হেথা যে গান গাইতে আসা আমার হয় নি সে গান গাওয়া-- আজো কেবলি সুর সাধা, আমার কেবল গাইতে চাওয়া। আমার লাগে নাই সে সুর, আমার বাঁধে নাই সে কথা, শুধু প্রাণেরই মাঝখানে আছে গানের ব্যাকুলতা। আজো ফোটে নাই সে ফুল, শুধু বহেছে এক হাওয়া। আমি দেখি নাই তার মুখ, আমি শুনি নাই তার বাণী, কেবল শুনি ক্ষণে ক্ষণে তাহার পায়ের ধ্বনিখানি। আমার দ্বারের সমুখ দিয়ে সে জন করে আসা-যাওয়া। শুধু আসন পাতা হল আমার সারাটি দিন ধ'র-- ঘরে হয় নি প্রদীপ জ্বালা, তারে ডাকব কেমন ক'রে। আছি পাবার আশা নিয়ে, তারে হয় নি আমার পাওয়া।
বাগানে ওই দুটো গাছে ফুল ফুটেছে কত যে, ফুলের গন্ধে মনে পড়ে ছিল ফুলের মতো যে। ফুল যে দিত ফুলের সঙ্গে আপন সুধা মাখায়ে, সকাল হত সকাল বেলায় যাহার পানে তাকায়ে, সেই আমাদের ঘরের মেয়ে সে গেছে আজ প্রবাসে, নিয়ে গেছে এখান থেকে সকাল বেলার শোভা সে। একটুখানি মেয়ে আমার কত যুগের পুণ্য যে, একটুখানি সরে গেছে কতখানিই শূন্য যে। বিষ্টি পড়ে টুপুর টুপুর, মেঘ করেছে আকাশে, উষার রাঙা মুখখানি আজ কেমন যেন ফ্যাকাশে। বাড়িতে যে কেউ কোথা নেই, দুয়োরগুলো ভেজানো, ঘরে ঘরে খুঁজে বেড়াই ঘরে আছে কে যেন। ময়নাটি ওই চুপটি করে ঝিমোচ্ছে সেই খাঁচাতে, ভুলে গেছে নেচে নেচে পুচ্ছটি তার নাচাতে। ঘরের-কোণে আপন-মনে শূন্য প'ড়ে বিছানা, কার তরে সে কেঁদে মরে -- সে কল্পনা মিছা না। বইগুলো সব ছড়িয়ে আছে, নাম লেখা তায় কার গো। এম্নি তারা রবে কি হায়, খুলবে না কেউ আর গো। এটা আছে সেটা আছে অভাব কিছু নেই তো -- স্মরণ করে দেয় রে যারে থাকে নাকো সেই তো।