আরো কিছুখন নাহয় বসিয়ো পাশে, আরো যদি কিছু কথা থাকে তাই বলো। শরত-আকাশ হেরো ম্লান হয়ে আসে, বাষ্প-আভাসে দিগন্ত ছলোছলো ॥ জানি তুমি কিছু চেয়েছিলে দেখিবারে, তাই তো প্রভাতে এসেছিলে মোর দ্বারে, দিন না ফুরাতে দেখিতে পেলে কি তারে হে পথিক, বলো বলো-- সে মোর অগম অন্তরপারাবারে রক্তকমল তরঙ্গে টলোমলো ॥ দ্বিধাভরে আজও প্রবেশ কর নি ঘরে, বাহির আঙনে করিলে সুরের খেলা। জানি না কী নিয়ে যাবে যে দেশান্তরে, হে অতিথি, আজি শেষ বিদায়ের বেলা। প্রথম প্রভাতে সব কাজ তব ফেলে যে গভীর বাণী শুনিবারে কাছে এলে কোনোখানে কিছু ইশারা কি তার পেলে, হে পথিক, বলো বলো-- সে বাণী আপন গোপন প্রদীপ জ্বেলে রক্ত আগুনে প্রাণে মোর জ্বলোজ্বলো ॥
তোমার বীণা আমার মনোমাঝে কখনো শুনি, কখনো ভুলি, কখনো শুনি না যে ॥ আকাশ যবে শিহরি উঠে গানে গোপন কথা কহিতে থাকে ধরার কানে কানে-- তাহার মাঝে সহসা মাতে বিষম কোলাহলে আমার মনে বাঁধনহারা স্বপন দলে দলে। হে বীণাপাণি, তোমার সভাতলে আকুল হিয়া উন্মাদিয়া বেসুর হয়ে বাজে ॥ তোমার বানী কখনো শুনি কখনো শুনি না যে॥ চলিতেছিনু তব কমলবনে, পথের মাঝে ভুলালো পথ উতলা সমীরণে। তোমার সুর ফাগুনরাতে জাগে, তোমার সুর অশোকশাখে অরুণরেণুরাগে। সে সুর বাহি চলিতে চাহি আপন-ভোলা মনে গুঞ্জরিত-ত্বরিত-পাখা মধুকরের সনে। কুহেলী কেন জড়ায় আবরণে-- আঁধারে আলো আবিল করে, আঁখি যে মরে লাজে, তোমার বানী কখনো শুনি কখনো শুনি না যে॥