ফুরিয়ে গেল পৌষের দিন; কৌতূহলী ভোরের আলো কুয়াশার আবরণ দিলে সরিয়ে। হঠাৎ দেখি শিশিরে-ভেজা বাতাবি গাছে ধরেছে কচি পাতা; সে যেন আপনি বিস্মিত। একদিন তমসার কূলে বাল্মীকি আপনার প্রথম নিশ্বসিত ছন্দে চকিত হয়েছিলেন নিজে,-- তেমনি দেখলেম ওকে। অনেকদিনকার নিঃশব্দ অবহেলা থেকে অরুণ-আলোতে অকুণ্ঠিত বাণী এনেছে এই কয়টি কিশলয়; সে যেন সেই একটুখানি কথা তুমিই বলতে পারতে, কিন্তু না ব'লে গিয়েছ চলে। সেদিন বসন্ত ছিল অনতিদূরে; তোমার আমার মাঝখানে ছিল আধ-চেনার যবনিকা কেঁপে উঠল সেটা মাঝে মাঝে; মাঝে মাঝে তার একটা কোণ গেল উড়ে; দুরন্ত হয়ে উঠল দক্ষিণ বাতাস, তবু সরাতে পারেনি অন্তরাল। উচ্ছৃঙ্খল অবকাশ ঘটল না; ঘণ্টা গেল বেজে, সায়াহ্নে তুমি চলে গেলে অব্যক্তের অনালোকে।
তোমার মাঝে আমারে পথ ভুলিয়ে দাও গো, ভুলিয়ে দাও। বাঁধা পথের বাঁধন হতে টলিয়ে দাও গো, দুলিয়ে দাও। পথের শেষে মিলবে বাসা সে কভু নয় আমার আশা, যা পাব তা পথেই পাব- দুয়ার আমার খুলিয়ে দাও। কেউ বা ওরা ঘরে ব'সে ডাকে মোরে পুঁথির পাতায়। কেউ বা ওরা অন্ধকারে মন্ত্র প'ড়ে মনকে মাতায়। ডাক শুনেছি সকলখানে সে কথা যে কেউ না মানে; সাহস আমার বাড়িয়ে দিয়ে পরশ তোমার বুলিয়ে দাও।
কারে দূর নাহি কর। যত করি দান তোমারে হৃদয় মন, তত হয় স্থান সবারে লইতে প্রাণে। বিদ্বেষ যেখানে দ্বার হতে কারেও তাড়ায় অপমানে তুমি সেই সাথে যাও; যেথা অহংকার ঘৃণাভরে ক্ষুদ্রজনে রুদ্ধ করে দ্বার সেথা হতে ফির তুমি; ঈর্ষা চিত্তকোণে বসি বসি ছিদ্র করে তোমারি আসনে তপ্ত শূলে। তুমি থাক,যেথায় সবাই সহজে খুঁজিয়া পায় নিজ নিজ ঠাঁই। ক্ষুদ্র রাজা আসে যবে, ভৃত্য উচ্চরবে হাঁকি কহে, "সরে যাও, দূরে যাও সবে।' মহারাজ তুমি যবে এস, সেই সাথে নিখিল জগৎ আসে তোমারি পশ্চাতে।