ওগো মোর না-পাওয়া গো, ভোরের অরুণ-আভাসনে ঘুমে ছুঁয়ে যাও মোর পাওয়ার পাখিরে ক্ষণে ক্ষণে। সহসা স্বপন টুটে তাই সে যে গেয়ে উঠে কিছু তার বুঝি নাহি বুঝি। তাই সে যে পাখা মেলে উড়ে যায় ঘর ফেলে, ফিরে আসে কারে খুঁজি খুঁজি। ওগো মোর না-পাওয়া গো, সায়াহ্নের করুণ কিরণে পূরবীতে ডাক দাও আমার পাওয়ারে ক্ষণে ক্ষণে। হিয়া তাই ওঠে কেঁদে, রাখিতে পারি না বেঁধে, অকারণে দূরে থাকে চেয়ে-- মলিন আকাশতলে যেন কোন্ খেয়া চলে, কে যে যায় সারিগান গেয়ে। ওগো মোর না-পাওয়া গো, বসন্তনিশীথসমীরণে অভিসারে আসিতেছ আমার পাওয়ার কুঞ্জবনে। কে জানালো সে কথা যে গোপন হৃদয়মাঝে আজও তাহা বুঝিতে পারি নি। মনে হল পলে পলে দূর পথে বেজে চলে ঝিল্লিরবে তাহার কিঙ্কিণী। ওগো মোর না-পাওয়া গো, কখন আসিয়া সংগোপনে আমার পাওয়ার বীণা কাঁপাও অঙ্গুলিপরশনে। কার গানে কার সুর মিলে গেছে সুমধুর ভাগ করে কে লইবে চিনে। ওরা এসে বলে, "এ কী, বুঝাইয়া বলো দেখি।' আমি বলি বুঝাতে পারি নে। ওগো মোর না-পাওয়া গো, শ্রাবণের অশান্ত পবনে কদম্ববনের গন্ধে জড়িত বৃষ্টির বরিষনে আমার পাওয়ার কানে জানি নে তো মোর গানে কার কথা বলি আমি কারে। "কী কহ' সে যবে পুছে তখন সন্দেহ ঘুচে-- আমার বন্দনা না-পাওয়ারে।
এই দেহটির ভেলা নিয়ে দিয়েছি সাঁতার গো, এই দু-দিনের নদী হব পার গো। তার পরে যেই ফুরিয়ে যাবে বেলা, ভাসিয়ে দেব ভেলা, তার পরে তার খবর কী যে ধারি নে তার ধার গো, তার পরে সে কেমন আলো, কেমন অন্ধকার গো। আমি যে অজানার যাত্রী সেই আমার আনন্দ। সেই তো বাধায় সেই তো মেটায় দ্বন্দ্ব। জানা আমায় যেমনি আপন ফাঁদে শক্ত করে বাঁধে অজানা সে সামনে এসে হঠাৎ লাগায় ধন্দ, এক-নিমেষে যায় গো ফেঁসে অমনি সকল বন্ধ। অজানা মোর হালের মাঝি, অজানাই তো মুক্তি তার সনে মোর চিরকালের চুক্তি। ভয় দেখিয়ে ভাঙায় আমার ভয় প্রেমিক সে নির্দয়। মানে না সে বুদ্ধিসুদ্ধি বৃদ্ধজনার যুক্তি, মুক্তারে সে মুক্ত করে ভেঙে তাহার শুক্তি। ভাবিস বসে যেদিন গেছে সেদিন কি আর ফিরবে। সেই কূলে কি এই তরী আর ভিড়বে। ফিরবে না রে, ফিরবে না আর, ফিরবে না, সেই কূলে আর ভিড়বে না। সামনেকে তুই ভয় করেছিস, পিছন তোরে ঘিরবে এমনি কি তুই ভাগ্যহারা? ছিঁড়বে বাঁধন ছিঁড়বে। ঘন্টা যে ওই বাজল কবি, হোক রে সভাভঙ্গ, জোয়ার-জলে উঠেছে তরঙ্গ। এখনো সে দেখায় নি তার মুখ, তাই তো দোলে বুক। কোন্ রূপে যে সেই অজানার কোথায় পাব সঙ্গ, কোন্ সাগরের কোন্ কূলে গো কোন্ নবীনের রঙ্গ।