চতুর্দিকে বহ্নিবাষ্প শূন্যাকাশে ধায় বহুদূরে, কেন্দ্রে তার তারাপুঞ্জ মহাকাল-চক্ররথে ঘুরে। কত বেগ, কত তাপ, কত ভার, কত আয়তন, সূক্ষ্ম অঙ্কে করেছে গণন পণ্ডিতেরা লক্ষ কোটি ক্রোশ দূর হতে দুর্লক্ষ্য আলোতে। আপনার পানে চাই, লেশমাত্র পরিচয় নাই। এ কি কোনো দৃশ্যাতীত জ্যোতি। কোন্ অজানারে ঘিরি এই অজানার নিত্য গতি। বহুযুগে বহুদূরে স্মৃতি আর বিস্মৃতি-বিস্তার, যেন বাষ্পপরিবেশ তার ইতিহাসে পিণ্ড বাঁধে রূপে রূপান্তরে। "আমি' উঠে ঘনাইয়া কেন্দ্র-মাঝে অসংখ্য বৎসরে। সুখদুঃখ ভালোমন্দ রাগদ্বেষ ভক্তি সখ্য স্নেহ এই নিয়ে গড়া তার সত্তাদেহ; এরা সব উপাদান ধাক্কা পায়, হয় আবর্তিত, পুঞ্জিত, নর্তিত। এরা সত্য কী যে বুঝি নাই নিজে। বলি তারে মায়া-- যাই বলি শব্দ সেটা, অব্যক্ত অর্থের উপচ্ছায়া। তার পরে ভাবি, এ অজ্ঞেয় সৃষ্টি "আমি' অজ্ঞেয় অদৃশ্যে যাবে নাবি। অসীম রহস্য নিয়ে মুহূর্তের নিরর্থকতায় লুপ্ত হবে নানারঙা জলবিম্বপ্রায়, অসমাপ্ত রেখে যাবে তার শেষকথা আত্মার বারতা। তখনো সুদূরে ঐ নক্ষত্রের দূত ছুটাবে অসংখ্য তার দীপ্ত পরমাণুর বিদ্যুৎ অপার আকাশ-মাঝে, কিছুই জানি না কোন্ কাজে। বাজিতে থাকিবে শূন্যে প্রশ্নের সুতীব্র আর্তস্বর, ধ্বনিবে না কোনোই উত্তর।
বয়স তখন ছিল কাঁচা; হালকা দেহখানা ছিল পাখির মতো, শুধু ছিল না তার ডানা। উড়ত পাশের ছাদের থেকে পায়রাগুলোর ঝাঁক, বারান্দাটার রেলিং-'পরে ডাকত এসে কাক। ফেরিওয়ালা হেঁকে যেত গলির ওপার থেকে, তপসিমাছের ঝুড়ি নিত গামছা দিয়ে ঢেকে। বেহালাটা হেলিয়ে কাঁধে ছাদের 'পরে দাদা, সন্ধ্যাতারার সুরে যেন সুর হত তাঁর সাধা। জুটেছি বৌদিদির কাছে ইংরেজি পাঠ ছেড়ে, মুখখানিতে-ঘের-দেওয়া তাঁর শাড়িটি লালপেড়ে। চুরি ক'রে চাবির গোছা লুকিয়ে ফুলের টবে স্নেহের রাগে রাগিয়ে দিতেম নানান উপদ্রবে। কঙ্কালী চাটুজ্জে হঠাৎ জুটত সন্ধ্যা হলে; বাঁ হাতে তার থেলো হুঁকো, চাদর কাঁধে ঝোলে। দ্রুত লয়ে আউড়ে যেত লবকুশের ছড়া; থাকত আমার খাতা লেখা, পড়ে থাকত পড়া-- মনে মনে ইচ্ছে হত, যদিই কোনো ছলে ভর্তি হওয়া সহজ হত এই পাঁচালির দলে ভাব্না মাথায় চাপত নাকো ক্লাসে ওঠার দায়ে, গান শুনিয়ে চলে যেতুম নতুন নতুন গাঁয়ে। স্কুলের ছুটি হয়ে গেলে বাড়ির কাছে এসে হঠাৎ দেখি, মেঘ নেমেছে ছাদের কাছে ঘেঁষে। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে, রাস্তা ভাসে জলে, ঐরাবতের শুঁড় দেখা দেয় জল-ঢালা সব নলে। অন্ধকারে শোনা যেত রিম্ঝিমিনি ধারা, রাজপুত্র তেপান্তরে কোথা সে পথহারা। ম্যাপে যে-সব পাহাড় জানি, জানি যে-সব গাঙ কুয়েন্লুন আর মিসিসিপি ইয়াংসিকিয়াং, জানার সঙ্গে আধেক-জানা, দূরের থেকে শোনা, নানা রঙের নানা সুতোয় সব দিয়ে জাল-বোনা, নানারকম ধ্বনির সঙ্গে নানান চলাফেরা সব দিয়ে এক হালকা জগৎ মন দিয়ে মোর ঘেরা, ভাব্নাগুলো তারই মধ্যে ফিরত থাকি থাকি, বানের জলে শ্যাওলা যেমন, মেঘের তলে পাখি।
BEFORE THE end of my journey may I reach within myself the one which is the all, leaving the outer shell to float away with the drifting multitude upon the current of chance and change.