যদি তোমার দেখা না পাই প্রভু, এবার এ জীবনে তবে তোমায় আমি পাই নি যেন সে কথা রয় মনে। যেন ভুলে না যাই, বেদনা পাই শয়নে স্বপনে। এ সংসারের হাটে আমার যতই দিবস কাটে, আমার যতই দু হাত ভরে ওঠে ধনে, তবু কিছুই আমি পাই নি যেন সে কথা রয় মনে। যেন ভুলে না যাই, বেদনা পাই শয়নে স্বপনে। যদি আলসভরে আমি বসি পথের 'পরে, যদি ধূলায় শয়ন পাতি সযতনে, যেন সকল পথই বাকি আছে সে কথা রয় মনে। যেন ভুলে না যাই, বেদনা পাই শয়নে স্বপনে। যতই উঠে হাসি, ঘরে যতই বাজে বাঁশি, ওগো যতই গৃহ সাজাই আয়োজনে, যেন তোমায় ঘরে হয় নি আনা সে কথা রয় মনে। যেন ভুলে না যাই, বেদনা পাই শয়নে স্বপনে।
এ আমির আবরণ সহজে স্খলিত হয়ে যাক; চৈতন্যের শুভ্র জ্যোতি ভেদ করি কুহেলিকা সত্যের অমৃত রূপ করুক প্রকাশ। সর্বমানুষের মাঝে এক চিরমানবের আনন্দকিরণ চিত্তে মোর হোক বিকীরিত। সংসারের ক্ষুব্ধতার স্তব্ধ ঊর্ধ্বলোকে নিত্যের যে শান্তিরূপ তাই যেন দেখে যেতে পারি, জীবনের জটিল যা বহু নিরর্থক, মিথ্যার বাহন যাহা সমাজের কৃত্রিম মূল্যেই, তাই নিয়ে কাঙালের অশান্ত জনতা দূরে ঠেলে দিয়ে এ জন্মের সত্য অর্থ স্পষ্ট চোখে জেনে যাই যেন সীমা তার পেরোবার আগে।
কারে দিব দোষ বন্ধু, কারে দিব দোষ! বৃথা কর আস্ফালন, বৃথা কর রোষ। যারা শুধু মরে কিন্তু নাহি দেয় প্রাণ, কেহ কভু তাহাদের করে নি সম্মান। যতই কাগজে কাঁদি, যত দিই গালি, কালামুখে পড়ে তত কলঙ্কের কালি। যে তোমারে অপমান করে অহর্নিশ তারি কাছে তারি 'পরে তোমার নালিশ! নিজের বিচার যদি নাই নিজহাতে, পদাঘাত খেয়ে যদি না পার ফিরাতে-- তবে ঘরে নতশিরে চুপ করে থাক্, সাপ্তাহিকে দিগ্বিদিকে বাজাস নে ঢাক। একদিকে অসি আর অবজ্ঞা অটল, অন্য দিকে মসী আর শুধু অশ্রুজল।