কালকে রাতে মেঘের গরজনে রিমিঝিমি-বাদল-বরিষনে ভাবিতেছিলাম একা একা-- স্বপ্ন যদি যায় রে দেখা আসে যেন তাহার মূর্তি ধ'রে বাদলা রাতে আধেক ঘুমঘোরে। মাঠে মাঠে বাতাস ফিরে মাতি, বৃথা স্বপ্নে কাটল সারা রাতি। হায় রে, সত্য কঠিন ভারী, ইচ্ছামত গড়তে নারি-- স্বপ্ন সেও চলে আপন মতে, আমি চলি আমার শূন্য পথে। কালকে ছিল এমন ঘন রাত, আকুল ধারে এমন বারিপাত, মিথ্যা যদি মধুর রূপে আসত কাছে চুপে চুপে তাহা হলে কাহার হত ক্ষতি স্বপ্ন যদি ধরত সে মূরতি?
যখন দিনের শেষে চেয়ে দেখি সমুখপানে সূর্য ডোবার দেশে মনের মধ্যে ভাবি অস্তসাগর-তলায় গেছে নাবি অনেক সূর্য-ডোবার সঙ্গে অনেক আনাগোনা, অনেক দেখাশোনা, অনেক কীর্তি, অনেক মূর্তি, অনেক দেবালয়, শক্তিমানের অনেক পরিচয়। তাদের হারিয়ে-যাওয়ার ব্যাথায় টান লাগে না মনে, কিন্তু যখন চেয়ে দেখি সামনে সবুজ বনে ছায়ায় চরছে গোরু, মাঝ দিয়ে তার পথ গিয়েছে সরু, ছেয়ে আছে শুক্নো বাঁশের পাতায়, হাট করতে চলে মেয়ে ঘাসের আঁঠি মাথায়, তখন মনে হঠাৎ এসে এই বেদনাই বাজে-- ঠাঁই রবে না কোনোকালেই ঐ যা-কিছুর মাঝে। ঐ যা-কিছুর ছবির ছায়া দুলেছে কোন্কালে শিশুর-চিত্ত-নাচিয়ে-তোলা ছড়াগুলির তালে-- তিরপূর্নির চরে বালি ঝুর্ঝুর্ করে, কোন্ মেয়ে সে চিকন-চিকন চুল দিচ্ছে ঝাড়ি, পরনে তার ঘুরে-পড়া ডুরে একটি শাড়ি। ঐ যা-কিছু ছবির আভাস দেখি সাঁঝের মুখে মর্ত্যধরার পিছু-ডাকা দোলা লাগায় বুকে।