মেঘ্লা শ্রাবণের বাদ্লা রাতি, বাহিরে ঝড় বাতাস, জান্লা রুধি ঘরে জ্বালায়ে বাতি বন্ধু মিলি খেলে তাস। বন্ধু পাঁচ জনে বসিয়া গৃহকোণে চিত্ত বড়োই উদাস, কর্ম হাতে নাই, কভু বা উঠে হাই কভু বা করে হা-হুতাশ। বিরস ম্লান-মুখো, মেজাজ বড়ো রুখো, শেষে বা বাধে হাতাহাতি! আকাশ ঢাকা মেঘে, বাতাস রেগেমেগে বাহিরে করে মাতামাতি। অবন বলে ভাই তর্কে কাজ নাই প্রমারা হোক এক বাজি -- সমর মুদি চোখ বলিল তাই হোক সত্য কহে আছি রাজি। বজ্র দিক জুড়ি করিছে হুড়োমুড়ি হরিশ ভয়ে হত-বুলি, গগন এক ধারে কিছু না বলি কারে পলকে ছবি নিল তুলি।
আমার মূর্তি পূর্ণ করি মুক্তি পেল' তোমার শক্তি, রেখায় রেখায় নিত্য শিখায় দীপ্তি পেল তোমার ভক্তি। চক্ষে তোমার প্রাণের মন্ত্র, তাই তো তোমার ধ্যানের দৃষ্টি তোমার রসে আমার রূপে রচিল এই নূতন সৃষ্টি।
"কড়ি ও কোমল' রচনার পূর্বে কাব্যের ভাষা আমার কাছে ধরা দেয়নি। কাঁচা বয়সে মনের ভাবগুলো নূতনত্বের আবেগ নিয়ে রূপ ধরতে চাচ্ছে, কিন্তু যে উপাদানে তাদেরকে শরীরের বাঁধন দিতে পারত তারই অবস্থা তখন তরল; এইজন্যে ওগুলো হয়েছে ঢেউওআলা জলের উপরকার প্রতিবিম্বের মতো আঁকাবাঁকা; ওরা মূর্ত হয়ে ওঠেনি সুতরাং কাব্যের পদবীতে পৌঁছতে পারেনি। সেইজন্য আমার মত এই যে, কড়ি ও কোমলের পর থেকেই আমার কাব্যরচনা ভালো মন্দ সব-কিছু নিয়ে একটা স্পষ্ট সৃষ্টির ধারা অবলম্বন করেছে। প্রভাতসংগীতে যে অবস্থায় আমার প্রথম বিকাশোন্মুখ মন অপরিণত ভাবনা নিয়ে অপরিস্ফুট রচনায় প্রবৃত্ত হয়েছিল, তার কথা আজও আমার মনে আছে। তার পূর্বে সন্ধ্যাসংগীতের পর্বে আমার মনে কেবলমাত্র হৃদয়বেগের গদ্গদভাষী আন্দোলন চলছিল। প্রভাতসংগীতের ঋতুতে আপনা-আপনি দেখা দিতে আরম্ভ করেছে একটা-আধটা মননের রূপ, অর্থাৎ ফুল নয় সে, ফসলের পালা, সেও অশিক্ষিত বিনা চাষের জমিতে।