চাহনি তাহার, সব কোলাহল হ'লে সারা সন্ধ্যার তিমিরে ভাসা তারা। মৌনখানি সুমধুর মিনতিরে লতায়ে লতায়ে যেন মনের চৌদিকে দেয় ঘিরে; নির্বাক চাহিয়া থাকে, নাহি পায় ভেবে কেমন করিয়া কী-যে দেবে। দুয়ার বাহিরে আসে ধীরে, ক্ষণেক নীরব থেকে চলে যায় ফিরে। নাও যদি কয় কথা মনে যেন ভরি দেয় সুস্নিগ্ধ মমতা। পায়ের চলায় কিছু যেন দান করে ধূলির তলায়। তারে কিছু করিলে জিজ্ঞাসা কিছু বলে, কিছু তবু বাকি থাকে ভাষা। নিঃশব্দে খুলিয়া দ্বার অঞ্চলে আড়াল করি সে যেন কাহার আনিয়াছে সৌভাগ্যের থালি-- নাম কি পিয়ালী।
দিন রাত্রি নাহি মানি, আয় তোরা আয় রে, চির সুখ-রসে রত আমরা হেথায় রে। বসন্তে মলয় বায় একটি মিলায়ে যায়, আরেকটি আসে পুনঃ মধুময় তেমনি, প্রেমের স্বপন হায় একটি যেমনি যায় আরেকটি সুস্বপন জাগি উঠে অমনি। নন্দন কানন যদি এ মরতে চাই রে তবে তা ইহাই রে! তবে তা ইহাই রে। প্রেমের নিশ্বাস হেথা ফেলিতেছি বালিকা, সুরভি নিশ্বাস যথা ফেলে ফুল-কলিকা, তাহাদের আঁখিজল এমন সে সুবিমল এমন সে সমুজল মুকুতার পারা রে, তাদের চুম্বন হাসি দিবে কত সুধারাশি যাদের মধুর এত নয়নের ধারা রে। নন্দনকানন যদি এ মরতে চাই রে তবে তা ইহাই রে। তবে তা ইহাই রে! থাকুক ও-সব সুখ চাই না, গো চাই না, যে সুখ-ভিখারী আমি তাহা যে গো পাই না। দুই হৃদি এক ঠাঁই প্রণয়ে মিলিতে চাই সুখে দুখে যে প্রেমের নাহি হবে শেষ রে। প্রেমে উদাসীন হৃদি শত যুগে যাপে যদি, তার চেয়ে কত ভালো এ সুখ নিমেষ রে! নন্দনকানন যদি এ মরতে চাই রে তবে তা ইহাই রে তবে তা ইহাই রে।