© Kriya Unlimited, 2010 - 2024
চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়
আদি অন্ত হারিয়ে ফেলেসাদা কালো আসন মেলে পড়ে আছে আকাশটা খোশ-খেয়ালি,আমরা যে সব রাশি রাশিমেঘের পুঞ্জ ভেসে আসি, আমার তারি খেয়াল, তারি হেঁয়ালি।মোদের কিছু ঠিক-ঠিকানা নাই,আমরা আসি, আমরা চলে যাই।ওই-যে সকল জ্যোতির মালাগ্রহতারা রবির ডালা জুড়ে আছে নিত্যকালের পসরা,ওদের হিসেব পাকা খাতায়আলোর লেখা কালো পাতায়, মোদের তরে আছে মাত্র খসড়া--রঙ-বেরঙের কলম দিয়ে এঁকে
সোমলতা আচার্য্য
গ্রামের মধ্যে অনুপকুমারের ন্যায় ধনবান আর কেহই ছিল না। অতিথিশালানির্মাণ, দেবালয়প্রতিষ্ঠা, পুষ্করিণীখনন প্রভৃতি নানা সৎকর্মে তিনি ধনব্যয় করিতেন। তাঁহার সিন্ধুক-পূর্ণ টাকা ছিল, দেশবিখ্যাত যশ ছিল ও রূপবতী কন্যা ছিল। সমস্ত যৌবনকাল ধন উপার্জন করিয়া অনুপ বৃদ্ধ বয়সে বিশ্রাম করিতেছিলেন। এখন কেবল তাঁহার একমাত্র ভাবনা ছিল যে, কন্যার বিবাহ দিবেন কোথায়। সৎপাত্র পান নাই ও বৃদ্ধ বয়সে একমাত্র আশ্রয়স্থল কন্যাকে পরগৃহে পাঠাইতে ইচ্ছা নাই--তজ্জন্যও আজ কাল করিয়া আর তাঁহার দুহিতার বিবাহ হইতেছে না।সঙ্গিনী-অভাবে করুণার কিছুমাত্র কষ্ট হইত না। সে এমন কাল্পনিক ছিল, কল্পনার স্বপ্নে সে সমস্ত দিন-রাত্রি এমন সুখে কাটাইয়া দিত যে, মুহূর্তমাত্রও তাহাকে কষ্ট অনুভব করিতে হয় নাই। তাহার একটি পাখি ছিল, সেই পাখিটি হাতে করিয়া অন্তঃপুরের ...
ঋতু গুহ
ভালো করে যুঝিলি নে, হল তোরি পরাজয়-- কী আর ভাবিতেছিস, ম্রিয়মাণ, হা হৃদয়! কাঁদ্ তুই, কাঁদ্ ,হেথা আয়, একা বসে বিজনে বিদেশে। জানিতাম জানিতাম হা রে এমনি ঘটিবে অবশেষে। সংসারে যাহারা ছিল সকলেই জয়ী হল, তোরি শুধু হল পরাজয়-- প্রতি রণে প্রতি পদে একে একে ছেড়ে দিলি জীবনের রাজ্য সমুদয়। যতবার প্রতিজ্ঞা করিলি ততবার পড়িল টুটিয়া, ছিন্ন আশা বাঁধিয়া তুলিলি বার বার পড়িল লুটিয়া । "সান্ত্বনা সান্ত্বনা" করি ফিরি
পিঠের দিকে বালিশগুলো উঁচু-করা। নীরজা আধ-শোওয়া পড়ে আছে রোগ শয্যায়। পায়ের উপরে সাদা রেশমের চাদর টানা, যেন তৃতীয়ার ফিকে জ্যোৎস্না হালকা মেঘের তলায়। ফ্যাকাশে তার শাঁখের মতো রঙ, ঢিলে হয়ে পড়েছে চুড়ি, রোগা হাতে নীল শিরার রেখা, ঘনপক্ষ্ণ চোখের পল্লবে লেগেছে রোগের কালিমা।মেঝে সাদা মারবেলে বাঁধানো, দেয়ালে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ছবি, ঘরে পালঙ্ক, একটি টিপাই, দুটি বেতের মোড়ার আর এক কোণে কাপড় ঝোলাবার আলনা ছাড়া অন্য কোনো আসবার নেই; এক কোণে পিতলের কলসীতে রজনীগন্ধার গুচ্ছ, তারই মৃদু গন্ধ বাঁধা পড়েছে ঘরের বন্ধ হাওয়ায়।পুব দিকে জানলা খোলা। দেখা যায় নীচের বাগানে অর্কিডের ঘর, ছিটে বেড়ায় তৈরি, বেড়ার গায়ে গায়ে অপরাজিতার লতা। অদূরে ঝিলের ধারে পাম্প চলছে, জল কুলকুল করে বয়ে যায় নালায় নালায়, ফুল গাছের কেয়ারির ধারে ধারে। গন্ধনিবিড় ...
মনোময় ভট্টাচার্য্য
এই গুণী কেবল পুতুল তৈরি করত; সে পুতুল রাজবাড়ির মেয়েদের খেলার জন্যে।বছরে বছরে রাজবাড়ির আঙিনায় পুতুলের মেলা বসে। সেই মেলায় সকল কারিগরই এই গুণীকে প্রধান মান দিয়ে এসেছে।যখন তার বয়স হল প্রায় চার কুড়ি, এমনসময় মেলায় এক নতুন কারিগর এল। তার নাম কিষণলাল, বয়স তার নবীন, নতুন তার কায়দা।যে পুতুল সে গড়ে তার কিছু গড়ে কিছু গড়ে না, কিছু রঙ দেয় কিছু বাকি রাখে। মনে হয়, পুতুলগুলো যেন ফুরোয় নি, যেন কোনোকালে ফুরিয়ে যাবে না।নবীনের দল বললে, 'লোকটা সাহস দেখিয়েছে।'প্রবীণের দল বললে, 'একে বলে সাহস? এ তো স্পর্ধা।'কিন্তু, নতুন কালের নতুন দাবি। এ কালের রাজকন্যারা বলে, 'আমাদের এই পুতুল চাই।'সাবেক কালের অনুচরেরা বলে, 'আরে ছিঃ।'শুনে তাদের জেদ বেড়ে যায়।বুড়োর দোকানে এবার ভিড় নেই। তার ঝাঁকাভরা পুতুল যেন খেয়ার অপেক্ষায় ঘাটের লোকের ...
আয়োজন চলেইছে। তার মাঝে একটুও ফাঁক পাওয়া যায় না যে ভেবে দেখি, কিসের আয়োজন।তবুও কাজের ভিড়ের মধ্যে মনকে এক-একবার ঠেলা দিয়ে জিজ্ঞাসা করি, 'কেউ আসবে বুঝি?'মন বলে, 'রোসো। আমাকে জায়গা দখল করতে হবে, জিনিসপত্র জোগাতে হবে, ঘরবাড়ি গড়তে হবে, এখন আমাকে বাজে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কোরো না।'চুপচাপ করে আবার খাটতে বসি। ভাবি, জায়গা-দখল সারা হবে, জিনিসপত্র-সংগ্রহ শেষ হবে, ঘরবাড়ি-গড়া বাকি থাকবে না, তখন শেষ জবাব মিলবে।জায়গা বেড়ে চলছে, জিনিসপত্র কম হল না, ইমারতের সাতটা মহল সারা হল। আমি বললেম, 'এইবার আমার কথার একটা জবাব দাও।'মন বলে, 'আরে রোসো, আমার সময় নেই।'আমি বললেম, 'কেন, আরও জায়গা চাই? আরও ঘর? আরও সরঞ্জাম?'মন বললে, 'চাই বই কি।'আমি বললেম,'এখনও যথেষ্ট হয় নি?'মন বললে, 'এতটুকুতে ধরবে কেন।'আমি জিজ্ঞাসা করলেম, 'কী ধরবে। কাক...
'মাসি !''ঘুমোও,যতীন,রাত হল যে ।''হোক-না রাত,আমার দিন তো বেশি নেই । আমি বলছিলুম,মণিকে তার বাপের বাড়ি-- ভূলে যাচ্ছি,ওর বাপ এখন কোথায়--''সীতারামপুরে ।''হাঁ সীতারামপুরে । সেইখানে মণিকে পাঠিয়ে দাও,আরো কতদিন ও রোগীর সেবা করবে । ওর শরীর তো তেমন শক্ত নয় ।''শোনো একবার ! এই অবস্থায় তোমাকে ফেলে বউ বাপের বাড়ি যেতে চাইবেই বা কেন ।''ডাক্তারেরা কী বলেছে সে কথা কি সে--''তা সে নাই জানল-- চোখে তো দেখতে পাচ্ছে । সেদিন বাপের বাড়ি যাবার কথা যেমন একটু ইশারায় বলা অমনি বউ কেঁদে অস্থির ।'মাসির এই কথাটার মধ্যে সত্যের কিছু অপলাপ ছিল, সে কথা বলা আবশ্যক । মণির সঙ্গে সেদিন তাঁর এই প্রসঙ্গে যে আলাপ হইয়াছিল সেটা নিম্নলিখিত-মতো ।'বউ,তোমার বাপের বাড়ি থেকে কিছু খবর এসেছে বুঝি ? তোমার জাঠতুতো ভাই অনাথকে দেখলুম যেন । 'হাঁ, মা ব'লে ...
নগাধিরাজের দূর নেবু-নিকুঞ্জেররসপাত্রগুলিআনিল এ শয্যাতলেজনহীন প্রভাতের রবির মিত্রতা,অজানা নির্ঝরিণীর বিচ্ছুরিত আলোকচ্ছটারহিরন্ময় লিপি,সুনিবিড় অরণ্যবীথিরনিঃশব্দ মর্মরে বিজড়িতস্নিগ্ধ হৃদয়ের দৌত্যখানি।রোগপঙ্গু লেখনীর বিরল ভাষারইঙ্গিতে পাঠায় কবি আর্শীবাদ তার।
দেবব্রত বিশ্বাস
সাহানা বাজপেয়ী
শ্রীকান্ত আচার্য্য