এই দেহটির ভেলা নিয়ে দিয়েছি সাঁতার গো, এই দু-দিনের নদী হব পার গো। তার পরে যেই ফুরিয়ে যাবে বেলা, ভাসিয়ে দেব ভেলা, তার পরে তার খবর কী যে ধারি নে তার ধার গো, তার পরে সে কেমন আলো, কেমন অন্ধকার গো। আমি যে অজানার যাত্রী সেই আমার আনন্দ। সেই তো বাধায় সেই তো মেটায় দ্বন্দ্ব। জানা আমায় যেমনি আপন ফাঁদে শক্ত করে বাঁধে অজানা সে সামনে এসে হঠাৎ লাগায় ধন্দ, এক-নিমেষে যায় গো ফেঁসে অমনি সকল বন্ধ। অজানা মোর হালের মাঝি, অজানাই তো মুক্তি তার সনে মোর চিরকালের চুক্তি। ভয় দেখিয়ে ভাঙায় আমার ভয় প্রেমিক সে নির্দয়। মানে না সে বুদ্ধিসুদ্ধি বৃদ্ধজনার যুক্তি, মুক্তারে সে মুক্ত করে ভেঙে তাহার শুক্তি। ভাবিস বসে যেদিন গেছে সেদিন কি আর ফিরবে। সেই কূলে কি এই তরী আর ভিড়বে। ফিরবে না রে, ফিরবে না আর, ফিরবে না, সেই কূলে আর ভিড়বে না। সামনেকে তুই ভয় করেছিস, পিছন তোরে ঘিরবে এমনি কি তুই ভাগ্যহারা? ছিঁড়বে বাঁধন ছিঁড়বে। ঘন্টা যে ওই বাজল কবি, হোক রে সভাভঙ্গ, জোয়ার-জলে উঠেছে তরঙ্গ। এখনো সে দেখায় নি তার মুখ, তাই তো দোলে বুক। কোন্ রূপে যে সেই অজানার কোথায় পাব সঙ্গ, কোন্ সাগরের কোন্ কূলে গো কোন্ নবীনের রঙ্গ।
হেথা যে গান গাইতে আসা আমার হয় নি সে গান গাওয়া-- আজো কেবলি সুর সাধা, আমার কেবল গাইতে চাওয়া। আমার লাগে নাই সে সুর, আমার বাঁধে নাই সে কথা, শুধু প্রাণেরই মাঝখানে আছে গানের ব্যাকুলতা। আজো ফোটে নাই সে ফুল, শুধু বহেছে এক হাওয়া। আমি দেখি নাই তার মুখ, আমি শুনি নাই তার বাণী, কেবল শুনি ক্ষণে ক্ষণে তাহার পায়ের ধ্বনিখানি। আমার দ্বারের সমুখ দিয়ে সে জন করে আসা-যাওয়া। শুধু আসন পাতা হল আমার সারাটি দিন ধ'র-- ঘরে হয় নি প্রদীপ জ্বালা, তারে ডাকব কেমন ক'রে। আছি পাবার আশা নিয়ে, তারে হয় নি আমার পাওয়া।
ওদের কথায় ধাঁদা লাগে তোমার কথা আমি বুঝি। তোমার আকাশ তোমার বাতাস এই তো সবি সোজাসুজি। হৃদয়-কুসুম আপনি ফোটে, জীবন আমার ভরে ওঠে, দুয়ার খুলে চেয়ে দেখি হাতের কাছে সকল পুঁজি। সকাল-সাঁঝে সুর যে বাজে ভুবনজোড়া তোমার নাটে, আলের জোয়ার বেয়ে তোমার তরী আসে আমার ঘাটে। শুনব কী আর বুঝব কী বা, এই তো দেখি রাত্রিদিবা ঘরেই তোমার আনাগোনা, পথে কী আর তোমায় খুঁজি?