বুঝি রে, চাঁদের কিরণ পান ক'রে ওর ঢুলু ঢুলু দুটি আঁখি, কাছে ওর যেয়ো না, কথাটি শুধায়ো না, ফুলের গন্ধে মাতাল হয়ে বসে আছে একাকী। ঘুমের মতো মেয়েগুলি চোখের কাছে দুলি দুলি বেড়ায় শুধু নূপুর রনরনি। আধেক মুদি আঁখির পাতা, কার সাথে যে কচ্ছে কথা, শুনছে কাহার মৃদু মধুর ধ্বনি। অতি সুদূর পরীর দেশে-- সেখান থেকে বাতাস এসে কানের কাছে কাহিনী শুনায়। কত কী যে মোহের মায়া, কত কী যে আলোক ছায়া, প্রাণের কাছে স্বপন ঘনায়। কাছে ওর যেয়ো না, কথাটি শুধায়ো না, ঘুমের মেয়ে তরাস পেয়ে যাবে, মৃদু প্রাণে প্রমাদ গণি নূপুরগুলি রনরনি চাঁদের আলোয় কোথায় কে লুকাবে। চলো দূরে নদীর তীরে, বসে সেথায় ধীরে ধীরে একটি শুধু বাঁশরি বাজাও। আকাশেতে হাসবে বিধু, মধুকন্ঠে মৃদু মৃদু একটি শুধু সুখেরই গান গাও। দূর হতে আসিয়া কানে পশিবে সে প্রাণের প্রাণে স্বপনেতে স্বপন ঢালিয়ে। ছায়াময়ী মেয়েগুলি গানের স্রোতে দুলি দুলি, বসে রবে গালে হাত দিয়ে। গাহিতে গাহিতে তুমি বালা গেঁথে রাখো মালতীর মালা। ও যখন ঘুমাইবে, গলায় পরায়ে দিবে স্বপনে মিশিবে ফুলবাস। ঘুমন্ত মুখের 'পরে চেয়ে থেকো প্রেমভরে মুখেতে ফুটিবে মৃদু হাস।
পথে যতদিন ছিনু ততদিন অনেকের সনে দেখা। সব শেষ হল যেখানে সেথায় তুমি আর আমি একা। নানা বসন্তে নানা বরষায় অনেক দিবসে অনেক নিশায় দেখেছি অনেক, সহেছি অনেক, লিখেছি অনেক লেখা-- পথে যতদিন ছিনু ততদিন অনেকের সনে দেখা। কখন যে পথ আপনি ফুরালো, সন্ধ্যা হল যে কবে! পিছনে চাহিয়া দেখিনু কখন চলিয়া গিয়াছে সবে। তোমার নীরব নিভৃত ভবনে জানি না কখন পশিনু কেমনে। অবাক রহিনু আপন প্রাণের নূতন গানের রবে। কখন যে পথ আপনি ফুরালো, সন্ধ্যা হল যে কবে! চিহ্ন কি আছে শ্রান্ত নয়নে অশ্রুজলের রেখা? বিপুল পথের বিবিধ কাহিনী আছে কি ললাটে লেখা? রুধিয়া দিয়েছ তব বাতায়ন, বিছানো রয়েছে শীতল শয়ন, তোমার সন্ধ্যাপ্রদীপ-আলোকে তুমি আর আমি একা। নয়নে আমার অশ্রুজলের চিহ্ন কি যায় দেখা!