© Kriya Unlimited, 2010 - 2024
কুসমি বললে, আচ্ছা দাদামশায়, শুনেছি এক সময়ে তুমি বড়ো বড়ো কথা নিয়ে খুব বড়ো বড়ো বই লিখেছিলে।জীবনে অনেক দুষ্কর্ম করেছি, তা কবুল করতে হবে। ভারতচন্দ্র বলেছেন, সে কহে বিস্তর মিছা যে কহে বিস্তর।আমার ভালো লাগে না মনে করতে যে, আমি তোমার সময় নষ্ট করে দিচ্ছি।ভাগ্যবান মানুষেরই যোগ্য লোক জোটে সময় নষ্ট ক'রে দেবার।আমি বুঝি তোমার সেই যোগ্য লোক?আমার কপালক্রমে পেয়েছি, খুঁজলে পাওয়া যায় না।তোমাকে খুব ছেলেমানুষি করাই?দেখো, অনেকদিন ধ'রে আমি গম্ভীর পোশাকি সাজ প'রে এতদিন কাটিয়েছি, সেলাম পেয়েছি অনেক। এখন তোমার দরবারে এসে ছেলেমানুষির ঢিলে কাপড় প'রে হাঁপ ছেড়েছি। সময় নষ্ট করার কথা বলছ, দিদি-- এক সময় তার হুকুম ছিল না। তখন ছিলুম সময়ের গোলাম। আজ আমি গোলামিতে ইস্তফা দিয়েছি। শেষের ক'টা দিন আরামে কাটবে। ছেলেমানুষির দোসর পেয়ে লম্বা ...
রাজর্ষি সম্বন্ধে কিছু বলবার জন্যে অনুরোধ পেয়েছি। বলবার বিশেষ কিছু নেই। এর প্রধান বক্তব্য এই যে, এ আমার স্বপ্নলব্ধ উপন্যাস।বালক পত্রের সম্পাদিকা আমাকে ঐ মাসিকের পাতে নিয়মিত পরিবেশনের কাজে লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তার ফল হল এই যে, প্রায় একমাত্র আমিই হলুম তার ভোজের জোগানদার। একটু সময় পেলেই মনটা "কী লিখি' "কী লিখি' করতে থাকে।রাজনারায়ণবাবু ছিলেন দেওঘরে। তাঁকে দেখতে যাব বলে বেরনো গেল। রাত্রে গাড়ির আলোটা বিশ্রামের ব্যাঘাত করবে বলে তার নিচেকার আবরণটা টেনে দিলুম। অ্যাংলোইণ্ডিয়ান সহযাত্রীর মন তাতে প্রসন্ন হল না,ঢাকা খুলে দিলেন। জাগা অনিবার্য ভেবে একটা গল্পের প্লট মনে আনতে চেষ্টা করলুম। ঘুম এসে গেল। স্বপ্নে দেখলুম-- একটা পাথরের মন্দির। ছোটো মেয়েকে নিয়ে বাপ এসেছেন পুজো দিতে। সাদাপাথরের সিঁড়ির উপর দিয়ে বলির রক্ত ...
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত
যাহা খুশি তাই করে বিশ্বশিল্পী সকালে বিকালে রঙের খেয়ালে। সেই নেশা লেখনীতে এসে মনেরে উদাসী করে রঙিনের দেশে।
দূর সমুদ্রের মধ্যে একটা দ্বীপ। সেখানে কেবল তাসের সাহেব, তাসের বিবি, টেক্কা এবং গোলামের বাস। দুরি তিরি হইতে নহলা-দহলা পর্যন্ত আরো অনেক-ঘর গৃহস্থ আছে কিন্তু তাহারা উচ্চজাতীয় নহে।টেক্কা সাহেব গোলাম এই তিনটেই প্রধান বর্ণ, নহলা-দহলারা অন্ত্যজ-- তাহাদের সহিত এক পঙ্ক্তিতে বসিবার যোগ্য নহে।কিন্তু চমৎকার শৃঙ্খলা। কাহার কত মূল্য মর্যাদা তাহা বহুকাল হইতে স্থির হইয়া গেছে, তাহার রেখামাত্র ইতস্তত হইবার জো নাই। সকলেই যথানির্দিষ্টমতে আপন আপন কাজ করিয়া যায়। বংশাবলিক্রমে কেবল পূর্ববর্তীদিগের উপর দাগা বুলাইয়া চলা।সে যে কী কাজ তাহা বিদেশীর পক্ষে বোঝা শক্ত। হঠাৎ খেলা বলিয়া ভ্রম হয়। কেবল নিয়মে চলাফেরা, নিয়মে যাওয়া-আসা, নিয়মে ওঠাপড়া। অদৃশ্য হস্তে তাহাদিগকে চালনা করিতেছে এবং তাহারা চলিতেছে।তাহাদের মুখে কোনো ভাবের পরিবর্তন ...
অর্ঘ্য সেন
দেবব্রত বিশ্বাস
সুমন চট্টোপাধ্যায়
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
ইন্দ্রাণী সেন
বৃন্দাবন কুণ্ড মহা ক্রুদ্ধ হইয়া আসিয়া তাহার বাপকে কহিল, "আমি এখনই চলিলাম।"বাপ যজ্ঞনাথ কুণ্ড কহিলেন, "বেটা অকৃতজ্ঞ, ছেলেবেলা হইতে তোকে খাওয়াইতে পরাইতে যে ব্যয় হইয়াছে তাহার পরিশোধ করিবার নাম নাই, আবার তেজ দেখোনা।"যজ্ঞনাথের ঘরে যেরূপ অশনবসনের প্রথা তাহাতে খুব যে বেশি ব্যয় হইয়াছে তাহা নহে। প্রাচীন কালের ঋষিরা আহার এবং পরিচ্ছদ সম্বন্ধে অসম্ভব অল্প খরচে জীবন নির্বাহ করিতেন; যজ্ঞনাথের ব্যবহারে প্রকাশ পাইত বেশভূষা-আহারবিহারে তাঁহারও সেইরূপ অত্যুচ্চ আদর্শ ছিল। সম্পূর্ণ সিদ্ধিলাভ করিতে পারেন নাই, সে কতকটা আধুনিক সমাজের দোষে এবং কতকটা শরীররক্ষা সম্বন্ধে প্রকৃতির কতকগুলি অন্যায় নিয়মের অনুরোধে।ছেলে যতদিন অবিবাহিত ছিল সহিয়াছিল, কিন্তু বিবাহের পর হইতে খাওয়া-পরা সম্বন্ধে বাপের অত্যন্ত বিশুদ্ধ আদর্শের সহিত ছেলের ...
সুহৃদ্বর শ্রীযুক্ত চারুচন্দ্র ভট্টাচার্যকরতলযুগলেষুমেঘের ফুরোল কাজ এইবার।সময় পেরিয়ে দিয়ে ঢেলেছিল জলধার, সুদীর্ঘ কালের পরে নিল ছুটি। উদাসী হাওয়ার সাথে জুটি রচিছে যেন সে অন্যমনে আকাশের কোণে কোণে ছবির খেয়াল রাশি রাশি,মিলিছে তাহার সাথে হেমন্তে কুয়াশা-ছোঁওয়া হাসি। দেবপিতামহ হাসে স্বর্গের কর্মের হেরি হেলা, ইন্দ্রের প্রাঙ্গণতলে দেবতার অর্থহীন খেলা।আমারো খেয়াল-ছবি মনের গহন হতে ভেসে আসে বায়ুস্রোতে। নিয়মের দিগন্ত পারায়ে
মাতৃমন্দির-পুণ্য-অঙ্গন কর' মহোজ্জ্বল আজ হেবর পুত্রসঙ্ঘ বিরাজ' হে।শুভ শঙ্খ বাজহ বাজ' হে।ঘন তিমিররাত্রির চির প্রতীক্ষা পূর্ণ কর', লহ' জ্যোতিদীক্ষা, যাত্রীদল সব সাজ' হে।শুভ শঙ্খ বাজহ বাজ' হে।বল জয় নরোত্তম, পুরুষসত্তম, জয় তপস্বিরাজ হে। জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় হে।এস' বজ্রমহাসনে মাতৃ-আশীর্ভাষণে,সকল সাধক এস' হে, ধন্য কর' এ দেশ হে।সকল যোগী, সকল ত্যাগী, এস' দুঃসহদুঃখভাগী--এস' দুর্জয়শক্তিসম্পদ মুক্তবন্ধ সমাজ হে।এস' জ্ঞানী, এস' কর্মী নাশ' ভারতলাজ হে।
মহাকাব্যের যুগে স্ত্রীকে পেতে হত পৌরুষের জোরে; যে অধিকারী সেই লাভ করত রমণীরত্ন। আমি লাভ করেছি কাপুরুষতা দিয়ে, সে-কথা আমার স্ত্রীর জানতে বিলম্ব ঘটেছিল। কিন্তু, সাধনা করেছি বিবাহের পরে; যাকে ফাঁকি দিয়ে চুরি করে পেয়েছি তার মূল্য দিয়েছি দিনে দিনে।দাম্পত্যের স্বত্ব সাব্যস্ত করতে হয় প্রতিদিনই নতুন করে, অধিকাংশ পুরুষ ভুলে থাকে এই কথাটা। তারা গোড়াতেই কাস্টম্ হৌসে মাল খালাস করে নিয়েছে সমাজের ছাড়চিঠি দেখিয়ে, তার পর থেকে আছে বেপরোয়া। যেন পেয়েছে পাহারাওয়ালার সরকারি প্রতাপ, উপরওয়ালার দেওয়া তকমার জোরে; উর্দিটা খুলে নিলেই অতি অভাজন তারা।বিবাহটা চিরজীবনের পালাগান; তার ধুয়ো একটামাত্র, কিন্তু সংগীতের বিস্তার প্রতিদিনের নব নব পর্যায়ে। এই কথাটা ভালোরকম করে বুঝেছি সুনেত্রার কাছ থেকেই। ওর মধ্যে আছে ভালোবাসার ঐশ্বর্য, ...