কেন চেয়ে আছ গো মাArtists

দেবব্রত বিশ্বাস

Video thumbnail

সম্পত্তি-সমর্পণStories

বৃন্দাবন কুণ্ড মহা ক্রুদ্ধ হইয়া আসিয়া তাহার বাপকে কহিল, "আমি এখনই চলিলাম।"
বাপ যজ্ঞনাথ কুণ্ড কহিলেন, "বেটা অকৃতজ্ঞ, ছেলেবেলা হইতে তোকে খাওয়াইতে পরাইতে যে ব্যয় হইয়াছে তাহার পরিশোধ করিবার নাম নাই, আবার তেজ দেখোনা।"
যজ্ঞনাথের ঘরে যেরূপ অশনবসনের প্রথা তাহাতে খুব যে বেশি ব্যয় হইয়াছে তাহা নহে। প্রাচীন কালের ঋষিরা আহার এবং পরিচ্ছদ সম্বন্ধে অসম্ভব অল্প খরচে জীবন নির্বাহ করিতেন; যজ্ঞনাথের ব্যবহারে প্রকাশ পাইত বেশভূষা-আহারবিহারে তাঁহারও সেইরূপ অত্যুচ্চ আদর্শ ছিল। সম্পূর্ণ সিদ্ধিলাভ করিতে পারেন নাই, সে কতকটা আধুনিক সমাজের দোষে এবং কতকটা শরীররক্ষা সম্বন্ধে প্রকৃতির কতকগুলি অন্যায় নিয়মের অনুরোধে।
ছেলে যতদিন অবিবাহিত ছিল সহিয়াছিল, কিন্তু বিবাহের পর হইতে খাওয়া-পরা সম্বন্ধে বাপের অত্যন্ত বিশুদ্ধ আদর্শের সহিত ছেলের ...

মীনুStories

মীনু পশ্চিমে মানুষ হয়েছে। ছেলেবেলায় ইঁদারার ধারে তুঁতের গাছে লুকিয়ে ফল পাড়তে যেত; আর অড়রখেতে যে বুড়ো মালী ঘাস নিড়োত তার সঙ্গে ওর ছিল ভাব।
বড়ো হয়ে জৌনপুরে হল ওর বিয়ে। একটি ছেলে হয়ে মারা গেল, তার পরে ডাক্তার বললে, 'এও বাঁচে কি না-বাঁচে।'
তখন তাকে কলকাতায় নিয়ে এল।
ওর অল্প বয়েস। কাঁচা ফলটির মতো ওর কাঁচা প্রাণ পৃথিবীর বোঁটা শক্ত করে আঁকড়ে ছিল। যা-কিছু কচি, যা-কিছু সবুজ, যা-কিছু সজীব, তার 'পরেই ওর বড়ো টান।
আঙিনায় তার আট-দশ হাত জমি, সেইটুকুতে তার বাগান।
এই বাগানটি ছিল যেন তার কোলের ছেলে। তারই বেড়ার 'পরে যে ঝুমকোলতা লাগিয়েছিল। এইবার সেই লতায় কুঁড়ির আভাস দিতেই সে চলে এসেছে।
পাড়ার সমস্ত পোষা এবং না-পোষা কুকুরের অন্ন আর আদর ওরই বাড়িতে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে যেটিকে সে ভালোবাসত তার নাক ছিল খাঁদা, তার নাম ছিল ভোঁত...

বদনামStories

ক্রিং ক্রিং ক্রিং সাইকেলের আওয়াজ; সদর দরজার কাছে লাফ দিয়ে নেমে পড়লেন ইন্‌স্‌পেক্টার বিজয়বাবু। গায়ে ছাঁটা কোর্তা, কোমরে কোমরবন্ধ, হাফ-প্যাণ্টপরা, চলনে কেজো লোকের দাপট। দরজার কড়া নাড়া দিতেই গিন্নি এসে খুলে দিলেন।
ইন্‌স্‌পেক্টার ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই ঝংকার দিয়ে উঠলেন--'এমন করে তো আর পারি নে, রাত্তিরের পর রাত্তির খাবার আগলে রাখি! তুমি কত চোর ডাকাত ধরলে, সাধু সজ্জনও বাদ গেল না, আর ঐ একটা লোক অনিল মিত্তিরের পিছন পিছন তাড়া করে বেড়াচ্ছ, সে থেকে থেকে তোমার সামনে এসে নাকের উপর বুড়ো আঙুল নাড়া দিয়ে কোথায় দৌড় মারে তার ঠিকানা নেই। দেশসুদ্ধ লোক তোমার এই দশা দেখে হেসে খুন, এ যেন সার্কাসের খেলা হচ্ছে।'
ইন্‌স্‌পেক্টার বললেন, 'আমার উপরে ওর নেকনজর আছে কী ভাগ্যিস। ও বেলে খালাস আসামীই বটে, তবু পুলিসে না রিপোর্ট্‌ করে ...

মুক্তিStories

বিরহিণী তার ফুলবাগানের এক ধারে বেদী সাজিয়ে তার উপর মূর্তি গড়তে বসল। তার মনের মধ্যে যে মানুষটি ছিল বাইরে তারই প্রতিরূপ প্রতিদিন একটু একটু করে গড়ে, আর চেয়ে চেয়ে দেখে, আর ভাবে, আর চোখ দিয়ে জল পড়ে।
কিন্তু, যে রূপটি একদিন তার চিত্তপটে স্পষ্ট ছিল তার উপরে ক্রমে যেন ছায়া পড়ে আসছে। রাতের বেলাকার পদ্মের মতো স্মৃতির পাপড়িগুলি অল্প অল্প করে যেন মুদে এল।
মেয়েটি তার নিজের উপর রাগ করে, লজ্জা পায়। সাধনা তার কঠিন হল, ফল খায় আর জল খায়, আর তৃণশয্যায় পড়ে থাকে।
মূর্তিটি মনের ভিতর থেকে গড়তে গড়তে সে আর প্রতিমূর্তি রইল না। মনে হল, এ যেন কোনো বিশেষ মানুষের ছবি নয়। যতই বেশি চেষ্টা করে ততই বেশি তফাত হয়ে যায়।
মূর্তিকে তখন সে গয়না দিয়ে সাজাতে থাকে, একশো এক পদ্মের ডালি দিয়ে পুজো করে, সন্ধেবেলায় তার সামনে গন্ধতৈলের প্রদীপ জ্বালে-- ...

ভয় হতে তবArtists

সাহানা বাজপেয়ী

Video thumbnail

ভুল স্বর্গStories

লোকটি নেহাত বেকার ছিল।
তার কোনো কাজ ছিল না, কেবল শখ ছিল নানা রকমের।
ছোটো ছোটো কাঠের চৌকোয় মাটি ঢেলে তার উপরে সে ছোটো ঝিনুক সাজাত। দূর থেকে দেখে মনে হত যেন একটা এলোমেলো ছবি, তার মধ্যে পাখির ঝাঁক; কিম্বা এবড়ো-খেবড়ো মাঠ, সেখানে গোরু চরছে; কিম্বা উঁচুনিচু পাহাড়, তার গা দিয়ে ওটা বুঝি ঝরনা হবে, কিম্বা পায়ে-চলা পথ।
বাড়ির লোকের কাছে তার লাঞ্ছনার সীমা ছিল না। মাঝে মাঝে পণ করত পাগলামি ছেড়ে দেবে, কিন্তু পাগলামি তাকে ছাড়ত না।
কোনো কোনো ছেলে আছে সারা বছর পড়ায় ফাঁকি দেয়, অথচ পরীক্ষায় খামকা পাশ করে ফেলে। এর সেই দশা হল।
সমস্ত জীবনটা অকাজে গেল, অথচ মৃত্যুর পরে খবর পেলে যে, তার স্বর্গে যাওয়া মঞ্জুর।
কিন্তু, নিয়তি স্বর্গের পথেও মানুষের সঙ্গ ছাড়ে না। দূতগুলো মার্কা ভুল করে তাকে কেজো লোকের স্বর্গে রেখে এল।
এই স্বর্গে আর ...

শুভদৃষ্টিStories

কান্তিচন্দ্রের বয়স অল্প, তথাপি স্ত্রীবিয়োগের পর দ্বিতীয় স্ত্রীর অনুসন্ধানে ক্ষান্ত থাকিয়া পশুপক্ষী-শিকারেই মনোনিবেশ করিয়াছেন। দীর্ঘ কৃশ কঠিন লঘু শরীর, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, অব্যর্থ লক্ষ্য, সাজসজ্জায় পশ্চিমদেশীর মতো; সঙ্গে সঙ্গে কুস্তিগির হীরা সিং, ছক্কনলাল, এবং গাইয়ে বাজিয়ে খাঁসাহেব, মিঞাসাহেব অনেক ফিরিয়া থাকে; অকর্মণ্য অনুচর-পরিচরেরও অভাব নাই।
দুই-চারিজন শিকারী বন্ধুবান্ধব লইয়া অঘ্রানের মাঝামাঝি কান্তিচন্দ্র নৈদিঘির বিলের ধারে শিকার করিতে গিয়াছেন। নদীতে দুইটি বড়ো বোটে তাঁহাদের বাস, আরো  গোটা-তিনচার নৌকায় চাকরবাকরের দল গ্রামের ঘাট ঘিরিয়া বসিয়া আছে। গ্রামবধূদের জল তোলা, স্নান করা প্রায় বন্ধ। সমস্ত দিন বন্দুকের আওয়াজে জলস্থল কম্পমান, সন্ধ্যাবেলায় ওস্তাদি গলায় তানকর্তবে পল্লীর নিদ্রাতন্দ্রা তিরোহিত।
একদিন ...

ভরা থাক্ স্মৃতিসুধায়Artists

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

Video thumbnail

রাজার বাড়িStories

কুসমি জিগেস করলে, দাদামশায়, ইরুমাসির বোধ হয় খুব বুদ্ধি ছিল।
ছিল বই-কি, তোর চেয়ে বেশি ছিল।
থমকে গেল কুসমি। অল্প একটু দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললে, ওঃ, তাই বুঝি তোমাকে এত ক'রে বশ করেছিলেন?
তুই যে উল্টো কথা বললি, বুদ্ধি দিয়ে কেউ কাউকে বশ করে?
তবে?
করে অবুদ্ধি দিয়ে। সকলেরই মধ্যে এক জায়গায় বাসা ক'রে থাকে একটা বোকা, সেইখানে ভালো ক'রে বোকামি চালাতে পারলে মানুষকে বশ করা সহজ হয়। তাই তো ভালোবাসাকে বলে মন ভোলানো।
কেমন ক'রে করতে হয় বলো-না।
কিচ্ছু জানি নে, কী যে হয় সেই কথাই জানি, তাই তো বলতে যাচ্ছিলুম।
আচ্ছা, বলো।
আমার একটা কাঁচামি আছে, আমি সব-তাতেই অবাক হয়ে যাই; ইরু ঐখানেই পেয়ে বসেছিল। সে আমাকে কথায় কথায় কেবল তাক লাগিয়ে দিত।
কিন্তু, ইরুমাসি তো তোমার চেয়ে ছোটো ছিলেন।
অন্তত বছর-খানেক ছোটো। কিন্তু আমি তার বয়সের নাগাল পেতুম ...

দুঃখরাতে, হে নাথArtists

মোহন সিং খাঙ্গুরা

Video thumbnail

প্রথম চিঠিStories

বধূর সঙ্গে তার প্রথম মিলন, আর তার পরেই সে এই প্রথম এসেছে প্রবাসে।
চলে যখন আসে তখন বধূর লুকিয়ে কান্নাটি ঘরের আয়নার মধ্যে দিয়ে চকিতে ওর চোখে পড়ল।
মন বললে, 'ফিরি, দুটো কথা বলে আসি।'
কিন্তু, সেটুকু সময় ছিল না।
সে দূরে আসবে ব'লে একজনের দুটি চোখ বয়ে জল পড়ে, তার জীবনে এমন সে আর-কখনো দেখে নি।
পথে চলবার সময় তার কাছে পড়ন্ত রোদ্‌দুরে এই পৃথিবী প্রেমের ব্যথায় ভরা হয়ে দেখা দিল। সেই অসীম ব্যথার ভাণ্ডারে তার মতো একটি মানুষেরও নিমন্ত্রণ আছে, এই কথা মনে করে বিস্ময়ে তার বুক ভরে উঠল।
যেখানে সে কাজ করতে এসেছে সে পাহাড়। সেখানে দেবদারুর ছায়া বেয়ে বাঁকা পথ নীরব মিনতির মতো পাহাড়কে জড়িয়ে ধরে, আর ছোটো ছোটো ঝরনা কাকে যেন আড়ালে আড়ালে খুঁজে বেড়ায় লুকিয়েচুরিয়ে।
আয়নার মধ্যে যে ছবিটি দেখে এসেছিল আজ প্রকৃতির মধ্যে প্রবাসী সেই ছবিরই ...

তারাপ্রসন্নের কীর্তিStories

লেখকজাতির প্রকৃতি অনুসারে তারাপ্রসন্ন কিছু লাজুক এবং মুখচোরা ছিলেন। লোকের কাছে বাহির হইতে গেলে তাঁহার সর্বনাশ উপস্থিত হইত। ঘরে বসিয়া কলম চালাইয়া তাঁহার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ, পিঠ একটু কুঁজা, সংসারের অভিজ্ঞতা অতি অল্প। লৌকিকতার বাঁধি বোলসকল সহজে তাঁহার মুখে আসিত না, এইজন্য গৃহদুর্গের বাহিরে তিনি আপনাকে কিছুতেই নিরাপদ মনে করিতেন না।
লোকেও তাঁহাকে একটা উজবুক রকমের মনে করিত এবং লোকেরও দোষ দেওয়া যায় না। মনে করো, প্রথম পরিচয়ে একটি পরম ভদ্রলোক উচ্ছ্বসিত কন্ঠে তারাপ্রসন্নকে বলিলেন, "মহাশয়ের সহিত সাক্ষাৎ হয়ে যে কী পর্যন্ত আনন্দ লাভ করা গেল, তা একমুখে বলতে পারি নে"-- তারাপ্রসন্ন নিরুত্তর হইয়া নিজের দক্ষিণ করতল বিশেষ মনোযোগপূর্বক নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। হঠাৎ সে নীরবতার অর্থ এইরূপ মনে হয়, "তা, তোমার আনন্দ হয়েছে ...