আজ এ মনের কোন্ সীমানায় যুগান্তরের প্রিয়া। দূরে-উড়ে-যাওয়া মেঘের ছিদ্র দিয়া কখনো আসিছে রৌদ্র কখনো ছায়া, আমার জীবনে তুমি আজ শুধু মায়া; সহজে তোমায় তাই তো মিলাই সুরে, সহজেই ডাকি সহজেই রাখি দূরে। স্বপ্নরূপিণী তুমি আকুলিয়া আছ পথ-খোওয়া মোর প্রাণের স্বর্গভূমি। নাই কোনো ভার, নাই বেদনার তাপ, ধূলির ধরায় পড়ে না পায়ের ছাপ। তাই তো আমার ছন্দে সহসা তোমার চুলের ফুলের গন্ধে জাগে নির্জন রাতের দীর্ঘশ্বাস, জাগে প্রভাতের পেলব তারায় বিদায়ের স্মিত হাস। তাই পথে যেতে কাশের বনেতে মর্মর দেয় আনি পাশ-দিয়ে-চলা ধানী-রঙ-করা শাড়ির পরশখানি। যদি জীবনের বর্তমানের তীরে আস কভু তুমি ফিরে স্পষ্ট আলোয়, তবে জানি না তোমার মায়ার সঙ্গে কায়ার কি মিল হবে। বিরহস্বর্গলোকে সে-জাগরণের রূঢ় আলোয় চিনিব কি চোখে-চোখে। সন্ধ্যাবেলায় যে-দ্বারে দিয়েছ বিরহকরুণ নাড়া, মিলনের ঘায়ে সে-দ্বার খুলিলে কাহারো কি পাবে সাড়া।
অন্ধকারের সিন্ধুতীরে একলাটি ঐ মেয়ে আলোর নৌকা ভাসিয়ে দিল আকাশপানে চেয়ে। মা যে তাহার স্বর্গে গেছে এই কথা সে জানে, ঐ প্রদীপের খেয়া বেয়ে আসবে ঘরের পানে। পৃথিবীতে অসংখ্য লোক, অগণ্য তার পথ, তারই মধ্যে স্বর্গ থেকে ছোট্ট ঘরের কোণ যায় কি দেখা যেথায় থাকে দুটিতে ভাইবোন। মা কি তাদের খুঁজে খুঁজে বেড়ায় অন্ধকারে, তারায় তারায় পথ হারিয়ে যায় শূন্যের পারে। মেয়ের হাতের একটি আলো জ্বালিয়ে দিল রেখে, সেই আলো মা নেবে চিনে অসীম দূরের থেকে। ঘুমের মধ্যে আসবে ওদের চুমো খাবার তরে রাতে রাতে মা-হারা সেই বিছানাটির 'পরে।