জননী, কন্যারে আজ বিদায়ের ক্ষণে আপন অতীতরূপ পড়িয়াছে মনে যখন বালিকা ছিলে। মাতৃক্রোড় হতে তোমারে ভাসালো ভাগ্য দূরতর স্রোতে সংসারের। তার পর গেল কত দিন দুঃখে সুখে, বিচ্ছেদের ক্ষত হল ক্ষীণ। এ-জন্মের আরম্ভভূমিকা-- সংকীর্ণ সে প্রথম উষার মতো-- ক্ষণিক প্রদোষে মিলাইল লয়ে তার স্বর্ণ কুহেলিকা। বাল্যে পরেছিলে শুভ্র মাঙ্গল্যের টিকা, সিন্দূররেখায় হল লীন। সে-রেখাটি জীবনের পূর্বভাগ দিল যেন কাটি। আজ সেই ছিন্নখণ্ড ফিরে এল শেষে তোমার কন্যার মাঝে অশ্রুর আবেশে।
যেখানে এসেছি আমি, আমি সেথাকার, দরিদ্র সন্তান আমি দীন ধরণীর। জন্মাবধি যা পেয়েছি সুখদুঃখভার বহু ভাগ্য বলে তাই করিয়াছি স্থির। অসীম ঐশ্বর্যরাশি নাই তোর হাতে, হে শ্যামলা সর্বসহা জননী মৃন্ময়ী। সকলের মুখে অন্ন চাহিস জোগাতে, পারিস নে কত বার-- কই অন্ন কই' কাঁদে তোর সন্তানেরা ম্লান শুষ্ক মুখ। জানি মা গো, তোর হাতে অসম্পূর্ণ সুখ-- যা কিছু গড়িয়া দিস ভেঙে ভেঙে যায়, সব-তাতে হাত দেয় মৃত্যু সর্বভুক, সব আশা মিটাইতে পারিস নে হায় তা বলে কি ছেড়ে যাব তোর তপ্ত বুক!
সে যে পাশে এসে বসেছিল তবু জাগি নি। কী ঘুম তোরে পেয়েছিল হতভাগিনী। এসেছিল নীরব রাতে বীণাখানি ছিল হাতে, স্বপনমাঝে বাজিয়ে গেল গভীর রাগিণী। জেগে দেখি দখিন-হাওয়া পাগল করিয়া গন্ধ তাহার ভেসে বেড়ায় আঁধার ভরিয়া। কেন আমার রজনী যায়-- কাছে পেয়ে কাছে না পায় কেন গো তার মালার পরশ বুকে লাগি নি।