কত-না তুষারপুঞ্জ আছে সুপ্ত হয়ে অগ্রভেদী হিমাদ্রির সুদূর আলয়ে পাষাণপ্রাচীর-মাঝে। হে সিন্ধু মহান, তুমি তো তাদের কারে কর না আহ্বান আপন অতল হতে। আপনার মাঝে আছে তারা অবরুদ্ধ, কানে নাহি বাজে বিশ্বের সংগীত। প্রভাতের রৌদ্রকরে যে তুষার বয়ে যায়, নদী হয়ে ঝরে, বন্ধ টুটি ছুটি চলে,হে সিন্ধু মহান, সেও তো শোনে নি কভু তোমার আহ্বান। সে সুদূর গঙ্গোত্রীর শিখরচূড়ায় তোমার গম্ভীর গান কে শুনিতে পায়! আপন স্রোতের বেগে কী গভীর টানে তোমারে সে খুঁজে পায় সেই তাহা জানে।
আমি এ কেবল মিছে বলি, শুধু আপনার মন ছলি। কঠিন বচন শুনায়ে তোমারে আপন মর্মে জ্বলি। থাক্ তবে থাক্ ক্ষীণ প্রতারণা, কী হবে লুকায়ে বাসনা বেদনা, যেমন আমার হৃদয়-পরান তেমনি দেখাব খুলি। আমি মনে করি যাই দূরে, তুমি রয়েছ বিশ্ব জুড়ে। যত দূরে যাই ততই তোমার কাছাকাছি ফিরি ঘুরে। চোখে চোখে থেকে কাছে নহ তবু, দূরেতে থেকেও দূর নহ কভু, সৃষ্টি ব্যাপিয়া রয়েছ তবুও আপন অন্তঃপুরে। আমি যেমনি করিয়া চাই, আমি যেমনি করিয়া গাই, বেদনাবিহীন ওই হাসিমুখ সমান দেখিতে পাই। ওই রূপরাশি আপনা বিকাশি রয়েছে পূর্ণ গৌরবে ভাসি, আমার ভিখারি প্রাণের বাসনা হোথায় না পায় ঠাঁই। শুধু ফুটন্ত ফুল-মাঝে দেবী, তোমার চরণ সাজে। অভাবকঠিন মলিন মর্ত্য কোমল চরণে বাজে। জেনে শুনে তবু কী ভ্রমে ভুলিয়া আপনারে আমি এনেছি তুলিয়া, বাহিরে আসিয়া দরিদ্র আশা লুকাতে চাহিছে লাজে। তবু থাক্ পড়ে ওইখানে, চেয়ে তোমার চরণ-পানে। যা দিয়েছি তাহা গেছে চিরকাল আর ফিরিবে না প্রাণে। তবে ভালো করে দেখো একবার দীনতা হীনতা যা আছে আমার, ছিন্ন মলিন অনাবৃত হিয়া অভিমান নাহি জানে। তবে লুকাব না আমি আর এই ব্যথিত হৃদয়ভার। আপনার হাতে চাব না রাখিতে আপনার অধিকার। বাঁচিলাম প্রাণে তেয়াগিয়া লাজ, বদ্ধ বেদনা ছাড়া পেল আজ, আশা-নিরাশায় তোমারি যে আমি জানাইনু শত বার।