শালিখটার কী হল তাই ভাবি। একলা কেন থাকে দলছাড়া। প্রথম দিন দেখেছিলেম শিমুল গাছের তলায়, আমার বাগানে, মনে হল একটু যেন খুঁড়িয়ে চলে। তার পরে ওই রোজ সকালে দেখি-- সঙ্গীহারা, বেড়ায় পোকা শিকার ক'রে। উঠে আসে আমার বারান্দায়-- নেচে নেচে করে সে পায়চারি, আমার 'পরে একটুকু নেই ভয়। কেন এমন দশা। সমাজের কোন্ শাসনে নির্বাসনের পালা, দলের কোন্ অবিচারে জাগল অভিমান। কিছু দূরেই শালিখগুলো করছে বকাবকি, ঘাসে ঘাসে তাদের লাফালাফি, উড়ে বেড়ায় শিরীষ গাছের ডালে ডালে-- ওর দেখি তো খেয়াল কিছুই নেই। জীবনে ওর কোন্খানে যে গাঁঠ পড়েছে সেই কথাটাই ভাবি। সকালবেলার রোদে যেন সহজ মনে আহার খুঁটে খুঁটে ঝরে-পড়া পাতার উপর লাফিয়ে বেড়ায় সারাবেলা। কারো উপর নালিশ কিছু আছে মনে হয় না একটুও তা। বৈরাগ্যের গর্ব তো নেই ওর চলনে, কিম্বা দুটো আগুন-জ্বলা চোখ। কিন্তু ওকে দেখি নি তো সন্ধেবেলায়-- একলা যখন যায় বাসাতে ডালের কোণে, ঝিল্লি যখন ঝিঁ ঝিঁ করে অন্ধকারে, হাওয়ায় আসে বাঁশের পাতার ঝর্ঝরানি। গাছের ফাঁকে তাকিয়ে থাকে ঘুমভাঙানো সঙ্গীবিহীন সন্ধ্যাতারা।
দুটি বোন তারা হেসে যায় কেন যায় যবে জল আনতে? দেখেছি কি তারা পথিক কোথায় দাঁড়িয়ে পথের প্রান্তে? ছায়ায় নিবিড় বনে যে আছে আঁধার কোণে তারে যে কখন কটাক্ষে চায় কিছু তো পারি নে জানতে। দুটি বোন তারা হেসে যায় কেন যায় যবে জল আনতে? দুটি বোন তারা করে কানাকানি কী না জানি জল্পনা! গুঞ্জনধ্বনি দূর হতে শুনি, কী গোপন মন্ত্রণা! আসে যবে এইখানে চায় দোঁহে দোঁহাপানে, কাহারো মনের কোনো কথা তারা করেছে কি কল্পনা? দুটি বোন তারা করে কানাকানি কী না জানি জল্পনা! এইখানে এসে ঘট হতে কেন জল উঠে উচ্ছলি? চপল চক্ষে তরল তারকা কেন উঠে উজ্জ্বলি? যেতে যেতে নদীপথে জেনেছ কি কোনোমতে কাছে কোথা এক আকুল হৃদয় দুলে উঠে চঞ্চলি? এইখানে এসে ঘট হতে জল কেন উঠে উচ্ছলি? দুটি বোন তারা হেসে যায় কেন যায় যবে জল আনতে? বটের ছায়ায় কেহ কি তাদের পড়েছে চোখের প্রান্তে? কৌতুকে কেন ধায় সচকিত দ্রুত পায়? কলসে কাঁকন ঝলকি ঝনকি ভোলায় রে দিক্ভ্রান্তে। দুটি বোন তারা হেসে যায় কেন যায় যবে জল আনতে?