২০ (mone bhabitechhi jeno osongkhyo)

মনে ভাবিতেছি, যেন অসংখ্য ভাষার শব্দরাজি

ছাড়া পেল আজি,

দীর্ঘকাল ব্যাকরণদুর্গে বন্দী রহি

অকস্মাৎ সারি সারি কুচকাওয়াজের পদক্ষেপে

উঠেছে অধীর হয়ে খেপে।

লঙ্ঘিয়াছে বাক্যের শাসন,

নিয়েছে অবুদ্ধিলোকে অবদ্ধ ভাষণ,

ছিন্ন করি অর্থের শৃঙ্খলপাশ

সাধুসাহিত্যের প্রতি ব্যঙ্গহাস্যে হানে পরিহাসল

সব ছেড়ে অধিকার করে শুধু শ্রুতি —

বিচিত্র তাদের ভঙ্গি, বিচিত্র আকূতি।

বলে তারা, আমরা যে এই ধরণীর

নিশ্বসিত পবনের আদিম ধ্বনির

জন্মেছি সন্তান,

যখনি মানবকন্ঠে মনোহীন প্রাণ

নাড়ীর দোলায় সদ্য জেগেছে নাচিয়া

উঠেছি বাঁচিয়া।

শিশুকন্ঠে আদিকাব্যে এনেছি উচ্ছলি

অস্তিত্বের প্রথম কাকলি।

গিরিশিরে যে পাগল-ঝোরা

শ্রাবণের দূত, তারি আত্মীয় আমরা

আসিয়াছি লোকালয়ে

সৃষ্টির ধ্বনির মন্ত্র লয়ে।

মর্মরমুখর বেগে

যে ধ্বনির কলোৎসব অরণ্যের পল্লবে পল্লবে,

যে ধ্বনি দিগন্তে করে ঝড়ের ছন্দের পরিমাপ,

নিশান্তের জাগায় যাহা প্রভাতের প্রকান্ড প্রলাপ,

সে ধ্বনির ক্ষেত্র হতে হরিয়া করেছে পদানত

বন্য ঘোটকের মতো

মানুষ শব্দেরে তার জটিল নিয়মসূত্রজালে

বার্তাবহনের লাগি অনাগত দূর দেশে কালে।

বল্গাবদ্ধ-শব্দ-অশ্বে চড়ি

মানুষ করেছে দ্রুত কালের মন্থর যত ঘড়ি।

জড়ের অচল বাধা তর্কবেগে করিয়া হরণ

অদৃশ্য রহস্যলোকে গহনে করেছে সঞ্চরণ,

ব্যূহে বঁধি শব্দ-অক্ষৌহিণী

প্রতি ক্ষণে মূঢ়তার আক্রমণ লইতেছি জিনি।

কখনো চোরের মতো পশে ওরা স্বপ্নরাজ্যতলে,

ঘুমের ভাটার জলে

নাহি পায় বাধা —

যাহা-তাহা নিয়ে আসে, ছন্দের বাঁধনে পড়ে বাঁধা,

তাই দিয়ে বুদ্ধি অন্যমনা

করে সেই শিল্পের রচনা

সূত্র যার অসংলগ্ন স্খলিত শিথিল,

বিধির সৃষ্টির সাথে নারাখে একান্ত তার মিল;

যেমন মাতিয়া উঠে দশ-বিশ কুকুরের ছানা —

এ ওর ঘাড়েতে চড়ে, কোনো উদ্দ্যেশ্যের নাই মানা,

কে কাহারে লাগায় কামড়,

জাগায় ভীষণ শব্দে গর্জনের ঝড়,

সে কামড়ে সে গর্জনে কোনো অর্থ নাই হিংস্রতার,

উদ্দাম হইয়া উঠে শুধু ধ্নি শুধু ভঙ্গি তার।

মনে মনে দেখিতেছি, সারা বেলা ধরি

দলে দলে শব্দ ছোটে অর্থ ছিন্ন করি —

আকাশে আকাশে যেন বাজে,

আগ‌্ডুম বাগ‌্ডুম ঘোড়াডুম সাজে।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

Rendition

Please Login first to submit a rendition. Click here for help.