এমন দিনে তারে বলা যায় এমন ঘনঘোর বরিষায়। এমন দিনে মন খোলা যায়-- এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরোঝরে তপনহীন ঘন তমসায়॥ সে কথা শুনিবে না কেহ আর, নিভৃত নির্জন চারি ধার। দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি, আকাশে জল ঝরে অনিবার-- জগতে কেহ যেন নাহি আর॥ সমাজ সংসার মিছে সব, মিছে এ জীবনের কলরব। কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব-- আঁধারে মিশে গেছে আর সব॥ তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার নামাতে পারি যদি মনোভার। শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে দু কথা বলি যদি কাছে তার তাহাতে আসে যাবে কিবা কার॥ ব্যাকুল বেগে আজি বহে যায়, বিজুলি থেকে থেকে চমকায়। যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে সে কথা আজি যেন বলা যায়-- এমন ঘনঘোর বরিষায়॥
তোমাদের দান যশের ডালায় সব-শেষ সঞ্চয় আমার-- নিতে মনে লাগে ভয়॥ এই রূপলোকে কবে এসেছিনু রাতে, গেঁথেছিনু মালা ঝ'রে-পড়া পারিজাতে, আঁধারে অন্ধ-- এ যে গাঁথা তারি হাতে-- কী দিল এ পরিচয়॥ এরে পরাবে কি কলালক্ষ্মীর গলে সাতনরী হারে যেথায় মানিক জ্বলে। একদা কখন অমরার উৎসবে ম্লান ফুলদল খসিয়া পড়িবে কবে, এ আদর যদি লজ্জার পরাভবে সে দিন মলিন হয়॥
রয় যে কাঙাল শূন্য হাতে, দিনের শেষে দেয় সে দেখা নিশীথরাতে স্বপনবেশে॥ আলোয় যারে মলিনমুখে মৌন দেখি আঁধার হলে আঁখিতে তার দীপ্তি একি-- বরণমালা কে যে দোলায় তাহার কেশে॥ দিনের বীণায় যে ক্ষীণ তারে ছিল হেলা ঝঙ্কারিয়া ওঠে যে তাই রাতের বেলা। তন্দ্রাহারা অন্ধকারের বিপুল গানে মন্দ্রি ওঠে সারা আকাশ কী আহ্বানে-- তারার আলোয় কে চেয়ে রয় নির্নিমেষে॥