খ্যাতির বিড়ম্বনা (khyatir birambana)
মাঘ ১২৯২
প্রথম দৃশ্য
উকিল দুকড়ি দত্ত চেয়ারে আসীন
ভয়ে ভয়ে খাতা-হস্তে কাঙালিচরণের প্রবেশ
দুকড়ি।
কী চাই?
কাঙালি।
আজ্ঞে, মশায় হচ্ছেন দেশহিতৈষী--
দুকড়ি।
তা তো সকলেই জানে, কিন্তু আসল ব্যাপারটা কী?
কাঙালি।
আপনি সাধারনের হিতের জন্য প্রাণপণ--
দুকড়ি।
ক'রে ওকালতি ব্যাবসা চালাচ্ছি তাও কারো অবিদিত নেই-- কিন্তু তোমার বক্তব্যটা কী?
কাঙালি।
আজ্ঞে, বক্তব্য বেশি নেই।
দুকড়ি।
তবে শীঘ্র শীঘ্র সেরে ফেলো-না।
কাঙালি।
একটু বিবেচনা করে দেখলে আপনাকে স্বীকার করতেই হবে যে "গানাৎ পরতরং নহি'--
দুকড়ি।
বাপু, বিবেচনা এবং স্বীকার করবার পূর্বে যে কথাটা বললে তার অর্থ জানা বিশেষ আবশ্যক । ওটা বাংলা করে বলো।
কাঙালি।
আজ্ঞে বাংলাটা ঠিক জানি নে। তবে মর্ম হচ্ছে এই, গান জিনিসটা শুনতে বড়ো ভালো লাগে।
দুকড়ি।
সকলের ভালো লাগে না।
কাঙালি।
গান যার ভালো না লাগে সে হচ্ছে--
দুকড়ি।
উকিল শ্রীযুক্ত দুকড়ি দত্ত।
কাঙালি।
আজ্ঞে, অমন কথা বলবেন না।
দুকড়ি।
তবে কি মিথ্যা কথা বলব?
কাঙালি।
আর্যাবর্তে ভরত মুনি হচ্ছেন গানের প্রথম--
দুকড়ি।
ভরত মুনির নামে যদি কোনো মকদ্দমা থাকে তো বলো, নইলে বক্তৃতা বন্ধ করো।
কাঙালি।
অনেক কথা বলবার ছিল--
দুকড়ি।
কিন্তু অনেক কথা শোনবার সময় নেই।
কাঙালি।
তবে সংক্ষেপে বলি। এই মহানগরীতে গানোন্নতিবিধায়িনী-নাম্নী এক সভা স্থাপন করা গেছে, তাতে মহাশয়কে--
দুকড়ি।
বক্তৃতা দিতে হবে?
কাঙালি।
আজ্ঞে না।
দুকড়ি।
সভাপতি হতে হবে?
কাঙালি।
আজ্ঞে না।
দুকড়ি।
তবে কী করতে হবে বলো। গান গাওয়া এবং গান শোনা, এ দুটোর কোনোটা আমার দ্বারা কখনো হয় নি এবং হবেও না-- তা আমি আগে থাকতে বলে রাখছি।
কাঙালি।
মশায়কে ও-দুটোর কোনোটাই করতে হবে না। (খাতা অগ্রসর করিয়া ) কেবল্ কিঞ্চিৎ চাঁদা--
দুকড়ি।
(ধরফর করিয়া উঠিয়া) চাঁদা! আ সর্বনাশ! তুমি তো সহজ লোক নও হে! ভালোমানুষটির মতো মুখ কাঁচুমাচু করে এসেছ-- আমি বলি, বুঝি কী মকদ্দমার ফেসাদে পড়েছ। তোমার চাঁদার খাতা নিয়ে বেরোও এখনি, নইলে ট্রেস্পাসের দাবি দিয়ে পুলিস-কেস আনব।
কাঙালি।
চাইলুম চাঁদা, পেলুম অর্ধচন্দ্র! (স্বগত) কিন্তু তোমাকে জব্দ করব।
দুকড়িবাবু কতকগুলি সংবাদপত্র-হস্তে
দুকড়ি।
এ তো বড়ো মজাই হল! কাঙালিচরণ বলে কে একজন লোক ইংরেজি বাংলা সমস্ত খবরের কাগজে লিখে পাঠিয়েছে যে আমি তাদের "গানোন্নতি বিধায়িনী' সভায় পাঁচ হাজার টাকা দান করেছি। দান চুলোয় যাক, গলাধাক্কা দিতে বাকি রেখেছি। মাঝের থেকে আমার খুব নাম রটে গেল-- এতে আমার ব্যাবসার পক্ষে ভারি সুবিধে। তাদেরও সুবিধে; লোক মনে করবে, যখন পাঁচ হাজার টাকা দান পেয়েছে তখন অবিশ্যি মস্ত সভা। পাঁচ জায়গা থেকে ভারী ভারী চাঁদা আদায় হবে। যা হোক, আমার অদৃষ্ট ভালো।
কেরানিবাবুর প্রবেশ
কেরানি।
মশায় তবে গানোন্নতিসভায় পাঁচ হাজার টাকা দান করেছেন?
দুকড়ি।
(মাথা চুলকাইয়া হাসিয়া) আ-- ও একটা কথার কথা। শোন কেন! কে বললে দিয়েছি? মনে করো যদি দিয়েই থাকি, তা হয়েছি কী? এত গোলের আবশ্যক কী?
কেরানি।
আহা, কী বিনয়! পাঁচ হাজার টাকা নগদ দিয়ে গোপন করবার চেষ্টা, সাধারণ লোকের কাজ নয়।
ভৃত্যের প্রবেশ
ভৃত্য।
নীচের ঘরে বিস্তর লোক জমা হয়েছে।
দুকড়ি।
(স্বগত) দেখেছ! একদিনেই আমার পসার বেড়ে গেছে। (সানন্দে) একে একে তাদের উপরে নিয়ে আয়-- আর পান-তামাক দিয়ে যা।
প্রথম ব্যক্তির প্রবেশ
দুকড়ি।
(চৌকি সরাইয়া) আসুন-- বসুন। মশায়, তামাক ইচ্ছে করুন। ওরে-- পান দিয়ে যা।
প্রথম।
(স্বগত) আহা, কী অমায়িক প্রকৃতি! এঁর কাছে কামনাসিদ্ধি হবে না তো কার কাছে হবে!
দুকড়ি।
মশায়ের কী অভিপ্রায়ে আগমন?
প্রথম।
আপনার বদান্যতা দেশবিখ্যাত।
দুকড়ি।
ও-সব গুজবের কথা শোনেন কেন?
প্রথম।
কী বিনয়! কেবল মশায়ের নামই শ্রুত ছিলুম, আজ চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন হল।
দুকড়ি।
(স্বগত) এখন আসল কথাটা যে পাড়লে হয়। বিস্তর লোক বসে আছে।
(প্রকাশ্যে) তা, মশায়ের কী আবশ্যক?
প্রথম।
দেশের উন্নতি-উদ্দেশে হৃদয়ের--
দুকড়ি।
আজ্ঞে, সে-সব কথা বলাই বাহুল্য--
প্রথম।
তা ঠিক। মশায়ের মতো মহানুভব ব্যক্তি যাঁরা ভারতভূমির--
দুকড়ি।
সমস্ত মানছি মশায়, অতএব ও অংশটুকুও ছেড়ে দিন। তার পরে--
প্রথম।
বিনয়ী লোকের স্বভাবই এই যে, নিজের গুণানুবাদ--
দুকড়ি।
রক্ষে করুন মশায়, আসল কথাটা বলুন।
প্রথম।
আসল কথা কী জানেন-- দিনে দিনে আমাদের দেশ অধোগতি প্রাপ্ত হচ্ছে--
দুকড়ি।
সে কেবলমাত্র কথা সংক্ষেপ করতে না জানার দরুন।
প্রথম।
আমাদের স্বর্ণশস্যশালিনী পুণ্যভূমি ভারতবর্ষ দারিদ্র৻ের অন্ধকূপে--
দুকড়ি।
(সকাতরে মাথায় হাত দিয়া বসিয়া) বলে যান।
প্রথম।
দারিদ্রের অন্ধকূপে দিনে দিনে নিমজ্জমানা--
দুকড়ি।
(কাতর স্বরে) মশায়, বুঝতে পারছি নে।
প্রথম।
তবে আপনাকে প্রকৃত ব্যাপারটা বলি--
দুকড়ি।
(সানন্দে সাগ্রহে) সেই ভালো।
প্রথম।
ইংরেজরা লুঠ করছে।
দুকড়ি।
এ তো বেশ কথা। প্রমাণ সংগ্রহ করুন, ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে নালিশ রুজু করি।
প্রথম।
ম্যাজিস্ট্রেটও লুঠছে।
দুকড়ি।
তবে ডিস্ট্রিক্ট্ জজের আদালত--
প্রথম।
ডিস্ট্রিক্ট্ জজ তো ডাকাত।
দুকড়ি।
(অবাক্ভাবে) আপনার কথা আমি কিছু বুঝতে পারছি নে।
প্রথম।
আমি বলছি, দেশের টাকা বিদেশে চালান যাচ্ছে।
দুকড়ি।
দুঃখের বিষয়।
প্রথম।
তাই একটা সভা--
দুকড়ি।
(সচকিত) সভা!
প্রথম।
এই দেখুন-না খাতা।
দুকড়ি।
(বিস্ফারিতনেত্রে) খাতা!
প্রথম।
কিঞ্চিৎ চাঁদা--
দুকড়ি।
(চৌকি হইতে লাফাইয়া উঠিয়া) চাঁদা! বেরোও-- বেরোও-- বেরোও--
তাড়াতাড়ি চৌকি-উল্টায়ন, কালী-ফেলন, প্রথম ব্যক্তির
বেগে প্রস্থানোদ্যম, পতন, উত্থান, গোলমাল
দ্বিতীয় ব্যক্তির প্রবেশ
দুকড়ি।
কী চাই?
দ্বিতীয়।
মহাশয়ের দেশবিখ্যাত বদান্যতা--
দুকড়ি।
ও-সব হয়ে গেছে-- হয়ে গেছে-- নতুন কিছু থাকে তো বলুন।
দ্বিতীয়।
আপনার দেশহিতৈষিতা--
দুকড়ি।
আ মোলো-- এও যে সেই কথাটাই বলে!
দ্বিতীয়।
স্বদেশের সদনুষ্ঠানে আপনার সদনুরাগ--
দুকড়ি।
এ তো বিষম দায় দেখি। আসল কথাটা খুলে বলুন।
দ্বিতীয়।
একটা সভা--
দুকড়ি।
আবার সভা!
দ্বিতীয়।
এই দেখুন-না খাতা।
দুকড়ি।
খাতা! কিসের খাতা!
দ্বিতীয়।
চাঁদা আদায়--
দুকড়ি।
চাঁদা! (হাত ধরিয়া টানিয়া ) ওঠো, ওঠো, বেরোও, বেরোও-- প্রাণের মায়া থাকে তো--
[ দ্বিরুক্তি না করিয়া চাঁদাওয়ালার প্রস্থান
তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ
দুকড়ি।
দেখো বাপু, আমার দেশহিতৈষিতা বদান্যতা বিনয় এ-সমস্ত শেষ হয়ে গেছে-- তার পর থেকে আরম্ভ করো।
তৃতীয়।
আপনার সার্বভৌমিকতা-- সার্বজনীনতা-- উদারতা--
দুকড়ি।
তবু ভালো। এ কিছু নতুন ঠেকছে বটে। কিন্তু মশায়, ওগুলোও থাক্-- ভাষায় কথা আরম্ভ করুন।
তৃতীয়।
আমাদের একটা লাইব্রেরি--
দুকড়ি।
লাইব্রেরি? সভা নয় তো?
তৃতীয়।
আজ্ঞে, সভা নয়।
দুকড়ি।
আ, বাঁচা গেল। লাইব্রেরি। অতি উত্তম। তার পরে বলে যান।
তৃতীয়।
এই দেখুন-না প্রস্পেক্টস--
দুকড়ি।
খাতা নেই তো?
তৃতীয়।
আজ্ঞে না-- খাতা নয়, ছাপানো কাগজ।
দুকড়ি।
আ!-- তার পরে।
তৃতীয়।
কিঞ্চিৎ চাঁদা।
দুকড়ি।
(লাফাইয়া) চাঁদা! ওরে, আমার বাড়ি আজ ডাকাত পড়েছে রে! পুলিসম্যান! পুলিসম্যান!
[ তৃতীয় ব্যক্তির ঊর্ধ্বশ্বাসে পলায়ন
হরশংকরবাবুর প্রবেশ
দুকড়ি।
আরে, এসো, এসো, হরশংকর এসো। সেই কালেজে একসঙ্গে পড়া-- তার পরে তো আর দেখা হয় নি-- তোমাকে দেখে কী যে আনন্দ হল সে আর কী বলব।
হরশংকর।
তোমার সঙ্গে সুখদুঃখের অনেক কথা আছে ভাই-- সে-সব কথা পরে হবে, আগে একটা কাজের কথা বলে নিই।
দুকড়ি।
(পুলকিত হইয়া) কাজের কথা অনেকক্ষণ শুনি নি ভাই-- বলো শুনে কান জুড়োক।
শালের মধ্য হইতে হরশংকরের খাতা বাহির-করণ
ও কী ও, খাতা বেরোয় যে!
হরশংকর।
আমাদের পাড়ার ছেলেরা মিলে একটা সভা--
দুকড়ি।
(চমকিত হইয়া) সভা!
হরশংকর।
সভাই বটে। তা কিছু চাঁদার জন্যে--
দুকড়ি।
চাঁদা! দেখো, তোমার সঙ্গে আমার বহুকালের প্রণয়, কিন্তু ঐ কথাটা যদি আমার সামনে উচ্চারণ কর তা হলে চিরকালের মতো চটাচটি হবে তা বলে রাখছি।
হরশংকর।
বটে! তুমি কোথাকার খড়গেছের "গানোন্নতি' সভায় পাঁচ হাজার টাকা দান করতে পারো, আর বন্ধুর অনুরোধে পাঁচ টাকা সই করতে পারো না! কোন্ পাষণ্ড নরাধম এখেনে আর পদার্পণ করে।
[ সবেগে প্রস্থান
খাতা-হস্তে এক ব্যক্তির প্রবেশ
দুকড়ি।
খাতা? আবার খাতা? পালাও পালাও!
খাতাবাহক।
( ভীত হইয়া ) আমি নন্দলালবাবুর--
দুকড়ি।
নন্দলাল ফন্দলাল বুঝি নে, পালাও এখনই।
খাতাবাহক।
আজ্ঞে, সেই টাকাটা।
দুকড়ি।
আমি টাকা দিতে পারব না। বেরোও বেরোও।
[ খাতাবাহকের পলায়ন
কেরানি।
মশায়, করলেন কী? নন্দলালবাবুর কাছ থেকে আপনার পাওনার টাকাটা নিয়ে এসেছে। ও টাকাটা আদায় না হলে আজ যে চলবে না।
দুকড়ি।
কী সর্বনাশ! ওকে ডাকো ডাকো।
কেরানির প্রস্থান ও কিয়ৎক্ষণ পরে প্রবেশ
কেরানি।
সে চলে গেছে, তাকে পাওয়া গেল না।
দুকড়ি।
বিষম দায় দেখছি।
তম্বুরা-হস্তে এক ব্যক্তির প্রবেশ
দুকড়ি।
কী চাও?
তম্বুরা।
আপনার মতো এমন রসজ্ঞ কে আছে। গানের উন্নতির জন্য আপনি কী না করছেন। আপনাকে গান শোনাব।
তৎক্ষণাৎ তম্বুরা ছাড়িয়া গান
ইমনকল্যাণ
জয় জয় দুকড়ি দত্ত,
ভুবনে অনুপম মহত্ত্ব-- ইত্যাদি--
দুকড়ি।
আরে, কী সর্বনাশ! থাম্ থাম্!
তম্বুরা-হস্তে দ্বিতীয় ব্যক্তির প্রবেশ
দ্বিতীয়।
ও গানের কী জানে মশায়? আমার গান শুনুন--
দুকড়ি দত্ত তুমি ধন্য
তব মহিমা কে জানিবে অন্য--
প্রথম।
জয়-অ-জ-অ-অ-য়-অ-অ--
দ্বিতীয়।
দু-উ-উ-উ-উ-উ কড়ি-ই-ই--
প্রথম।
দুক-অ-অ-অ--
দুকড়ি।
(কানে আঙুল দিয়া ) আরে, গেলুম, আরে গেলুম!
বাঁয়া-তবলা লইয়া বাদকের প্রবেশ
বাদক।
মশায়, সংগত নেই গান! সে কি হয়!
বাদ্য আরম্ভ
দ্বিতীয় বাদকের প্রবেশ
দ্বিতীয় বাদক।
ও বেটা সংগতের কী জানে! ও তো বাঁয়া ধরতেই জানে না।
প্রথম গায়ক।
তুই বেটা থাম্।
দ্বিতীয়।
তুই থাম্-না।
প্রথম।
তুই গানের কী জানিস!
দ্বিতীয়।
তুই কী জানিস?
উভয়ে মিলিয়া ওড়ব খাড়ব প্রণব নাদ উদারা তারা লইয়া তর্ক। অবশেষে তম্বুরায় তম্বুরায় লড়াই দুই বাদকে মুখে মুখে বোল-কাটাকাটি "ধ্রেকেটে দেধে ঘেনে গেধে ঘেনে'। অবশেষে তবলায় তবলায় যুদ্ধ
দলে দলে গায়ক বাদক ও খাতা-হস্তে চাঁদাওয়ালার প্রবেশ
প্রথম।
মশায়, গান--
দ্বিতীয়।
মশায়, চাঁদা--
তৃতীয়।
মশায়, সভা--
চতুর্থ।
আপনার বদান্যতা--
পঞ্চম।
ইমনকল্যাণের খেয়াল--
ষষ্ঠ।
দেশের মঙ্গল--
সপ্তম।
সরি মিঞার টপ্পা--
অষ্টম।
আরে, তুই থাম্-না বাপু--
নবম।
আমার কথাটা বলে নি, একটু থাম্ না ভাই।
সকলে মিলিয়া দুকড়ির চাদর ধরিয়া টানাটানি, "শুনুন মশাই, আমার কথা শুনুন মশাই' ইত্যাদি
দুকড়ি।
(সকাতরে কেরানির প্রতি) আমি মামার বাড়ি চললুম। কিছুকাল সেখানে গিয়ে থাকব। কাউকে আমার ঠিকানা বোলো না।
[ প্রস্থান
গৃহমধ্যে সমস্ত দিন গায়ক-বাদকের কুরক্ষেত্রযুদ্ধ
বিবাদ মিটাইতে গিয়া সন্ধ্যাকালে আহত হইয়া কেরানির পতন
প্রথম দৃশ্য
উকিল দুকড়ি দত্ত চেয়ারে আসীন
ভয়ে ভয়ে খাতা-হস্তে কাঙালিচরণের প্রবেশ
দুকড়ি।
কী চাই?
কাঙালি।
আজ্ঞে, মশায় হচ্ছেন দেশহিতৈষী--
দুকড়ি।
তা তো সকলেই জানে, কিন্তু আসল ব্যাপারটা কী?
কাঙালি।
আপনি সাধারনের হিতের জন্য প্রাণপণ--
দুকড়ি।
ক'রে ওকালতি ব্যাবসা চালাচ্ছি তাও কারো অবিদিত নেই-- কিন্তু তোমার বক্তব্যটা কী?
কাঙালি।
আজ্ঞে, বক্তব্য বেশি নেই।
দুকড়ি।
তবে শীঘ্র শীঘ্র সেরে ফেলো-না।
কাঙালি।
একটু বিবেচনা করে দেখলে আপনাকে স্বীকার করতেই হবে যে "গানাৎ পরতরং নহি'--
দুকড়ি।
বাপু, বিবেচনা এবং স্বীকার করবার পূর্বে যে কথাটা বললে তার অর্থ জানা বিশেষ আবশ্যক । ওটা বাংলা করে বলো।
কাঙালি।
আজ্ঞে বাংলাটা ঠিক জানি নে। তবে মর্ম হচ্ছে এই, গান জিনিসটা শুনতে বড়ো ভালো লাগে।
দুকড়ি।
সকলের ভালো লাগে না।
কাঙালি।
গান যার ভালো না লাগে সে হচ্ছে--
দুকড়ি।
উকিল শ্রীযুক্ত দুকড়ি দত্ত।
কাঙালি।
আজ্ঞে, অমন কথা বলবেন না।
দুকড়ি।
তবে কি মিথ্যা কথা বলব?
কাঙালি।
আর্যাবর্তে ভরত মুনি হচ্ছেন গানের প্রথম--
দুকড়ি।
ভরত মুনির নামে যদি কোনো মকদ্দমা থাকে তো বলো, নইলে বক্তৃতা বন্ধ করো।
কাঙালি।
অনেক কথা বলবার ছিল--
দুকড়ি।
কিন্তু অনেক কথা শোনবার সময় নেই।
কাঙালি।
তবে সংক্ষেপে বলি। এই মহানগরীতে গানোন্নতিবিধায়িনী-নাম্নী এক সভা স্থাপন করা গেছে, তাতে মহাশয়কে--
দুকড়ি।
বক্তৃতা দিতে হবে?
কাঙালি।
আজ্ঞে না।
দুকড়ি।
সভাপতি হতে হবে?
কাঙালি।
আজ্ঞে না।
দুকড়ি।
তবে কী করতে হবে বলো। গান গাওয়া এবং গান শোনা, এ দুটোর কোনোটা আমার দ্বারা কখনো হয় নি এবং হবেও না-- তা আমি আগে থাকতে বলে রাখছি।
কাঙালি।
মশায়কে ও-দুটোর কোনোটাই করতে হবে না। (খাতা অগ্রসর করিয়া ) কেবল্ কিঞ্চিৎ চাঁদা--
দুকড়ি।
(ধরফর করিয়া উঠিয়া) চাঁদা! আ সর্বনাশ! তুমি তো সহজ লোক নও হে! ভালোমানুষটির মতো মুখ কাঁচুমাচু করে এসেছ-- আমি বলি, বুঝি কী মকদ্দমার ফেসাদে পড়েছ। তোমার চাঁদার খাতা নিয়ে বেরোও এখনি, নইলে ট্রেস্পাসের দাবি দিয়ে পুলিস-কেস আনব।
কাঙালি।
চাইলুম চাঁদা, পেলুম অর্ধচন্দ্র! (স্বগত) কিন্তু তোমাকে জব্দ করব।
দুকড়িবাবু কতকগুলি সংবাদপত্র-হস্তে
দুকড়ি।
এ তো বড়ো মজাই হল! কাঙালিচরণ বলে কে একজন লোক ইংরেজি বাংলা সমস্ত খবরের কাগজে লিখে পাঠিয়েছে যে আমি তাদের "গানোন্নতি বিধায়িনী' সভায় পাঁচ হাজার টাকা দান করেছি। দান চুলোয় যাক, গলাধাক্কা দিতে বাকি রেখেছি। মাঝের থেকে আমার খুব নাম রটে গেল-- এতে আমার ব্যাবসার পক্ষে ভারি সুবিধে। তাদেরও সুবিধে; লোক মনে করবে, যখন পাঁচ হাজার টাকা দান পেয়েছে তখন অবিশ্যি মস্ত সভা। পাঁচ জায়গা থেকে ভারী ভারী চাঁদা আদায় হবে। যা হোক, আমার অদৃষ্ট ভালো।
কেরানিবাবুর প্রবেশ
কেরানি।
মশায় তবে গানোন্নতিসভায় পাঁচ হাজার টাকা দান করেছেন?
দুকড়ি।
(মাথা চুলকাইয়া হাসিয়া) আ-- ও একটা কথার কথা। শোন কেন! কে বললে দিয়েছি? মনে করো যদি দিয়েই থাকি, তা হয়েছি কী? এত গোলের আবশ্যক কী?
কেরানি।
আহা, কী বিনয়! পাঁচ হাজার টাকা নগদ দিয়ে গোপন করবার চেষ্টা, সাধারণ লোকের কাজ নয়।
ভৃত্যের প্রবেশ
ভৃত্য।
নীচের ঘরে বিস্তর লোক জমা হয়েছে।
দুকড়ি।
(স্বগত) দেখেছ! একদিনেই আমার পসার বেড়ে গেছে। (সানন্দে) একে একে তাদের উপরে নিয়ে আয়-- আর পান-তামাক দিয়ে যা।
প্রথম ব্যক্তির প্রবেশ
দুকড়ি।
(চৌকি সরাইয়া) আসুন-- বসুন। মশায়, তামাক ইচ্ছে করুন। ওরে-- পান দিয়ে যা।
প্রথম।
(স্বগত) আহা, কী অমায়িক প্রকৃতি! এঁর কাছে কামনাসিদ্ধি হবে না তো কার কাছে হবে!
দুকড়ি।
মশায়ের কী অভিপ্রায়ে আগমন?
প্রথম।
আপনার বদান্যতা দেশবিখ্যাত।
দুকড়ি।
ও-সব গুজবের কথা শোনেন কেন?
প্রথম।
কী বিনয়! কেবল মশায়ের নামই শ্রুত ছিলুম, আজ চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন হল।
দুকড়ি।
(স্বগত) এখন আসল কথাটা যে পাড়লে হয়। বিস্তর লোক বসে আছে।
(প্রকাশ্যে) তা, মশায়ের কী আবশ্যক?
প্রথম।
দেশের উন্নতি-উদ্দেশে হৃদয়ের--
দুকড়ি।
আজ্ঞে, সে-সব কথা বলাই বাহুল্য--
প্রথম।
তা ঠিক। মশায়ের মতো মহানুভব ব্যক্তি যাঁরা ভারতভূমির--
দুকড়ি।
সমস্ত মানছি মশায়, অতএব ও অংশটুকুও ছেড়ে দিন। তার পরে--
প্রথম।
বিনয়ী লোকের স্বভাবই এই যে, নিজের গুণানুবাদ--
দুকড়ি।
রক্ষে করুন মশায়, আসল কথাটা বলুন।
প্রথম।
আসল কথা কী জানেন-- দিনে দিনে আমাদের দেশ অধোগতি প্রাপ্ত হচ্ছে--
দুকড়ি।
সে কেবলমাত্র কথা সংক্ষেপ করতে না জানার দরুন।
প্রথম।
আমাদের স্বর্ণশস্যশালিনী পুণ্যভূমি ভারতবর্ষ দারিদ্র৻ের অন্ধকূপে--
দুকড়ি।
(সকাতরে মাথায় হাত দিয়া বসিয়া) বলে যান।
প্রথম।
দারিদ্রের অন্ধকূপে দিনে দিনে নিমজ্জমানা--
দুকড়ি।
(কাতর স্বরে) মশায়, বুঝতে পারছি নে।
প্রথম।
তবে আপনাকে প্রকৃত ব্যাপারটা বলি--
দুকড়ি।
(সানন্দে সাগ্রহে) সেই ভালো।
প্রথম।
ইংরেজরা লুঠ করছে।
দুকড়ি।
এ তো বেশ কথা। প্রমাণ সংগ্রহ করুন, ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে নালিশ রুজু করি।
প্রথম।
ম্যাজিস্ট্রেটও লুঠছে।
দুকড়ি।
তবে ডিস্ট্রিক্ট্ জজের আদালত--
প্রথম।
ডিস্ট্রিক্ট্ জজ তো ডাকাত।
দুকড়ি।
(অবাক্ভাবে) আপনার কথা আমি কিছু বুঝতে পারছি নে।
প্রথম।
আমি বলছি, দেশের টাকা বিদেশে চালান যাচ্ছে।
দুকড়ি।
দুঃখের বিষয়।
প্রথম।
তাই একটা সভা--
দুকড়ি।
(সচকিত) সভা!
প্রথম।
এই দেখুন-না খাতা।
দুকড়ি।
(বিস্ফারিতনেত্রে) খাতা!
প্রথম।
কিঞ্চিৎ চাঁদা--
দুকড়ি।
(চৌকি হইতে লাফাইয়া উঠিয়া) চাঁদা! বেরোও-- বেরোও-- বেরোও--
তাড়াতাড়ি চৌকি-উল্টায়ন, কালী-ফেলন, প্রথম ব্যক্তির
বেগে প্রস্থানোদ্যম, পতন, উত্থান, গোলমাল
দ্বিতীয় ব্যক্তির প্রবেশ
দুকড়ি।
কী চাই?
দ্বিতীয়।
মহাশয়ের দেশবিখ্যাত বদান্যতা--
দুকড়ি।
ও-সব হয়ে গেছে-- হয়ে গেছে-- নতুন কিছু থাকে তো বলুন।
দ্বিতীয়।
আপনার দেশহিতৈষিতা--
দুকড়ি।
আ মোলো-- এও যে সেই কথাটাই বলে!
দ্বিতীয়।
স্বদেশের সদনুষ্ঠানে আপনার সদনুরাগ--
দুকড়ি।
এ তো বিষম দায় দেখি। আসল কথাটা খুলে বলুন।
দ্বিতীয়।
একটা সভা--
দুকড়ি।
আবার সভা!
দ্বিতীয়।
এই দেখুন-না খাতা।
দুকড়ি।
খাতা! কিসের খাতা!
দ্বিতীয়।
চাঁদা আদায়--
দুকড়ি।
চাঁদা! (হাত ধরিয়া টানিয়া ) ওঠো, ওঠো, বেরোও, বেরোও-- প্রাণের মায়া থাকে তো--
[ দ্বিরুক্তি না করিয়া চাঁদাওয়ালার প্রস্থান
তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ
দুকড়ি।
দেখো বাপু, আমার দেশহিতৈষিতা বদান্যতা বিনয় এ-সমস্ত শেষ হয়ে গেছে-- তার পর থেকে আরম্ভ করো।
তৃতীয়।
আপনার সার্বভৌমিকতা-- সার্বজনীনতা-- উদারতা--
দুকড়ি।
তবু ভালো। এ কিছু নতুন ঠেকছে বটে। কিন্তু মশায়, ওগুলোও থাক্-- ভাষায় কথা আরম্ভ করুন।
তৃতীয়।
আমাদের একটা লাইব্রেরি--
দুকড়ি।
লাইব্রেরি? সভা নয় তো?
তৃতীয়।
আজ্ঞে, সভা নয়।
দুকড়ি।
আ, বাঁচা গেল। লাইব্রেরি। অতি উত্তম। তার পরে বলে যান।
তৃতীয়।
এই দেখুন-না প্রস্পেক্টস--
দুকড়ি।
খাতা নেই তো?
তৃতীয়।
আজ্ঞে না-- খাতা নয়, ছাপানো কাগজ।
দুকড়ি।
আ!-- তার পরে।
তৃতীয়।
কিঞ্চিৎ চাঁদা।
দুকড়ি।
(লাফাইয়া) চাঁদা! ওরে, আমার বাড়ি আজ ডাকাত পড়েছে রে! পুলিসম্যান! পুলিসম্যান!
[ তৃতীয় ব্যক্তির ঊর্ধ্বশ্বাসে পলায়ন
হরশংকরবাবুর প্রবেশ
দুকড়ি।
আরে, এসো, এসো, হরশংকর এসো। সেই কালেজে একসঙ্গে পড়া-- তার পরে তো আর দেখা হয় নি-- তোমাকে দেখে কী যে আনন্দ হল সে আর কী বলব।
হরশংকর।
তোমার সঙ্গে সুখদুঃখের অনেক কথা আছে ভাই-- সে-সব কথা পরে হবে, আগে একটা কাজের কথা বলে নিই।
দুকড়ি।
(পুলকিত হইয়া) কাজের কথা অনেকক্ষণ শুনি নি ভাই-- বলো শুনে কান জুড়োক।
শালের মধ্য হইতে হরশংকরের খাতা বাহির-করণ
ও কী ও, খাতা বেরোয় যে!
হরশংকর।
আমাদের পাড়ার ছেলেরা মিলে একটা সভা--
দুকড়ি।
(চমকিত হইয়া) সভা!
হরশংকর।
সভাই বটে। তা কিছু চাঁদার জন্যে--
দুকড়ি।
চাঁদা! দেখো, তোমার সঙ্গে আমার বহুকালের প্রণয়, কিন্তু ঐ কথাটা যদি আমার সামনে উচ্চারণ কর তা হলে চিরকালের মতো চটাচটি হবে তা বলে রাখছি।
হরশংকর।
বটে! তুমি কোথাকার খড়গেছের "গানোন্নতি' সভায় পাঁচ হাজার টাকা দান করতে পারো, আর বন্ধুর অনুরোধে পাঁচ টাকা সই করতে পারো না! কোন্ পাষণ্ড নরাধম এখেনে আর পদার্পণ করে।
[ সবেগে প্রস্থান
খাতা-হস্তে এক ব্যক্তির প্রবেশ
দুকড়ি।
খাতা? আবার খাতা? পালাও পালাও!
খাতাবাহক।
( ভীত হইয়া ) আমি নন্দলালবাবুর--
দুকড়ি।
নন্দলাল ফন্দলাল বুঝি নে, পালাও এখনই।
খাতাবাহক।
আজ্ঞে, সেই টাকাটা।
দুকড়ি।
আমি টাকা দিতে পারব না। বেরোও বেরোও।
[ খাতাবাহকের পলায়ন
কেরানি।
মশায়, করলেন কী? নন্দলালবাবুর কাছ থেকে আপনার পাওনার টাকাটা নিয়ে এসেছে। ও টাকাটা আদায় না হলে আজ যে চলবে না।
দুকড়ি।
কী সর্বনাশ! ওকে ডাকো ডাকো।
কেরানির প্রস্থান ও কিয়ৎক্ষণ পরে প্রবেশ
কেরানি।
সে চলে গেছে, তাকে পাওয়া গেল না।
দুকড়ি।
বিষম দায় দেখছি।
তম্বুরা-হস্তে এক ব্যক্তির প্রবেশ
দুকড়ি।
কী চাও?
তম্বুরা।
আপনার মতো এমন রসজ্ঞ কে আছে। গানের উন্নতির জন্য আপনি কী না করছেন। আপনাকে গান শোনাব।
তৎক্ষণাৎ তম্বুরা ছাড়িয়া গান
ইমনকল্যাণ
জয় জয় দুকড়ি দত্ত,
ভুবনে অনুপম মহত্ত্ব-- ইত্যাদি--
দুকড়ি।
আরে, কী সর্বনাশ! থাম্ থাম্!
তম্বুরা-হস্তে দ্বিতীয় ব্যক্তির প্রবেশ
দ্বিতীয়।
ও গানের কী জানে মশায়? আমার গান শুনুন--
দুকড়ি দত্ত তুমি ধন্য
তব মহিমা কে জানিবে অন্য--
প্রথম।
জয়-অ-জ-অ-অ-য়-অ-অ--
দ্বিতীয়।
দু-উ-উ-উ-উ-উ কড়ি-ই-ই--
প্রথম।
দুক-অ-অ-অ--
দুকড়ি।
(কানে আঙুল দিয়া ) আরে, গেলুম, আরে গেলুম!
বাঁয়া-তবলা লইয়া বাদকের প্রবেশ
বাদক।
মশায়, সংগত নেই গান! সে কি হয়!
বাদ্য আরম্ভ
দ্বিতীয় বাদকের প্রবেশ
দ্বিতীয় বাদক।
ও বেটা সংগতের কী জানে! ও তো বাঁয়া ধরতেই জানে না।
প্রথম গায়ক।
তুই বেটা থাম্।
দ্বিতীয়।
তুই থাম্-না।
প্রথম।
তুই গানের কী জানিস!
দ্বিতীয়।
তুই কী জানিস?
উভয়ে মিলিয়া ওড়ব খাড়ব প্রণব নাদ উদারা তারা লইয়া তর্ক। অবশেষে তম্বুরায় তম্বুরায় লড়াই দুই বাদকে মুখে মুখে বোল-কাটাকাটি "ধ্রেকেটে দেধে ঘেনে গেধে ঘেনে'। অবশেষে তবলায় তবলায় যুদ্ধ
দলে দলে গায়ক বাদক ও খাতা-হস্তে চাঁদাওয়ালার প্রবেশ
প্রথম।
মশায়, গান--
দ্বিতীয়।
মশায়, চাঁদা--
তৃতীয়।
মশায়, সভা--
চতুর্থ।
আপনার বদান্যতা--
পঞ্চম।
ইমনকল্যাণের খেয়াল--
ষষ্ঠ।
দেশের মঙ্গল--
সপ্তম।
সরি মিঞার টপ্পা--
অষ্টম।
আরে, তুই থাম্-না বাপু--
নবম।
আমার কথাটা বলে নি, একটু থাম্ না ভাই।
সকলে মিলিয়া দুকড়ির চাদর ধরিয়া টানাটানি, "শুনুন মশাই, আমার কথা শুনুন মশাই' ইত্যাদি
দুকড়ি।
(সকাতরে কেরানির প্রতি) আমি মামার বাড়ি চললুম। কিছুকাল সেখানে গিয়ে থাকব। কাউকে আমার ঠিকানা বোলো না।
[ প্রস্থান
গৃহমধ্যে সমস্ত দিন গায়ক-বাদকের কুরক্ষেত্রযুদ্ধ
বিবাদ মিটাইতে গিয়া সন্ধ্যাকালে আহত হইয়া কেরানির পতন