খোকার চোখে যে ঘুম আসে সকল-তাপ-নাশা-- জান কি কেউ কোথা হতে যে করে সে যাওয়া-আসা। শুনেছি রূপকথার গাঁয়ে জোনাকি-জ্বলা বনের ছায়ে দুলিছে দুটি পারুল-কুঁড়ি, তাহারি মাঝে বাসা-- সেখান থেকে খোকার চোখে করে সে যাওয়া-আসা। খোকার ঠোঁটে যে হাসিখানি চমকে ঘুমঘোরে-- কোন্ দেশে যে জনম তার কে কবে তাহা মোরে। শুনেছি কোন্ শরৎ-মেঘে শিশু-শশীর কিরণ লেগে সে হাসিরুচি জনমি ছিল শিশিরশুচি ভোরে-- খোকার ঠোঁটে যে হাসিখানি চমকে ঘুমঘোরে। খোকার গায়ে মিলিয়ে আছে যে কচি কোমলতা-- জান কি সে যে এতটা কাল লুকিয়ে ছিল কোথা। মা যবে ছিল কিশোরী মেয়ে করুণ তারি পরান ছেয়ে মাধুরীরূপে মুরছি ছিল কহে নি কোনো কথা-- খোকার গায়ে মিলিয়ে আছে যে কচি কোমলতা। আশিস আসি পরশ করে খোকারে ঘিরে ঘিরে-- জান কি কেহ কোথা হতে সে বরষে তার শিরে। ফাগুনে নব মলয়শ্বাসে, শ্রাবণে নব নীপের বাসে, আশিনে নব ধান্যদলে, আষাড়ে নব নীরে-- আশিস আসি পরশ করে খোকারে ঘিরে ঘিরে।
এই-যে খোকা তরুণতনু নতুন মেলে আঁখি-- ইহার ভার কে লবে আজি তোমরা জান তা কি। হিরণময় কিরণ-ঝোলা যাঁহার এই ভুবন-দোলা তপন-শশী-তারার কোলে দেবেন এরে রাখি-- এই-যে খোকা তরুণতনু নতুন মেলে আঁখি।
হে রাজেন্দ্র,তব হাতে কাল অন্তহীন। গণনা কেহ না করে, রাত্রি আর দিন আসে যায়, ফুটে ঝরে যুগযুগন্তরা। বিলম্ব নাহিক তব, নাহি তব ত্বরা-- প্রতীক্ষা করিতে জান। শতবর্ষ ধ'রে একটি পুষ্পের কলি ফুটাবার তরে চলে তব ধীর আয়োজন। কাল নাই আমাদের হাতে; কাড়াকাড়ি করে তাই সবে মিলে; দেরি কারো নাহি সহে কভু। আগে তাই সকলের সব সেবা, প্রভু, শেষ করে দিতে দিতে কেটে যায় কাল-- শূন্য পড়ে থাকে হায় তব পূজা-থাল। অসময়ে ছুটে আসি, মনে বাসি ভয়-- এসে দেখি, যায় নাই তোমার সময়।
সেই পুরাতন কালে ইতিহাস যবে সংবাদে ছিল না মুখরিত নিস্তব্ধ খ্যাতির যুগে-- আজিকার এইমতো প্রাণযাত্রাকল্লোলিত প্রাতে যাঁরা যাত্রা করেছেন মরণশঙ্কিল পথে আত্মার অমৃত-অন্ন করিবারে দান দূরবাসী অনাত্মীয় জনে, দলে দলে যাঁরা উত্তীর্ণ হন নি লক্ষ্য, তৃষানিদারুণ মরুবালুতলে অস্থি গিয়েছেন রেখে, সমুদ্র যাঁদের চিহ্ন দিয়েছে মুছিয়া, অনারদ্ধ কর্মপথে অকৃতার্থ হন নাই তাঁরা-- মিশিয়া আছেন সেই দেহাতীত মহাপ্রাণ-মাঝে শক্তি জোগাইছে যাহা অগোচরে চিরমানবেরে-- তাঁহাদের করুণার স্পর্শ লভিতেছি আজি এই প্রভাত-আলোকে, তাঁহাদের করি নমস্কার।