যেখানে এসেছি আমি, আমি সেথাকার, দরিদ্র সন্তান আমি দীন ধরণীর। জন্মাবধি যা পেয়েছি সুখদুঃখভার বহু ভাগ্য বলে তাই করিয়াছি স্থির। অসীম ঐশ্বর্যরাশি নাই তোর হাতে, হে শ্যামলা সর্বসহা জননী মৃন্ময়ী। সকলের মুখে অন্ন চাহিস জোগাতে, পারিস নে কত বার-- কই অন্ন কই' কাঁদে তোর সন্তানেরা ম্লান শুষ্ক মুখ। জানি মা গো, তোর হাতে অসম্পূর্ণ সুখ-- যা কিছু গড়িয়া দিস ভেঙে ভেঙে যায়, সব-তাতে হাত দেয় মৃত্যু সর্বভুক, সব আশা মিটাইতে পারিস নে হায় তা বলে কি ছেড়ে যাব তোর তপ্ত বুক!
আমার যে সব দিতে হবে, সে তো আমি জানি! আমার যত বিত্ত প্রভু,আমার যত বাণী। আমার চোখের চেয়ে-দেখা, আমার কানের শোনা, আমার হাতের নিপুণ সেবা, আমার আনাগোনা। সব দিতে হবে। আমার প্রভাত আমার সন্ধ্যা হৃদয়পত্রপুটে গোপন থেকে তোমার পানে উঠবে ফুটে ফুটে। এখন সে যে আমার বীণা, হতেছে তার বাঁধা, বাজবে যখন তোমার হবে তোমার সুরে সাধা। সব দিতে হবে। তোমারি আনন্দ আমার দুঃখে সুখে ভ'রে আমার ক'রে নিয়ে তবে নাও যে তোমার ক'রে। আমার ব'লে যা পেয়েছি শুভক্ষণে যবে তোমার ক'রে দেব তখন তারা আমার হবে। সব দিতে হবে।
হে ভুবন আমি যতক্ষণ তোমারে না বেসেছিনু ভালো ততক্ষণ তব আলো খুঁজে খুঁজে পায় নাই তার সব ধন। ততক্ষণ নিখিল গগন হাতে নিয়ে দীপ তার শূন্যে শূন্যে ছিল পথ চেয়ে। মোর প্রেম এল গান গেয়ে; কী যে হল কানাকানি দিল সে তোমার গলে আপন গলার মালাখানি। মুগ্ধচক্ষে হেসে তোমারে সে গোপনে দিয়েছে কিছু যা তোমার গোপন হৃদয়ে তারার মালার মাঝে চিরদিন রবে গাঁথা হয়ে।