সুরলোকে নৃত্যের উৎসবে যদি ক্ষণকালতরে ক্লান্ত উর্বশীর তালভঙ্গ হয় দেবরাজ করে না মার্জনা। পূর্বার্জিত কীর্তি তার অভিসম্পাতের তলে হয় নির্বাসিত। আকস্মিক ত্রুটি মাত্র স্বর্গ কভু করে না স্বীকার। মানবের সভাঙ্গনে সেখানেও আছে জেগে স্বর্গের বিচার। তাই মোর কাব্যকলা রয়েছে কুণ্ঠিত তাপতপ্ত দিনান্তের অবসাদে; কী জানি শৈথিল্য যদি ঘটে তার পদক্ষেপতালে। খ্যাতিমুক্ত বাণী মোর মহেন্দ্রের পদতলে করি সমর্পণ যেন চলে যেতে পারি নিরাসক্তমনে বৈরাগী সে সূর্যাস্তের গেরুয়া আলোয়; নির্মম ভবিষ্য, জানি, অতর্কিতে দস্যুবৃত্তি করে কীর্তির সঞ্চয়ে-- আজি তার হয় হোক প্রথম সূচনা।
ঝাঁকড়া চুলের মেয়ের কথা কাউকে বলি নি, কোন্ দেশে যে চলে গেছে সে-চঞ্চলিনী। সঙ্গী ছিল কুকুর কালু, বেশ ছিল তার আলুথালু, আপনা-'পরে অনাদরে ধুলায় মলিনী। হুটোপাটি ঝগড়াঝাঁটি ছিল নিষ্কারণেই দিঘির জলে গাছের ডালে গতি ক্ষণে-ক্ষণেই। পাগলামি তার কানায় কানায়, খেয়াল দিয়ে খেলা বানায়, উচ্চহাসে কলভাষে কলকলিনী। দেখা হলে যখন-তখন বিনা অপরাধে মুখভঙ্গী করত আমায় অপমানের ছাঁদে। শাসন করতে যেমন ছুটি হঠাৎ দেখি ধুলায় লুটি' কাজল আঁখি চোখের জলে ছলছলিনী। আমার সঙ্গে পঞ্চাশবার জন্মশোধের আড়ি কথায় কথায় নিত্যকালের মতন ছাড়াছাড়ি। ডাকলে তারে "পুঁটলি' ব'লে সাড়া দিত মর্জি হলে, ঝগড়াদিনের নাম ছিল তার স্বর্ণনলিনী।