চাই গো আমি তোমারে চাই তোমায় আমি চাই-- এই কথাটি সদাই মনে বলতে যেন পাই। আর যা-কিছু বাসনাতে ঘুরে বেড়াই দিনে রাতে মিথ্যা সে-সব মিথ্যা ওগো তোমায় আমি চাই। রাত্রি যেমন লুকিয়ে রাখে আলোর প্রার্থনাই-- তেমনি গভীর মোহের মাঝে তোমায় আমি চাই। শান্তিরে ঝড় যখন হানে শান্তি তবু চায় সে প্রাণে, তেমনি তোমায় আঘাত করি তবু তোমায় চাই।
দুঃখের বরষায় চক্ষের জল যেই নামল বক্ষের দরজায় বন্ধুর রথ সেই থামল। মিলনের পাত্রটি পূর্ণ যে বিচ্ছেদে বেদনায়; অর্পিনু হাতে তাঁর, খেদ নাই, আর মোর খেদ নাই। বহুদিন-বঞ্চিত অন্তরে সঞ্চিত কী আশা, চক্ষের নিমেষেই মিটল সে পরশের তিয়াষা। এতদিনে জানলেম যে কাঁদন কাঁদলেম সে কাহার জন্য। ধন্য এ জাগরণ, ধন্য এ ক্রন্দন, ধন্য রে ধন্য।
এ আমার শরীরের শিরায় শিরায় যে প্রাণ-তরঙ্গমালা রাত্রিদিন ধায় সেই প্রাণ ছুটিয়াছে বিশ্বদিগ্বিজয়ে, সেই প্রাণ অপরূপ ছন্দে তালে লয়ে নাচিছে ভুবনে; সেই প্রাণ চুপে চুপে বসুধার মৃত্তিকার প্রতি রোমকূপে লক্ষ লক্ষ তৃণে তৃণে সঞ্চারে হরষে, বিকাশে পল্লবে পুষ্পে-- বরষে বরষে বিশ্বব্যাপী জন্মমৃত্যুসমুদ্রদোলায় দুলিতেছে অন্তহীন জোয়ার-ভাঁটায়। করিতেছি অনুভব, সে অনন্ত প্রাণ অঙ্গে অঙ্গে আমারে করেছে মহীয়ান। সেই যুগযুগান্তের বিরাট স্পন্দন আমার নাড়ীতে আজি করিছে নর্তন।