আমি ভালোবাসি আমার নদীর বালুচর, শরৎকালে যে নির্জনে চকাচকীর ঘর। যেথায় ফুটে কাশ তটের চারি পাশ, শীতের দিনে বিদেশী সব হাঁসের বসবাস। কচ্ছপেরা ধীরে রৌদ্র পোহায় তীরে, দু-একখানি জেলের ডিঙি সন্ধেবেলায় ভিড়ে। আমি ভালোবাসি আমার নদীর বালুচর, শরৎকালে যে নির্জনে চকাচকীর ঘর। তুমি ভালোবাস তোমার ওই ও পারের বন, যেথায় গাঁথা ঘনচ্ছায়া পাতার আচ্ছাদন। যেথায় বাঁকা গলি নদীতে যায় চলি, দুই ধারে তার বেণুবনের শাখায় গলাগলি। সকাল-সন্ধেবেলা ঘাটে বধূর মেলা, ছেলের দলে ঘাটের জলে ভাসে ভাসায় ভেলা। তুমি ভালোবাস তোমার ওই ও পারের বন, যেথায় গাঁথা ঘনচ্ছায়া পাতার আচ্ছাদন। তোমার আমার মাঝখানেতে একটি বহে নদী, দুই তটেরে একই গান সে শোনায় নিরবধি। আমি শুনি শুয়ে বিজন বালু-ভুঁয়ে, তুমি শোন কাঁখের কলস ঘাটের 'পরে থুয়ে। তুমি তাহার গানে বোঝ একটা মানে, আমার কূলে আরেক অর্থ ঠেকে আমার কানে। তোমার আমার মাঝখানেতে একটি বহে নদী, দুই তটেরে একই গান সে শোনায় নিরবধি।
বাঁশরি আনে আকাশ-বাণী- ধরণী আনমনে কিছু বা ভোলে কিছু বা আধো শোনে। নামিবে রবি অস্তপথে, গানের হবে শেষ-- তখন ফিরে ঘিরিবে তারে সুরের কিছু রেশ। অলস খনে কাঁপায় হাওয়া আধেকখানি-হারিয়ে-যাওয়া গুঞ্জরিত কথা, মিলিয়া প্রজাপতির সাথে রাঙিয়ে তোলে আলোছায়াতে দুইপহরে-রোদ-পোহানো গভীর নীরবতা। হল্দেরঙা-পাতায়-দোলা নাম-ভোলা ও বেদনা-ভোলা বিষাদ ছায়ারূপী ঘোমটা-পরা স্বপনময় দূরদিনের কী ভাষা কয় জানি না চুপিচুপি। জীবনে যারা স্মরণ-হারা তবু মরণ জানে না তারা, উদাসী তারা মর্মবাসী পড়ে না কভু চোখে-- প্রতিদিনের সুখ-দুখেরে অজানা হয়ে তারাই ঘেরে, বাষ্পছবি আঁকিয়া ফেরে প্রাণের মেঘলোকে।