সর্বদেহের ব্যাকুলতা কী বলতে চায় বাণী, তাই আমার এই নূতন বসনখানি। নূতন সে মোর হিয়ার মধ্যে দেখতে কি পায় কেউ। সেই নূতনের ঢেউ অঙ্গ বেয়ে পড়ল ছেয়ে নূতন বসনখানি। দেহ-গানের তান যেন এই নিলেম বুকে টানি। আপনাকে তো দিলেম তারে, তবু হাজার বার নূতন করে দিই যে উপহার। চোখের কালোয় নূতন আলো ঝলক দিয়ে ওঠে, নূতন হাসি ফোটে, তারি সঙ্গে, যতনভরা নূতন বসনখানি অঙ্গ আমার নূতন করে দেয়-যে তারি আনি। চাঁদের আলো চাইবে রাতে বনছায়ার পানে বেদনভরা শুধু চোখের গানে। মিলব তখন বিশ্বমাঝে আমরা দোঁহে একা, যেন নূতন দেখা। তখন আমার অঙ্গ ভরি নূতন বসনখানি। পাড়ে পাড়ে ভাঁজে ভাঁজে করবে কানাকানি। ওগো, আমার হৃদয় যেন সন্ধ্যারি আকাশ, রঙের নেশায় মেটে না তার আশ, তাই তো বসন রাঙিয়ে পরি কখনো বা ধানী, কখনো জাফরানী, আজ তোরা দেখ্ চেয়ে আমার নূতন বসনখানি বৃষ্টি-ধোওয়া আকাশ যেন নবীন আসমানী। অকূলের এই বর্ণ, এ-যে দিশাহারার নীল, অন্য পারের বনের সাথে মিল। আজকে আমার সকল দেহে বইছে দূরের হাওয়া সাগরপানে ধাওয়া। আজকে আমার অঙ্গে আনে নূতন কাপড়খানি বৃষ্টিভরা ঈশান কোণের নব মেঘের বাণী।
সংসারে মোরে রাখিয়াছ যেই ঘরে সেই ঘরে রব সকল দুঃখ ভুলিয়া। করুণা করিয়া নিশিদিন নিজ করে রেখে দিয়ো তার একটি দুয়ার খুলিয়া। মোর সব কাজে মোর সব অবসরে সে দুয়ার রবে তোমারি প্রবেশ-তরে, সেথা হতে বায়ু বহিবে হৃদয়-'পরে চরণ হতে তব পদরজ তুলিয়া। সে দুয়ার খুলি আসিবে তুমি এ ঘরে, আমি বাহিরিব সে দুয়ারখানি খুলিয়া। আর যত সুখ পাই বা না পাই, তবু এক সুখ শুধু মোর তরে তুমি রাখিয়ো। সে সুখ কেবল তোমার আমার প্রভু, সে সুখের 'পরে তুমি জাগ্রত থাকিয়ো। তাহারে না ঢাকে আর যত সুখগুলি, সংসার যেন তাহাতে না দেয় ধূলি, সব কোলাহল হতে তারে তুমি তুলি যতন করিয়া আপন অঙ্কে ঢাকিয়ো। আর যত সুখে ভরুক ভিক্ষাঝুলি, সেই এক সুখ মোর তরে তুমি রাখিয়ো। যত বিশ্বাস ভেঙে ভেঙে যায়, স্বামী, এক বিশ্বাস রহে যেন চিতে লাগিয়া। যে অনলতাপ যখনি সহিব আমি দেয় যেন তাহে তব নাম বুকে দাগিয়া। দুখ পশে যবে মর্মের মাঝখানে তোমার লিখন-স্বাক্ষর যেন আনে, রুক্ষ বচন যতই আঘাত হানে সকল আঘাতে তব সুর উঠে জাগিয়া। শত বিশ্বাস ভেঙে যদি যায় প্রাণে এক বিশ্বাসে রহে যেন মন লাগিয়া।