কেমন করে তড়িৎ-আলোয় দেখতে পেলেম মনে তোমার বিপুল সৃষ্টি চলে আমার এই জীবনে। সে সৃষ্টি যে কালের পটে লোকে লোকান্তরে রটে, একটু তারি আভাস কেবল দেখি ক্ষণে ক্ষণে। মনে ভাবি, কান্নাহাসি আদর অবহেলা সবই যেন আমায় নিয়ে আমারি ঢেউ-খেলা। সেই আমি তো বাহনমাত্র, যায় সে ভেঙে মাটির পাত্র-- যা রেখে যায় তোমার সে ধন রয় তা তোমার সনে। তোমার বিশ্বে জড়িয়ে থাকে আমার চাওয়া পাওয়া। ভরিয়ে তোলে নিত্যকালের ফাল্গুনেরই হাওয়া। জীবন আমার দুঃখে সুখে দোলে ত্রিভুবনের বুকে, আমার দিবানিশির মালা জড়ায় শ্রীচরণে। আপন-মাঝে আপন জীবন দেখে যে মন কাঁদে। নিমেষগুলি শিকল হয়ে আমায় তখন বাঁধে। মিটল দুঃখ, টুটল বন্ধ-- আমার মাঝে হে আনন্দ, তোমার প্রকাশ দেখে মোহ ঘুচল এ নয়নে।
ছবি ও গান নিয়ে আমার বলবার কথাটা বলে নিই। এটা বয়ঃসন্ধিকালের লেখা, শৈশব যৌবন যখন সবে মিলেছে। ভাষায় আছে ছেলেমানুষি, ভাবে এসেছে কৈশোর। তার পূর্বেকার অবস্থায় একটা বেদনা ছিল অনুদ্দিষ্ট, সে যেন প্রলাপ ব'কে আপনাকে শান্ত করতে চেয়েছে। এখন সেই বয়স যখন কামনা কেবল সুর খুঁজছে না, রূপ খুঁজতে বেরিয়েছে। কিন্তু আলো-আঁধারে রূপের আভাস পায়, স্পষ্ট করে কিছু পায় না। ছবি এঁকে তখন প্রত্যক্ষতার স্বাদ পাবার ইচ্ছা জেগেছে মনে কিন্তু ছবি আঁকবার হাত তৈরি হয় নি তো। কবি সংসারের ভিতরে তখনও প্রবেশ করে নি, তখনও সে বাতায়নবাসী। দূর থেকে যার আভাস দেখে তার সঙ্গে নিজের মনের নেশা মিলিয়ে দেয়। এর কোনো-কোনোটা চোখে দেখা একটুকরো ছবি পেনসিলে আঁকা, রবারে ঘষে দেওয়া, আর কোনো-কোনোটা সম্পূর্ণ বানানো। মোটের উপরে অক্ষম ভাষার ব্যাকুলতায় সবগুলিতেই বানানো ভাব প্রকাশ পেয়েছে, সহজ হয় নি। কিন্তু সহজ হবার একটা চেষ্টা দেখা যায়। সেইজন্যে চলতি ভাষা আপন এলোমেলো পদক্ষেপে এর যেখানে-সেখানে প্রবেশ করেছে। আমার ভাষায় ও ছন্দে এই একটা মেলামেশা আরম্ভ হল। ছবি ও গান কড়ি ও কোমলের ভূমিকা করে দিলে।