"সাত-আটটে সাতাশ," আমি বলেছিলাম বলে গুরুমশায় আমার 'পরে উঠল রাগে জ্বলে। মা গো, তুমি পাঁচ পয়সায় এবার রথের দিনে সেই যে রঙিন পুতুলখানি আপনি দিলে কিনে খাতার নিচে ছিল ঢাকা; দেখালে এক ছেলে, গুরুমশায় রেগেমেগে ভেঙে দিলেন ফেলে। বল্লেন, "তোর দিনরাত্তির কেবল যত খেলা। একটুও তোর মন বসে না পড়াশুনার বেলা!" মা গো, আমি জানাই কাকে? ওঁর কি গুরু আছে? আমি যদি নালিশ করি এক্খনি তাঁর কাছে? কোনোরকম খেলার পুতুল নেই কি, মা, ওঁর ঘরে সত্যি কি ওঁর একটুও মন নেই পুতুলের 'পরে? সকালসাঁজে তাদের নিয়ে করতে গিয়ে খেলা কোনো পড়ায় করেন নি কি কোনোরকম হেলা? ওঁর যদি সেই পুতুল নিয়ে ভাঙেন কেহ রাগে, বল দেখি, মা, ওঁর মনে তা কেমনতরো লাগে?
যেন শেষ গানে মোর সব রাগিণী পূরে-- আমার সব আনন্দ মেলে তাহার সুরে। যে আনন্দে মাটির ধরা হাসে অধীর হয়ে তরুলতায় ঘাসে, যে আনন্দে দুই পাগলের মতো জীবন-মরণ বেড়ায় ভুবন ঘুরে-- সেই আনন্দ মেলে তাহার সুরে। যে আনন্দ আসে ঝড়ের বেশে, ঘুমন্ত প্রাণ জাগায় অট্ট হেসে। যে আনন্দ দাঁড়ায় আঁখিজলে দুঃখ-ব্যথার রক্তশতদলে, যা আছে সব ধুলায় ফেলে দিয়ে যে আনন্দে বচন নাহি ফুরে সেই আনন্দ মেলে তাহার সুরে।