জগতের মাঝখানে যুগে যুগে হইতেছে জমা সুতীব্র অক্ষমা। অগোচরে কোনোখানে একটি রেখার হলে ভুল দীর্ঘকালে অকস্মাৎ আপনারে করে সে নির্মূল। ভিত্তি যার ধ্রুব বলে হয়েছিল মনে তলে তার ভূমিকম্প টলে ওঠে প্রলয়নর্তনে। প্রাণী কত এসেছিল দলে দলে জীবনের রঙ্গভূমে অপর্যাপ্ত শক্তির সম্বলে-- সে শক্তিই ভ্রম তার, ক্রমেই অসহ্য হয়ে লুপ্ত করে দেয় মহাভার। কেহ নাহি জানে, এ বিশ্বের কোন্খানে প্রতি ক্ষণে জমা দারুণ অক্ষমা। দৃষ্টির অতীত ত্রুটি করিয়া ভেদন সম্বন্ধের দৃঢ় সূত্র করিছে ছেদন; ইঙ্গিতের স্ফুলিঙ্গের ভ্রম পশ্চাতে ফেরার পথ চিরতরে করিছে দুর্গম। দারুণ ভাঙন এ যে পূর্ণেরই আদেশে; কী অপূর্ব সৃষ্টি তার দেখা দিবে শেষে-- গুঁড়াবে অবাধ্য মাটি, বাধা হবে দূর, বহিয়া নূতন প্রাণ উঠিবে অঙ্কুর। হে অক্ষমা, সৃষ্টির বিধানে তুমি শক্তি যে পরমা; শান্তির পথের কাঁটা তব পদপাতে বিদলিত হয়ে যায় বারবার আঘাতে আঘাতে।
আচ্ছাদন হতে ডেকে লহো মোরে তব চক্ষুর আলোতে। অজ্ঞাত ছিলাম এতদিন পরিচয়হীন-- সেই অগোচরদুঃখভার বহিয়া চলেছি পথে; শুধু আমি অংশ জনতার। উদ্ধার করিয়া আনো, আমারে সম্পূর্ণ করি জানো। যেথা আমি একা সেথায় নামুক তব দেখা। সে মহানির্জন যে গহনে অন্তর্যামী পাতেন আসন, সেইখানে আনো আলো, দেখো মোর সব মন্দ ভালো, যাক লজ্জা ভয়, আমার সমস্ত হোক তব দৃষ্টিময়। ছায়া আমি সবা-কাছে, অস্ফুট আমি-যে, তাই আমি নিজে তাহাদের মাঝে নিজেরে খুঁজিয়া পাই না-যে। তারা মোর নাম জানে, নাহি জানে মান, তারা মোর কর্ম জানে, নাহি জানে মর্মগত প্রাণ। সত্য যদি হই তোমা-কাছে তবে মোর মূল্য বাঁচে, তোমার মাঝারে বিধির স্বতন্ত্র সৃষ্টি জানিব আমারে। প্রেম তব ঘোষিবে তখন অসংখ্য যুগের আমি একান্ত সাধন। তুমি মোরে করো আবিষ্কার, পূর্ণ ফল দেহো মোরে আমার আজন্ম প্রতীক্ষার। বহিতেছি অজ্ঞাতির বন্ধন সদাই, মুক্তি চাই তোমার জানার মাঝে সত্য তব যেথায় বিরাজে।