পান্থ তুমি, পান্থজনের সখা হে, পথে চলাই সেই তো তোমায় পাওয়া। যাত্রাপথের আনন্দগান যে গাহে তারি কণ্ঠে তোমারি গান গাওয়া। চায় না সে জন পিছন-পানে ফিরে, বায় না তরী কেবল তীরে তীরে, তুফান তারে ডাকে অকূল নীরে যার পরানে লাগল তোমার হাওয়া। পথে চলাই সেই তো তোমায় পাওয়া। পান্থ তুমি, পান্থজনের সখা হে, পথিক-চিত্তে তোমার তরী বাওয়া। দুয়ার খুলে সমুখ-পানে যে চাহে তার চাওয়া যে তোমার পানে চাওয়া। বিপদ বাধা কিছুই ডরে না সে, রয় না পড়ে কোনো লাভের আশে, যাবার লাগি মন তারি উদাসে-- যাওয়া সে যে তোমার পানে যাওয়া। পথে চলাই সেই তো তোমায় পাওয়া।
ওই তোমার ওই বাঁশিখানি শুধু ক্ষণেক-তরে দাও গো আমার করে। শরৎ-প্রভাত গেল ব'য়ে, দিন যে এল ক্লান্ত হয়ে, বাঁশি-বাজা সাঙ্গ যদি কর আলস-ভরে তবে তোমার বাঁশিখানি শুধু ক্ষণেক-তরে দাও গো আমার করে। আর কিছু নয়, আমি কেবল করব নিয়ে খেলা শুধু একটি বেলা। তুলে নেব কোলের 'পরে, অধরেতে রাখব ধরে, তারে নিয়ে যেমন খুশি যেথা-সেথায় ফেলা-- এমনি করে আপন মনে করব আমি খেলা শুধু একটি বেলা। তার পরে যেই সন্ধে হবে এনে ফুলের ডালা গেঁথে তুলব মালা। সাজাব তায় যূথীর হারে, গন্ধে ভরে দেব তারে, করব আমি আরতি তার নিয়ে দীপের থালা। সন্ধে হলে সাজাব তায় ভরে ফুলের ডালা গেঁথে যূথীর মালা। রাতে উঠবে আধেক শশী তারার মধ্যখানে, চাবে তোমার পানে। তখন আমি কাছে আসি ফিরিয়ে দেব তোমার বাঁশি, তুমি তখন বাজাবে সুর গভীর রাতের তানে-- রাতে যখন আধেক শশী তারার মধ্যখানে চাবে তোমার পানে।
মর্তবাসীদের তুমি যা দিয়েছ প্রভু, মর্তের সকল আশা মিটাইয়া তবু রিক্ত তাহা নাহি হয়। তার সর্বশেষ আপনি খুঁজিয়া ফিরে তোমারি উদ্দেশ। নদী ধায় নিত্যকাজে, সর্ব কর্ম সারি অন্তহীন ধারা তার চরণে তোমারি নিত্য জলাঞ্জলিরূপে ঝরে অনিবার। কুসুম আপন গন্ধে সমস্ত সংসার সম্পূর্ণ করিয়া তবু সম্পূর্ণ না হয়-- তোমারি পূজায় তার শেষ পরিচয়। সংসারে বঞ্চিত করি তব পূজা নহে। কবি আপনার গানে যত কথা কহে নানা জনে লহে তার নানা অর্থ টানি, তোমা-পানে ধায় তার শেষ অর্থখানি।