সিউড়িতে হরেরাম মৈত্তির পাঁজি দেখে সতেরোই চৈত্তির। বলে, আজ যেতে হবে মথুরায়। সেথা তার মামা আছে সতু রায়। বেস্পতিবারে গাড়ি চ'ড়ে তার চাকা ভাঙে নরসিংগড়ে তার। তাই তার যাত্রাটা ঘুরুলে, ফিরে এসে চলে গেল সুরুলে। ঠিক হল যেতে হবে পেশোয়ার, সেথা আছে সেজো মাসি মেসো আর। এসে দেখে-একা আছে বউ সে, মেসো গেছে পানিপথে পৌষে। হাথুয়ার কাছাকাছি না যেতেই, বাঙালি সে ধরা পড়ে সাজেতেই। চোখ রাঙা ক'রে বলে দারোগা, থানামে লে কর্ হম মারো গা। ছোটো ভাই বেঁধে চিঁড়ে মুড়কি সন্ন্যাসী হয়ে গেল রুড়কি। ঠোক্কর খেয়ে পড়ে বোঁচকায়, কুক্ষণে পা দুখানা মোচকায়। শেষে গেল সুলতানপুরে সে, গান ধরে মূলতান সুরে সে। বেলাশেষে এল যবে বাম্ড়ায় কী ভীষণ মশা তাকে কামড়ায়। বুঝলে সে শান্ত যে হওয়া দায়, গোরুর গাড়িতে চলে নওয়াদায়। গোরুটা পড়ল মুখ থুবড়ি ক্রোশ দুই থাকতেই ধুবড়ি। কাটিহারে তুলে তাকে ধরল, তখন সে পেট ফুলে মরল। শুনেছে তিসির খুব নামো দর, তাই পাড়ি দিতে গেল দামোদর। দামোদরে বুধুরাম খেয়া দেয়, চেপে বসে ডেপুটির পেয়াদায়। শংকর ভোরবেলা চুঁচড়োয়। হাউ-হাউ শব্দে গা মুচড়োয়। নাড়াজোলে বড়োবাবু তখুনি শুরু করে বংশুকে বকুনি। বংশুর যত হোক খাটো আয়, তবু তার বিয়ে হবে কাটোয়ায়। বাঁধা হুঁকো বাঁধা নিয়ে খড়দার ধার দিলে মতিরাম সর্দার। "শাঁখা চাই' বলতেই শাঁখারি বলে, শাঁখ আছে তিন টাকারই। দর-কষাকষি নিয়ে অবশেষ পুলিসথানায় হল সব শেষ। সাসারামে চলে গেল লোক তার খুঁজে যদি পাওয়া যায় মোক্তার। সাক্ষীর খোঁজে গেল চেউকি, গাঁজাখোর আছে সেথা কেউ কি। সাথে নিয়ে ভুলুদা ও শশিদি অনুকূল চলে গেছে জসিদি। পথে যেতে বহু দুখ ভুগে রে খোঁড়া ঘোড়া বেচে এল মুঙেরে। মা ও দিকে বাতে তার পা খুঁড়ায়, পড়ে আছে সাত দিন বাঁকুড়ায়। ডক্তার তিনকড়ি সাণ্ডেল বদলি করেছে বাসা বাণ্ডেল। তাই লোক পাঠায় কোদার্মায় চিঠি লিখে দিল সে ভোঁদার মায়। সাতক্ষীরা এল চুপিচুপি সে, তার পরে গেল পাঁচথুপি সে। সেখানেতে মাছি প'ল ভাতে তার, ঝগড়া হোটেলবাবু সাথে তার। অতুল গিয়েছে কবে নাসিকে, সঙ্গে নিয়েছে তার মাসিকে। রাঁধবার লোক আছে মাদ্রাজি সাতটাকা মাইনেয় আধ-রাজি। লালচাঁদ যেতে যেতে পাকুড়ে খিদেটা মেটায় শসা কাঁকুড়ে। পৌঁছিয়ে বাহাদুরগঞ্জে হাঁসফাঁস করে তার মন-যে। বাসা খুঁজে সাথি তার কাঙলা খুলনায় পেল এক বাঙলা। শুধু একখানা ভাঙা চৌকি, এখানেই থাকে মেজো বউ কি। নেমে গেল যেথা কানুজংশন, ভিমরুলে করে দিল দংশন। ডাক্তারে বলে চুন লাগাতে জ্বালাটাকে চায় যদি ভাগাতে। চুন কিনতে সে গেল কাটনি, কিনে এল আমড়ার চাটনি। বিকানিরে পড়ল সে নাকালে, উটে তাকে কী বিষম ঝাঁকালে। বাড়িভাড়া করেছিল শ্বশুরই, তাই খুশি মনে গেল মশুরি। শ্বশুর উধাও হল না ব'লে, জামাই কি ছাড়া পাবে তা ব'লে। জায়গা পেয়েছে মালগাড়িতে, হাত সে বুলাতেছিল দাড়িতে, ঝাঁকা থেকে মুর্গিটা নাকে তার ঠোকর মেরেছে কোন্ ফাঁকে তার। নাকের গিয়েছে জাত রটে যায়, গাঁয়ের মোড়ল সব চটে যায়। কানপুর হতে এল পণ্ডিত, বলে এরে করা চাই দণ্ডিত। লাশা হতে শ্বেত কাক খুঁজিয়া নাসাপথে পাখা দাও গুঁজিয়া। হাঁচি তবে হবে শতশতবার, নাক তার শুচি হবে ততবার। তার পরে হল মজা ভরপুর যখন সে গেল মজাফরপুর। শালা ছিল জমাদার থানাতে, ভোজ ছিল মোগলাই খানাতে। জৌনপুরি কাবাবের গন্ধে ভুরভুর করে সারা সন্ধে। দেহটা এমনি তার তাতালে যেতে হল মেয়ো-হাঁসপাতালে। তার পরে কী যে'হল শেষটা খবর না পাই করে চেষ্টা।
তোমরা নিশি যাপন করো, এখনো রাত রয়েছে ভাই, আমায় কিন্তু বিদায় দেহো-- ঘুমোতে যাই, ঘুমোতে যাই। মাথার দিব্য, উঠো না কেউ আগ বাড়িয়ে দিতে আমায়-- চলছে যেমন চলুক তেমন, হঠাৎ যেন গান না থামায়। আমার যন্ত্রে একটি তন্ত্রী একটু যেন বিকল বাজে, মনের মধ্যে শুনছি যেটা হাতে সেটা আসছে না যে। একেবারে থামার আগে সময় রেখে থামতে যে চাই-- আজকে কিছু শ্রান্ত আছি, ঘুমোতে যাই, ঘুমোতে যাই। আঁধার-আলোয় সাদায়-কালোয় দিনটা ভালোই গেছে কাটি, তাহার জন্যে কারো সঙ্গে নাইকো কোনো ঝগড়াঝাঁটি। মাঝে মাঝে ভেবেছিলুম একটু-আধটু এটা-ওটা বদল যদি পারত হতে থাকত নাকো কোনো খোঁটা। বদল হলে কখন মনটা হয়ে পড়ত ব্যতিব্যস্ত, এখন যেমন আছে আমার সেইটে আবার চেয়ে বসত। তাই ভেবেছি দিনটা আমার ভালোই গেছে কিছু না চাই-- আজকে শুধু শ্রান্ত আছি, ঘুমোতে যাই, ঘুমোতে যাই।
খুদিরাম ক'সে টান দিল থেলো হুঁকোতে-- গেল সারবান কিছু অন্তরে ঢুকোতে। অবশেষে হাঁড়ি শেষ করি রসগোল্লার রোদে বসে খুদুবাবু গান ধরে মোল্লার; বলে, 'এতখানি রস দেহ থেকে চুকোতে হবে তাকে ধোঁয়া দিয়ে সাত দিন শুকোতে।'