জীবন-স্রোতে ঢেউয়ের 'পরে কোন্-আলো ওই বেড়ায় দুলে? ক্ষণে ক্ষণে দেখি যে তাই বসে বসে বিজন কূলে। ভাসে তবু যায় না ভেসে, হাসে আমার কাছে এসে, দু-হাত বাড়াই ঝাঁপ দিতে চাই মনে করি আনব তুলে। শান্ত হ রে শান্ত হ মন, ধরতে গেলে দেয় না ধরা-- নয় সে মণি নয় সে মানিক নয় সে কুসুম ঝরে-পড়া। দূরে কাছে আগে পাছে, মিলিয়ে আছে ছেয়ে আছে, জীবন হতে ছানিয়ে তারে তুলতে গেলে মরবি ভুলে।
নামহারা এই নদীর পারে ছিলে তুমি বনের ধারে বলে নি কেউ আমাকে। শুধু কেবল ফুলের বাসে মনে হ'ত খবর আসে উঠত হিয়া চমকে। শুধু যেদিন দখিন হাওয়ায় বিরহ-গান মনকে গাওয়ায় পরান-উন্মাদনি, পাতায় পাতায় কাঁপন ধরে, দিগন্তরে ছড়িয়ে পড়ে বনান্তরের কাঁদনি, সেদিন আমার লাগে মনে আছ যেন কাছের কোণে একটুখানি আড়ালে, জানি যেন সকল জানি, ছুঁতে পারি বসনখানি একটুকু হাত বাড়ালে। এ কী গভীর, এ কী মধুর, এ কী হাসি পরান-বঁধুর এ কী নীরব চাহনি, এ কী ঘন গহন মায়া, এ কী স্নিগ্ধ শ্যামল ছায়া, নয়ন-অবগাহনি। লক্ষ তারের বিশ্ববীণা এই নীরবে হয়ে লীনা নিতেছে সুর কুড়ায়ে, সপ্তলোকের আলোকধারা এই ছায়াতে হল হারা গেল গো তাপ জুড়ায়ে। সকল রাজার রতন-সজ্জা লুকিয়ে গেল পেয়ে লজ্জা বিনা-সাজের কী বেশে। আমার চির-জীবনেরে লও গো তুমি লও গো কেড়ে একটি নিবিড় নিমেষে।