তুমি আমার আঙিনাতে ফুটিয়ে রাখ ফুল। আমার আনাগোনার পথখানি হয় সৌরভে আকুল। ওগো ওই তোমারি ফুল। ওরা আমার হৃদয়পানে মুখ তুলে যে থাকে। ওরা তোমার মুখের ডাক নিয়ে যে আমারি নাম ডাকে। ওগো ওই তোমারি ফুল। তোমার কাছে কী যে আমি সেই কথাটি হেসে ওরা আকাশেতে ফুটিয়ে তোলে, ছড়ায় দেশে দেশে। ওগো ওই তোমারি ফুল। দিন কেটে যায় অন্যমনে,ওদের মুখে তবু প্রভু, তোমার মুখের সোহাগবাণী ক্লান্ত না হয় কভু। ওগো ওই তোমারি ফুল। প্রাতের পরে প্রাতে ওরা, রাতের পরে রাতে তোমার অন্তবিহীন যতনখানি বহন করে মাথে। ওগো ওই তোমারি ফুল। হাসিমুখে আমার যতন নীরব হয়ে যাচে। তোমার অনেক যুগের পথ-চাওয়াটি ওদের মুখে আছে। ওগো ওই তোমারি ফুল।
এক যে ছিল চাঁদের কোণায় চরকা-কাটা বুড়ী পুরাণে তার বয়স লেখে সাত-শ হাজার কুড়ি। সাদা সুতোয় জাল বোনে সে হয় না বুনন সারা পণ ছিল তার ধরবে জালে লক্ষ কোটি তারা। হেনকালে কখন আঁখি পড়ল ঘুমে ঢুলে, স্বপনে তার বয়সখানা বেবাক গেল ভুলে। ঘুমের পথে পথ হারিয়ে, মায়ের কোলে এসে পূর্ণ চাঁদের হাসিখানি ছড়িয়ে দিল হেসে। সন্ধ্যেবেলায় আকাশ চেয়ে কী পড়ে তার মনে। চাঁদকে করে ডাকাডাকি, চাঁদ হাসে আর শোনে। যে-পথ দিয়ে এসেছিল স্বপন-সাগর তীরে দু-হাত তুলে সে-পথ দিয়ে চায় সে যেতে ফিরে। হেনকালে মায়ের মুখে যেমনি আঁখি তোলে চাঁদে ফেরার পথখানি যে তক্খনি সে ভোলে। কেউ জানে না কোথায় বাসা, এল কী পথ বেয়ে, কেউ জানে না এই মেয়ে সেই আদ্যিকালের মেয়ে। বয়সখানার খ্যাতি তবু রইল জগৎ জুড়ি-- পাড়ার লোকে যে দেখে সেই ডাকে, "বুড়ী বুড়ী"। সব-চেয়ে যে পুরানো সে, কোন্ মন্ত্রের বলে সব-চেয়ে আজ নতুন হয়ে নামল ধরাতলে।