি তার অর্ধেকও নয়। অক্ষয়ের মা সাবিত্রী তাঁর যত কিছু অলংকার, গাড়ি ঘোড়া ...
আমি রাজপথ। অহল্যা যেমন মুনির শাপে পাষাণ হইয়া পড়িয়া ছিল, আমিও যেন তেমনি কাহার শাপে চিরনিদ্রিত সুদীর্ঘ অজগর সর্পের ন্যায় অরণ্যপর্বতের মধ্য দিয়া, বৃক্ষশ্রেণীর ছায়া দিয়া, সুবিস্তীর্ণ প্রান্তরের বক্ষের উপর দিয়া দেশদেশান্তর বেষ্টন করিয়া বহুদিন ধরিয়া জড়শয়নে শয়ান রহিয়াছি। অসীম ধৈর্যের সহিত ধুলায় লুটাইয়া শাপান্তকালের জন্য প্রতীক্ষা করিয়া আছি। আমি চিরদিন স্থির অবিচল, চিরদিন একই ভাবে শুইয়া আছি, কিন্তু তবুও আমার এক মুহূর্তের জন্যও বিশ্রাম নাই। এতটুকু বিশ্রাম নাই যে, আমার এই কঠিন শুষ্ক শয্যার উপরে একটিমাত্র কচি স্নিগ্ধ শ্যামল ঘাস উঠাইতে পারি; এতটুকু সময় নাই যে, আমার শিয়রের কাছে অতি ক্ষুদ্র একটি নীলবর্ণের বনফুল ফুটাইতে পারি। কথা কহিতে পারি না, অথচ অন্ধভাবে সকলই অনুভব করিতেছি। রাত্রিদিন পদশব্দ; কেবলই পদশব্দ। ...
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
সাহানা বাজপেয়ী
পাগল বসন্তদিন কতবার অতিথির বেশেতোমার আমার দ্বারে বীণা হাতে এসেছিল হেসেলয়ে তার কত গীত, কত মন্ত্র মন ভুলাবার,জাদু করিবার কত পুষ্পপত্র আয়োজন-ভার।কুহুতানে হেঁকে গেছে, খোলো ওগো, খোলো দ্বার খোলো।কাজকর্ম ভোলো আজি, ভোলো বিশ্ব, আপনারে ভোলো।এসে এসে কত দিন চলে গেছে দ্বারে দিয়ে নাড়া-আমি ছিনু কোন্ কাজে, তুমি তারে দাও নাই সাড়া।আজ তুমি চলে গেছ, সে এল দক্ষিণবায়ু বাহি-আজ তারে ক্ষণকাল ভুলে থাকি হেন সাধ্য নাহি।আনিছে সে দৃষ্টি তব, তোমার প্রকাশহীন বাণী,মর্মরি তুলিছে কুঞ্জে তোমার আকুল চিত্তখানি।মিলনের দিনে যারে কতবার দিয়েছিনু ফাঁকিতোমার বিচ্ছেদ তারে শূন্যঘরে আনে ডাকি ডাকি।
চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়
দেবব্রত বিশ্বাস
মনে পড়ছে সেই দুপুরবেলাটি। ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টিধারা ক্লান্ত হয়ে আসে, আবার দমকা হাওয়া তাকে মাতিয়ে তোলে।ঘরে অন্ধকার, কাজে মন যায় না। যন্ত্রটা হাতে নিয়ে বর্ষার গানে মল্লারের সুর লাগালেম।পাশের ঘর থেকে একবার সে কেবল দুয়ার পর্যন্ত এল। আবার ফিরে গেল। আবার একবার বাইরে এসে দাঁড়াল। তার পরে ধীরে ধীরে ভিতরে এসে বসল। হাতে তার সেলাইয়ের কাজ ছিল, মাথা নিচু করে সেলাই করতে লাগল। তার পরে সেলাই বন্ধ ক'রে জানলার বাইরে ঝাপসা গাছগুলোর দিকে চেয়ে রইল।বৃষ্টি ধরে এল, আমার গান থামল। সে উঠে চুল বাঁধতে গেল।এইটুকু ছাড়া আর কিছুই না। বৃষ্টিতে গানেতে অকাজে আঁধারে জড়ানো কেবল সেই একটি দুপুরবেলা।ইতিহাসে রাজাবাদশার কথা, যুদ্ধবিগ্রহের কাহিনী, সস্তা হয়ে ছড়াছড়ি যায়। কিন্তু, একটি দুপুরবেলার ছোটো একটু কথার টুকরো দুর্লভ রত্নের মতো কালের কৌটোর ...
ঝিঁকড়কোটার কৃষ্ণগোপাল সরকার জ্যেষ্ঠপুত্রের প্রতি জমিদারি এবং সংসারের ভার দিয়া কাশী চলিয়া গেলেন। দেশের যত অনাথ দরিদ্র লোক তাঁহার জন্য হাহাকার করিয়া কাঁদিতে লাগিল। এমন বদান্যতা, এমন ধর্মনিষ্ঠতা কলিযুগে দেখা যায় না, এই কথা সকলেই বলিতে লাগিল।তাঁহার পুত্র বিপিনবিহারী আজকালকার একজন সুশিক্ষিত বি-এ। দাড়ি রাখেন, চশমা পরেন, কাহারও সহিত বড়ো একটা মিশেন না। অতিশয় সচ্চরিত্র-- এমন কি, তামাকটি পর্যন্ত খান না, তাস পর্যন্ত খেলেন না। অত্যন্ত ভালোমানুষের মতো চেহারা, কিন্তু লোকটা ভারি কড়াক্কড়।তাঁহার প্রজারা শীঘ্রই তাহা অনুভব করিতে পারিল। বুড়াকর্তার কাছে রক্ষা ছিল কিন্তু ইঁহার কাছে কোনো ছুতায় দেনা খাজনার এক পয়সা রেয়াত পাইবার প্রত্যাশা নাই। নির্দিষ্ট সময়েরও একদিন এদিক-ওদিক হইতে পায় না।বিপিনবিহারী হাতে কাজ লইয়াই দেখিলেন ...
সম্পর্ক মিলাইয়া দেখিতে গেলে বনমালী এবং হিমাংশুমালী উভয়ে মামাতো পিসতুতো ভাই; সেও অনেক হিসাব করিয়া দেখিলে তবে মেলে। কিন্তু ইহাদের দুই পরিবার বহুকাল হইতে প্রতিবেশী, মাঝে কেবল একটা বাগানের ব্যবধান, এইজন্য ইহাদের সম্পর্ক নিতান্ত নিকট না হইলেও ঘনিষ্ঠতার অভাব নাই।বনমালী হিমাংশুর চেয়ে অনেক বড়ো। হিমাংশুর যখন দন্ত এবং বাক্যস্ফূর্তি হয় নাই, তখন বনমালী তাহাকে কোলে করিয়া এই বাগানে সকালে সন্ধ্যায় হাওয়া খাওয়াইয়াছে, খেলা করিয়াছে, কান্না থামাইয়াছে, ঘুম পাড়াইয়াছে এবং শিশুর মনোরঞ্জন করিবার জন্য পরিণতবুদ্ধি বয়স্ক লোকদিগকে সবেগে শিরশ্চালন, তারস্বরে প্রলাপভাষণ প্রভৃতি যে-সকল বয়সানুচিত চাপল্য এবং উৎকট উদ্যম প্রকাশ করিতে হয়, বনমালী তাহাও করিতে ত্রুটি করে নাই।বনমালী লেখাপড়া বড়ো-একটা কিছু করে নাই। তাহার বাগানের শখ ছিল ...
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
জয়তী চক্রবর্তী
১প্রহরিষ্যন্ প্রিয়ং ব্রূয়াৎ প্রহৃত্যাপি প্রিয়োত্তরম্॥অপি চাস্য শিরশ্ছিত্ত্বা রুদ্যাৎ শোচেৎ তথাপি চ॥ [১] --মহাভারত, আদিপর্ব ১৪০| ৫৬ ১মারিতে মারিতে কহিবে মিষ্ট, মারিয়া কহিবে আরো।মাথাটা কাটিয়া কাঁদিয়া উঠিবে যতটা উচ্চে পারো॥ ২সুখং বা যদি বা দুঃখং প্রিয়ং বা যদি বাপ্রিয়ম্।প্রাপ্তং প্রাপ্তমুপাসীত
ইমন চক্রবর্তী
সোমলতা আচার্য্য