সন্ধেবেলায় বন্ধুঘরে জুটল চুপিচুপি গোপেন্দ্র মুস্তুফি। রাত্রে যখন ফিরল ঘরে সবাই দেখে তারিফ করে-- পাগড়িতে তার জুতোজোড়া, পায়ে রঙিন টুপি। এই উপদেশ দিতে এল-- সব করা চাই এলোমেলো, 'মাথায় পায়ে রাখব না ভেদ' চেঁচিয়ে বলে গুপি।
তুমি যত ভার দিয়েছ সে ভার করিয়া দিয়েছ সোজা, আমি যত ভার জমিয়ে তুলেছি সকলি হয়েছে বোঝা। এ বোঝা আমার নামাও বন্ধু, নামাও-- ভারের বেগেতে চলেছি, আমার এ যাত্রা তুমি থামাও। যে তোমার ভার বহে কভু তার সে ভারে ঢাকে না আঁখি, পথে বাহিরিলে জগৎ তারে তো দেয় না কিছুই ফাঁকি। অবারিত আলো ধরে আসি তার হাতে-- বনে পাখি গায়, নদীধারা ধায়, চলে সে সবার সাথে। তুমি কাজ দিলে কাজেরই সঙ্গে দাও যে অসীম ছুটি, তোমার আদেশ আবরণ হয়ে আকাশ লয় না লুটি। বাসনায় মোরা বিশ্বজগৎ ঢাকি-- তোমা-পানে চেয়ে যত করি ভোগ তত আরো থাকে বাকি। আপনি যে দুখ ডেকে আনি সে যে জ্বালায় বজ্রানলে-- অঙ্গার করে রেখে যায়, সেথা কোনো ফল নাহি ফলে। তুমি যাহা দাও সে যে দুঃখের দান, শ্রাবণধারায় বেদনার রসে সার্থক করে প্রাণ। যেখানে যা-কিছু পেয়েছি কেবলি সকলি করেছি জমা-- যে দেখে সে আজ মাগে যে হিসাব, কেহ নাহি করে ক্ষমা। এ বোঝা আমার নামাও বন্ধু, নামাও। ভারের বেগেতে ঠেলিয়া চলেছে, এ যাত্রা মোর থামাও।