আচ্ছাদন হতে ডেকে লহো মোরে তব চক্ষুর আলোতে। অজ্ঞাত ছিলাম এতদিন পরিচয়হীন-- সেই অগোচরদুঃখভার বহিয়া চলেছি পথে; শুধু আমি অংশ জনতার। উদ্ধার করিয়া আনো, আমারে সম্পূর্ণ করি জানো। যেথা আমি একা সেথায় নামুক তব দেখা। সে মহানির্জন যে গহনে অন্তর্যামী পাতেন আসন, সেইখানে আনো আলো, দেখো মোর সব মন্দ ভালো, যাক লজ্জা ভয়, আমার সমস্ত হোক তব দৃষ্টিময়। ছায়া আমি সবা-কাছে, অস্ফুট আমি-যে, তাই আমি নিজে তাহাদের মাঝে নিজেরে খুঁজিয়া পাই না-যে। তারা মোর নাম জানে, নাহি জানে মান, তারা মোর কর্ম জানে, নাহি জানে মর্মগত প্রাণ। সত্য যদি হই তোমা-কাছে তবে মোর মূল্য বাঁচে, তোমার মাঝারে বিধির স্বতন্ত্র সৃষ্টি জানিব আমারে। প্রেম তব ঘোষিবে তখন অসংখ্য যুগের আমি একান্ত সাধন। তুমি মোরে করো আবিষ্কার, পূর্ণ ফল দেহো মোরে আমার আজন্ম প্রতীক্ষার। বহিতেছি অজ্ঞাতির বন্ধন সদাই, মুক্তি চাই তোমার জানার মাঝে সত্য তব যেথায় বিরাজে।
কার পানে মা, চেয়ে আছ মেলি দুটি করুণ আঁখি। কে ছিঁড়েছে ফুলের পাতা, কে ধরেছে বনের পাখি। কে কারে কী বলেছে গো, কার প্রাণে বেজেছে ব্যথা-- করুণায় যে ভরে এল দুখানি তোর আঁখির পাতা। খেলতে খেলতে মায়ের আমার আর বুঝি হল না খেলা। ফুলের গুচ্ছ কোলে প'ড়ে-- কেন মা এ হেলাফেলা। অনেক দুঃখ আছে হেথায়, এ জগৎ যে দুঃখে ভরা-- তোমার দুটি আঁখির সুধায় জুড়িয়ে গেল নিখিল ধরা। লক্ষ্মী আমায় বল্ দেখি মা, লুকিয়ে ছিলি কোন্ সাগরে। সহসা আজ কাহার পুণ্যে উদয় হলি মোদের ঘরে। সঙ্গে করে নিয়ে এলি হৃদয়-ভরা স্নেহের সুধা, হৃদয় ঢেলে মিটিয়ে যাবি এ জগতের প্রেমের ক্ষুধা। থামো, থামো, ওর কাছেতে ক'য়ো না কেউ কঠোর কথা, করুণ আঁখির বালাই নিয়ে কেউ কারে দিয়ো না ব্যথা। সইতে যদি না পারে ও, কেঁদে যদি চলে যায়-- এ-ধরণীর পাষাণ-প্রাণে ফুলের মতো ঝরে যায়। ও যে আমার শিশিরকণা, ও যে আমার সাঁঝের তারা-- কবে এল কবে যাবে এই ভয়তে হই রে সারা।