মনকে, আমার কায়াকে, আমি একেবারে মিলিয়ে দিতে চাই এ কালো ছায়াকে। ওই আগুনে জ্বালিয়ে দিতে, ওই সাগরে তলিয়ে দিতে, ওই চরণে গলিয়ে দিতে, দলিয়ে দিতে মায়াকে-- মনকে, আমার কায়াকে। যেখানে যাই সেথায় একে আসন জুড়ে বসতে দেখে লাজে মরি, লও গো হরি এই সুনিবিড় ছায়াকে মনকে, আমার কায়াকে। তুমি আমার অনুভাবে কোথাও নাহি বাধা পাবে, পূর্ণ একা দেবে দেখা সরিয়ে দিয়ে মায়াকে। মনকে, আমার কায়াকে।
তোমার ঘরের সিঁড়ি বেয়ে যতই আমি নাবছি। আমায় মনে আছে কি না ভয়ে ভয়ে ভাবছি। কথা পাড়তে গিয়ে দেখি, হাই তুললে দুটো; বললে উসুখুসু করে, "কোথায় গেল নুটো।" ডেকে তারে বলে দিলে, "ড্রাইভারকে বলিস, আজকে সন্ধ্যা নটার সময় যাব মেট্রোপলিস।" কুকুরছানার ল্যাজটা ধরে করলে নাড়াচাড়া; বললে আমায়, "ক্ষমা করো, যাবার আছে তাড়া।" তখন পষ্ট বোঝা গেল, নেই মনে আর নেই। আরেকটা দিন এসেছিল একটা শুভক্ষণেই-- মুখের পানে চাইতে তখন, চোখে রইত মিষ্টি; কুকুরছানার ল্যাজের দিকে পড়ত নাকো দৃষ্টি। সেই সেদিনের সহজ রঙটা কোথায় গেল ভাসি; লাগল নতুন দিনের ঠোঁটে রুজ-মাখানো হাসি। বটসুদ্ধ পা-দুখানা তুলে দিলে সোফায়; ঘাড় বেঁকিয়ে ঠেসেঠুসে ঘা লাগালে খোঁপায়। আজকে তুমি শুকনো ডাঙায় হালফ্যাশানের কূলে, ঘাটে নেমে চমকে উঠি এই কথাটাই ভুলে। এবার বিদায় নেওয়াই ভালো, সময় হল যাবার-- ভুলেছ যে ভুলব যখন আসব ফিরে আবার।