তৃণাদপি সুনীচেন তরোরিব সহিষ্ণুনা-- জানিতাম দীনতার এই শেষ দশা, আমি স্বপ্নে দেখিলাম হয়ে গেছি মশা! কী হল যে দশা-- মধ্যরাত্রে স্বপ্নে আমি হয়ে গেছি মশা। দীন হতে দীন আমি ক্ষীণ হতে ক্ষীণ-- একমাত্র নাম জপ করেছি ভরসা। হিংস্র নীতি নাহি আর, অতি শান্ত নির্বিকার ভক্তের নাসাগ্র-'পরে স্তব্ধ হয়ে বসা-- কী হল যে দশা! মধুর মাশবী বেণু নীরব সহসা। পাখা করি নাড়াচাড়া, ভোঁ ভোঁ শব্দে নাই সাড়া-- শুধু "রাম রাম' ধ্বনি ডানা হতে খসা, হেন হীন দশা।
ভেবেছিলাম চেয়ে নেব, চাই নি সাহস করে-- সন্ধেবেলায় যে মালাটি গলায় ছিলে পরে-- আমি চাই নি সাহস করে। ভেবেছিলাম সকাল হলে যখন পারে যাবে চলে ছিন্ন মালা শয্যাতলে রইবে বুঝি পড়ে। তাই আমি কাঙালের মতো এসেছিলেম ভোরে-- তবু চাই নি সাহস করে। এ তো মালা নয় গো, এ যে তোমার তরবারি। জ্বলে ওঠে আগুন যেন, বজ্র-হেন ভারী-- এ যে তোমার তরবারি। তরুণ আলো জানলা বেয়ে পড়ল তোমার শয়ন ছেয়ে, ভোরের পাখি শুধায় গেয়ে "কী পেলি তুই নারী'। নয় এ মালা, নয় এ থালা, গন্ধজলের ঝারি, এ যে ভীষণ তরবারি। তাই তো আমি ভাবি বসে এ কী তোমার দান। কোথায় এরে লুকিয়ে রাখি নাই যে হেন স্থান। ওগো, এ কী তোমার দান। শক্তিহীনা মরি লাজে, এ ভূষণ কি আমায় সাজে। রাখতে গেলে বুকের মাঝে ব্যথা যে পায় প্রাণ। তবু আমি বইব বুকে এই বেদনার মান-- নিয়ে তোমারি এই দান। আজকে হতে জগৎমাঝে ছাড়ব আমি ভয়, আজ হতে মোর সকল কাজে তোমার হবে জয়-- আমি ছাড়ব সকল ভয়। মরণকে মোর দোসর করে রেখে গেছ আমার ঘরে, আমি তারে বরণ ক'রে রাখব পরান-ময়। তোমার তরবারি আমার করবে বাঁধন ক্ষয়। আমি ছাড়ব সকল ভয়। তোমার লাগি অঙ্গ ভরি করব না আর সাজ। নাই-বা তুমি ফিরে এলে ওগো হৃদয়রাজ। আমি করব না আর সাজ। ধুলায় বসে তোমার তরে কাঁদব না আর একলা ঘরে, তোমার লাগি ঘরে-পরে মানব না আর লাজ। তোমার তরবারি আমায় সাজিয়ে দিল আজ, আমি করব না আর সাজ।