তুমি যত ভার দিয়েছ সে ভার করিয়া দিয়েছ সোজা, আমি যত ভার জমিয়ে তুলেছি সকলি হয়েছে বোঝা। এ বোঝা আমার নামাও বন্ধু, নামাও-- ভারের বেগেতে চলেছি, আমার এ যাত্রা তুমি থামাও। যে তোমার ভার বহে কভু তার সে ভারে ঢাকে না আঁখি, পথে বাহিরিলে জগৎ তারে তো দেয় না কিছুই ফাঁকি। অবারিত আলো ধরে আসি তার হাতে-- বনে পাখি গায়, নদীধারা ধায়, চলে সে সবার সাথে। তুমি কাজ দিলে কাজেরই সঙ্গে দাও যে অসীম ছুটি, তোমার আদেশ আবরণ হয়ে আকাশ লয় না লুটি। বাসনায় মোরা বিশ্বজগৎ ঢাকি-- তোমা-পানে চেয়ে যত করি ভোগ তত আরো থাকে বাকি। আপনি যে দুখ ডেকে আনি সে যে জ্বালায় বজ্রানলে-- অঙ্গার করে রেখে যায়, সেথা কোনো ফল নাহি ফলে। তুমি যাহা দাও সে যে দুঃখের দান, শ্রাবণধারায় বেদনার রসে সার্থক করে প্রাণ। যেখানে যা-কিছু পেয়েছি কেবলি সকলি করেছি জমা-- যে দেখে সে আজ মাগে যে হিসাব, কেহ নাহি করে ক্ষমা। এ বোঝা আমার নামাও বন্ধু, নামাও। ভারের বেগেতে ঠেলিয়া চলেছে, এ যাত্রা মোর থামাও।
১৮১ কাজ সে তো মানুষের, এই কথা ঠিক। কাজের মানুষ, কিন্তু ধিক্ তারে ধিক্॥ অবকাশ কর্ম্মে খেলে আপনারি সঙ্গে, সিন্ধুর স্তব্ধতা খেলে সিন্ধুর তরঙ্গে॥ প্রাণেরে মৃত্যুর ছাপ মূল্য করে দান, প্রাণ দিয়া লভি তাই যাহা মূল্যবান॥ রস যেথা নাই সেথা যত কিছু খোঁচা, মরুভূমে জন্মে শুধু কাঁটাগাছ বোঁচা॥ দর্পণে যাহারে দেখি সেই আমি ছায়া, তারে লয়ে গর্ব্ব করি অপূর্ব্ব এ মায়া॥ আপনি আপনা চেয়ে বড়ো যদি হবে নিজেকে নিজের কাছে নত করো তবে॥ প্রেমেরে যে করিয়াছে ব্যবসার অঙ্গ প্রেম দূরে বসে বসে দেখে তার রঙ্গ॥ দুঃখেরে যখন প্রেম করে শিরোমণি তাহারে আনন্দ বলে চিনি তো তখনি॥ অমৃত যে সত্য, তা'র নাহি পরিমাণ, মৃত্যু তারে নিত্য নিত্য করিছে প্রমাণ॥