তোমারে শতধা করি ক্ষুদ্র করি দিয়া মাটিতে লুটায় যারা তৃপ্ত-সুপ্ত হিয়া সমস্ত ধরণী আজি অবহেলাভরে পা রেখেছে তাহাদের মাথার উপরে। মনুষ্যত্ব তুচ্ছ করি যারা সারাবেলা তোমারে লইয়া শুধু করে পূজা-খেলা মুগ্ধভাবভোগে, সেই বৃদ্ধ শিশুদল সমস্ত বিশ্বের আজি খেলার পুত্তল। তোমারে আপন-সাথে করিয়া সমান যে খর্ব বামনগণ করে অবমান কে তাদের দিবে মান! নিজ মন্ত্রস্বরে তোমারেই প্রাণ দিতে যারা স্পর্ধা করে কে তাদের দিবে প্রাণ! তোমারেও যারা ভাগ করে, কে তাদের দিবে ঐক্যধারা!
এই দুয়ারটি খোলা। আমার খেলা খেলবে বলে আপনি হেথায় আস চলে ওগো আপন-ভোলা। ফুলের মালা দোলে গলে, পুলক লাগে চরণতলে কাঁচা নবীন ঘাসে। এসো আমার আপন ঘরে, ব'সো আমার আসন-'পরে লহ আমার পাশে। এমনিতরো লীলার বেশে যখন তুমি দাঁড়াও এসে দাও আমারে দোলা। ওঠে হাসি নয়নবারি, তোমায় যখন চিনতে নারি ওগো আপন-ভোলা। কত রাতে, কত প্রাতে, কত গভীর বরষাতে, কত বসন্তে, তোমায় আমায় সকৌতুকে কেটেছে দিন দুঃখে সুখে কত আনন্দে। আমার পরশ পাবে বলে আমায় তুমি নিলে কোলে কেউ তো জানে না তা। রইল আকাশ অবাক মানি, করল কেবল কানাকানি বনের লতাপাতা। মোদের দোঁহার সেই কাহিনী ধরেছে আজ কোন্ রাগিণী ফুলের সুগন্ধে? সেই মিলনের চাওয়া-পাওয়া গেয়ে বেড়ায় দখিন হাওয়া কত বসন্তে। মাঝে মাঝে ক্ষণে ক্ষণে যেন তোমায় হল মনে ধরা পড়েছ। মন বলেছে "তুমি কে গো, চেনা মানুষ চিনি নে গো, কী বেশ ধরেছ?" রোজ দেখেছি দিনের কাজে পথের মাঝে ঘরের মাঝে করছ যাওয়া-আসা; হঠাৎ কবে এক নিমেষে তোমার মুখের সামনে এসে পাই নে খুঁজে ভাষা। সেদিন দেখি পাখির গানে কী যে বলে কেউ না জানে- কী গুণ করেছ। চেনা মুখের ঘোমটা-আড়ে অচেনা সেই উঁকি মারে ধরা পড়েছ।