ললাটের লিখনStories

ছেলেবেলায় পৃথ্বীশের ডান দিকের কপালে চোট লেগেছিল ভুরুর মাঝখান থেকে উপর পর্যন্ত। সেই আঘাতে ডান চোখটাও সংকুচিত। পৃথ্বীশকে ভালো দেখতে কি না সেই প্রশ্নের উত্তরটা কাটা দাগের অবিচারে সম্পূর্ণ হতে পারল না। অদৃষ্টের এই লাঞ্ছনাকে এত দিন থেকে প্রকাশ্যে পৃথ্বীশ বহন করে আসছে তবুও দাগও যেমন মেলায় নি তেমনি ঘোচে নি তার সংকোচ। নতুন কারো সঙ্গে পরিচয় হবার উপলক্ষে প্রত্যেকবার ধিক্‌কারটা জেগে ওঠে মনে। কিন্তু বিধাতাকে গাল দেবার অধিকার তার নেই। তার রচনার ঐশ্বর্যকে বন্ধুরা স্বীকার করছে প্রচুর প্রশংসায়, শত্রুরা নিন্দাবাক্যের নিরন্তর কটুক্তিতে। লেখার চারি দিকে ভিড় জমছে। দু টাকা আড়াই টাকা দামের বইগুলো ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে ঘরে। সম্পাদকরা তার কলমের প্রসাদ ছুটোছাঁটা যা-ই পায় কিছুই ছাড়ে না। পাঠিকারা বলে, পৃথ্বীশবাবু মেয়েদের মন ...

হে নিরুপমা, গানেArtists

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়

Video thumbnail

কিছুই ত হল নাArtists

কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়

Video thumbnail

আমার সকল নিয়েArtists

সাহানা বাজপেয়ী

Video thumbnail

ডিটেকটিভStories

আমি পুলিসের ডিটেকটিভ কর্মচারী।  আমার জীবনের দুটিমাত্র লক্ষ্য ছিল-- আমার স্ত্রী এবং আমার ব্যবসায়। পূর্বে একান্নবর্তী পরিবারের মধ্যে ছিলাম, সেখানে আমার স্ত্রীর প্রতি সমাদরের অভাব হওয়াতেই আমি দাদার সঙ্গে ঝগড়া করিয়া বাহির হইয়া আসি। দাদাই উপার্জন করিয়া আমাকে পালন করিতেছিলেন, অতএব সহসা সস্ত্রীক তাঁহার আশ্রয় ত্যাগ করিয়া আসা আমার পক্ষে দুঃসাহসের কাজ হইয়াছিল।
কিন্তু কখনো নিজের উপরে আমার বিশ্বাসের ত্রুটি ছিল না। আমি নিশ্চয় জানিতাম, সুন্দরী স্ত্রীকে যেমন বশ করিয়াছি বিমুখ অদৃষ্টলক্ষ্মীকেও তেমনি বশ করিতে পারিব। মহিমচন্দ্র এ সংসারে পশ্চাতে পড়িয়া থাকিবে না।
পুলিসবিভাগে সামান্যভাবে প্রবেশ করিলাম, অবশেষে ডিটেকটিভ-পদে উত্তীর্ণ হইতে অধিক বিলম্ব হইল না।
উজ্জ্বল শিখা হইতেও যেমন কজ্জ্বলপাত হয় তেমনি আমার স্ত্রীর প্রেম ...

রাজপুত্তুরStories

রাজপুত্তুর চলেছে নিজের রাজ্য ছেড়ে, সাত রাজার রাজ্য পেরিয়ে, যে দেশে কোনো রাজার রাজ্য নেই সেই দেশে।
সে হল যে কালের কথা সে কালের আরম্ভও নেই, শেষও নেই।
শহরে গ্রামে আর-সকলে হাটবাজার করে, ঘর করে, ঝগড়া করে; যে আমাদের চিরকালের রাজপুত্তুর সে রাজ্য ছেড়ে ছেড়ে চলে যায়।
কেন যায়।
কুয়োর জল কুয়োতেই থাকে, খালবিলের জল খালবিলের মধ্যেই শান্ত। কিন্তু, গিরিশিখরের জল গিরিশিখরে ধরে না, মেঘের জল মেঘের বাঁধন মানে না।
রাজপুত্তুরকে তার রাজ্যটুকুর মধ্যে ঠেকিয়ে রাখবে কে। তেপান্তর মাঠ দেখে সে ফেরে না, সাতসমুদ্র তেরোনদী পার হয়ে যায়।
মানুষ বারে বারে শিশু হয়ে জন্মায় আর বারে বারে নতুন ক'রে এই পুরাতন কাহিনীটি শোনে। সন্ধ্যাপ্রদীপের আলো স্থির হয়ে থাকে, ছেলেরা চুপ করে গালে হাত দিয়ে ভাবে, 'আমরা সেই রাজপুত্তুর।'
তেপান্তর মাঠ যদি বা ফুরোয়, ...

পুনরাবৃত্তিStories

সেদিন যুদ্ধের খবর ভালো ছিল না। রাজা বিমর্ষ হয়ে বাগানে বেড়াতে গেলেন।
দেখতে পেলেন, প্রাচীরের কাছে গাছতলায় বসে খেলা করছে একটি ছোটো ছেলে আর একটি ছোটো মেয়ে।
রাজা তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, 'তোমরা কী খেলছ।'
তারা বললে, 'আমাদের আজকের খেলা রামসীতার বনবাস।'
রাজা সেখানে বসে গেলেন।
ছেলেটি বললে, 'এই আমাদের দণ্ডকবন, এখানে কুটীর বাঁধছি।'
সে একরাশ ভাঙা ডালপালা খড় ঘাস জুটিয়ে এনেছে, ভারি ব্যস্ত।
আর, মেয়েটি শাক পাতা নিয়ে খেলার হাঁড়িতে বিনা আগুনে রাঁধছে; রাম খাবেন, তারই আয়োজনে সীতার এক দণ্ড সময় নেই।
রাজা বললেন, 'আর তো সব দেখছি, কিন্তু রাক্ষস কোথায়।'
ছেলেটিকে মানতে হল, তাদের দণ্ডকবনে কিছু কিছু ত্রুটি আছে।
রাজা বললেন, 'আচ্ছা, আমি হব রাক্ষস।'
ছেলেটি তাঁকে ভালো করে দেখলে। তার পরে বললে, 'তোমাকে কিন্তু হেরে যেতে হবে।'
রাজা বললেন, 'আমি ...

ঘোড়াStories

সৃষ্টির কাজ প্রায় শেষ হয়ে যখন ছুটির ঘণ্টা বাজে ব'লে, হেনকালে ব্রহ্মার মাথায় একটা ভাবোদয় হল।
ভাণ্ডারীকে ডেকে বললেন, 'ওহে ভাণ্ডারী, আমার কারখানাঘরে কিছু কিছু পঞ্চভূতের জোগাড় করে আনো, আর-একটা নতুন প্রাণী সৃষ্টি করব।'
ভাণ্ডারী হাত জোড় করে বললে, 'পিতামহ, আপনি যখন উৎসাহ করে হাতি গড়লেন, তিমি গড়লেন, অজগর সর্প গড়লেন, সিংহ-ব্যাঘ্র গড়লেন, তখন হিসাবের দিকে আদৌ খেয়াল করলেন না। যতগুলো ভারি আর কড়া জাতের ভূত ছিল সব প্রায় নিকাশ হয়ে এল। ক্ষিতি অপ্‌ তেজ তলায় এসে ঠেকেছে। থাকবার মধ্যে আছে মরুৎ ব্যোম, তা সে যত চাই।'
চতুর্মুখ কিছুক্ষণ ধরে চারজোড়া গোঁফে তা দিয়ে বললেন, 'আচ্ছা ভালো, ভাণ্ডারে যা আছে তাই নিয়ে এসো, দেখা যাক।'
এবারে প্রাণীটিকে গড়বার বেলা ব্রহ্মা ক্ষিতি-অপ-তেজটাকে খুব হাতে রেখে খরচ করলেন। তাকে না দিলেন শিঙ, না ...

বলাইStories

মানুষের জীবনটা পৃথিবীর নানা জীবের ইতিহাসের নানা পরিচ্ছেদের উপসংহারে, এমন একটা কথা আছে। লোকালয়ে মানুষের মধ্যে আমরা নানা জীবজন্তুর প্রচ্ছন্ন পরিচয় পেয়ে থাকি, সে কথা জানা। বস্তুত আমরা মানুষ বলি সেই পদার্থকে যেটা আমাদের ভিতরকার সব জীবজন্তুকে মিলিয়ে এক করে নিয়েছে-- আমাদের বাঘ-গোরুকে এক খোঁয়াড়ে দিয়েছে পুরে, অহি-নকুলকে এক খাঁচায় ধরে রেখেছে। যেমন রাগিনী বলি তাকেই যা আপনার ভিতরকার সমুদয় সা-রে-গা-মা-গুলোকে সংগীত করে তোলে, তার পর থেকে তাদের আর গোলমাল করবার সাধ্য থাকে না। কিন্তু, সংগীতের ভিতরে এক-একটি সুর অন্য সকল সুরকে ছাড়িয়ে বিশেষ হয়ে ওঠে-- কোনোটাতে মধ্যম, কোনোটাতে কোমলগান্ধার, কোনোটাতে পঞ্চম।
আমার ভাইপো বলাই-- তার প্রকৃতিতে কেমন করে গাছপালার মূল সুরগুলোই হয়েছে প্রবল। ছেলেবেলা থেকেই চুপচাপ চেয়ে চেয়ে দেখাই ...

জনগণমন-অধিনায়কArtists

পঙ্কজ মল্লিক

Video thumbnail

কী সুর বাজেArtists

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

Video thumbnail

মুক্তকুন্তলাStories

আমার খুদে বন্ধুরা এসে হাজির তাদের নালিশ নিয়ে। বললে, দাদামশায় তুমি কি আমাদের ছেলেমানুষ মনে কর।
তা, ভাই, ঐ ভুলটাই তো করেছিলুম। আজকাল নিজেরই বয়েসটার ভুল হিসেব করতে শুরু করেছি।
রূপকথা আমাদের চলবে না, আমাদের বয়েস হয়ে গেছে।
আমি বললুম, ভায়া, রূপকথার কথাটা তো কিছুই নয়। ওর রূপটাই হল আসল। সেটা সব বয়েসেই চলে। আচ্ছা, ভালো, যদি পছন্দ না হয় তবে দেখি খুঁজে-পেতে। নিজের বয়েসটাতে ডুব মেরে তোমাদের বয়েসটাকে মনে আনতে চেষ্টা করছি। তার থলি থেকে রূপকথা নাহয় বাদ দিলুম, তার পরের সারে দেখতে পাই মৎস্যনারীর উপাখ্যান। সেও চলবে না। তোমরা নতুন যুগের ছেলে, খাঁটি খবর চাও; ফস্‌ করে জিজ্ঞেস করে বসবে, লেজা যদি হয় মাছের, মুড়ো কী করে হবে মানুষের। রোসো, তবে ভেবে দেখি। তোমাদের বয়েসে, এমন-কি তোমাদের চেয়ে কিছু বেশি বয়েসে আমরা ম্যাজিকওয়ালা ...