এমন দিনে তারে বলা যায় এমন ঘনঘোর বরিষায়। এমন দিনে মন খোলা যায়-- এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরোঝরে তপনহীন ঘন তমসায়॥ সে কথা শুনিবে না কেহ আর, নিভৃত নির্জন চারি ধার। দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি, আকাশে জল ঝরে অনিবার-- জগতে কেহ যেন নাহি আর॥ সমাজ সংসার মিছে সব, মিছে এ জীবনের কলরব। কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব-- আঁধারে মিশে গেছে আর সব॥ তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার নামাতে পারি যদি মনোভার। শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে দু কথা বলি যদি কাছে তার তাহাতে আসে যাবে কিবা কার॥ ব্যাকুল বেগে আজি বহে যায়, বিজুলি থেকে থেকে চমকায়। যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে সে কথা আজি যেন বলা যায়-- এমন ঘনঘোর বরিষায়॥
আকাশে দুই হাতে প্রেম বিলায় ও কে! সে সুধা ছড়িয়ে গেল লোকে লোকে ॥ গাছেরা ভরে নিল সবুজ পাতায়, ধরণী ধরে নিল আপন মাথায়। ছেলেরা সকল গায়ে নিল মেখে, পাখিরা পাখায় পাখায় নিল এঁকে। ছেলেরা কুড়িয়ে নিল মায়ের বুকে, মায়েরা দেখে নিল ছেলে মুখে ॥ সে যে ওই অশ্রুধারায় পড়ল গলে। সে যে ওই বিদীর্ণ বীর-হৃদয় হতে বহিল মরণরূপী জীবনস্রোতে। সে যে ওই ভাঙাগড়ার তালে তালে নেচে যায় দেশে দেশে কালে কালে ॥