চক্ষে তোমার কিছু বা করুণা ভাসে, ওষ্ঠ তোমার কিছু কৌতুকে হাসে, মৌনে তোমার কিছু লাগে মৃদু সুর। আলো-আঁধারের বন্ধনে আমি বাঁধা, আশানিরাশায় হৃদয়ে নিত্য ধাঁধা; সঙ্গ যা পাই তারই মাঝে রহে দূর।
নির্মম হতে কুণ্ঠিত হও মনে; অনুকম্পার কিঞ্চিত কম্পনে ক্ষণিকের তরে ছলকে কণিক সুধা। ভাণ্ডার হতে কিছু এনে দাও খুঁজি, অন্তরে তাহা ফিরাইয়া লও বুঝি, বাহিরের ভোজে হৃদয়ে গুমরে ক্ষুধা। ওগো মল্লিকা, তব ফাল্গুনরাতি অজস্র দানে আপনি উঠে যে মাতি, সে দাক্ষিণ্য দক্ষিণবায়ু-তরে! তার সম্পদ সারা অরণ্য ভরি-- গন্ধের ভরে মন্থর উত্তরী কুঞ্জ কুঞ্জ লুণ্ঠিত ধূলি-'পরে। উত্তরবায়ু আমি ভিক্ষুকসম হিমনিশ্বাসে জানাই মিনতি মম শুষ্ক শাখার বীথিকারে চঞ্চলি। অকিঞ্চনের রোদনে ধেয়ান টুটে, কৃপণ দয়ায় ক্বচিৎ একটি ফুটে অবগুণ্ঠিত অকাল পুষ্পকলি। যত মনে ভাবি, রাখি তারে সঞ্চিয়া, ছিঁড়িয়া কাড়িয়া লয় মোরে বঞ্চিয়া প্রলয়প্রবাহে ঝ'রে-পড়া যত পাতা। বিস্ময় লাগে আশাতীত সেই দানে, ক্ষীণ সৌরভে ক্ষণগৌরব আনে-- বরণমাল্য হয় না তাহাতে গাঁথা।
দিন সে প্রাচীন অতি প্রবীণ বিষয়ী তীক্ষ্ণদৃষ্টি, বস্তুরাজ্যজয়ী, দিকে দিকে প্রসারিয়া গনিছে সম্বল আপনার। নবীনা শ্যামলা সন্ধ্যা পরেছে জ্যোতির অলংকার চিরনববধূ, অন্তরে সলজ্জ মধু অদৃশ্য ফুলের কুঞ্জে রেখেছে নিভৃতে। অবগুণ্ঠনের অলক্ষিতে তার দূর পরিচয় শেষ নাহি হয়। দিনশেষে দেখা দেয় সে আমার বিদেশিনী-- তারে চিনি তবু নাহি চিনি।