আমি ভালোবাসি আমার নদীর বালুচর, শরৎকালে যে নির্জনে চকাচকীর ঘর। যেথায় ফুটে কাশ তটের চারি পাশ, শীতের দিনে বিদেশী সব হাঁসের বসবাস। কচ্ছপেরা ধীরে রৌদ্র পোহায় তীরে, দু-একখানি জেলের ডিঙি সন্ধেবেলায় ভিড়ে। আমি ভালোবাসি আমার নদীর বালুচর, শরৎকালে যে নির্জনে চকাচকীর ঘর। তুমি ভালোবাস তোমার ওই ও পারের বন, যেথায় গাঁথা ঘনচ্ছায়া পাতার আচ্ছাদন। যেথায় বাঁকা গলি নদীতে যায় চলি, দুই ধারে তার বেণুবনের শাখায় গলাগলি। সকাল-সন্ধেবেলা ঘাটে বধূর মেলা, ছেলের দলে ঘাটের জলে ভাসে ভাসায় ভেলা। তুমি ভালোবাস তোমার ওই ও পারের বন, যেথায় গাঁথা ঘনচ্ছায়া পাতার আচ্ছাদন। তোমার আমার মাঝখানেতে একটি বহে নদী, দুই তটেরে একই গান সে শোনায় নিরবধি। আমি শুনি শুয়ে বিজন বালু-ভুঁয়ে, তুমি শোন কাঁখের কলস ঘাটের 'পরে থুয়ে। তুমি তাহার গানে বোঝ একটা মানে, আমার কূলে আরেক অর্থ ঠেকে আমার কানে। তোমার আমার মাঝখানেতে একটি বহে নদী, দুই তটেরে একই গান সে শোনায় নিরবধি।
যদি খোকা না হয়ে আমি হতেম কুকুর-ছানা -- তবে পাছে তোমার পাতে আমি মুখ দিতে যাই ভাতে তুমি করতে আমায় মানা? সত্যি করে বল্ আমায় করিস নে মা, ছল -- বলতে আমায় "দূর দূর দূর। কোথা থেকে এল এই কুকুর'? যা মা, তবে যা মা, আমায় কোলের থেকে নামা। আমি খাব না তোর হাতে, আমি খাব না তোর পাতে।
যদি খোকা না হয়ে আমি হতেম তোমার টিয়ে, তবে পাছে যাই মা, উড়ে আমায় রাখতে শিকল দিয়ে? সত্যি করে বল্ আমায় করিস নে মা, ছল-- বলতে আমায় "হতভাগা পাখি শিকল কেটে দিতে চায় রে ফাঁকি'? তবে নামিয়ে দে মা, আমায় ভালোবাসিস নে মা। আমি রব না তোর কোলে, আমি বনেই যাব চলে।