১ গোলাপ হাসিয়া বলে, "আগে বৃষ্টি যাক চলে, দিক দেখা তরুণ তপন-- তখন ফুটাব এ যৌবন।' গেল মেঘ, এল উষা, আকাশের আঁখি হতে মুছে দিল বৃষ্টিবারিকণা-- সে তো রহিল না। কোকিল ভাবিছে মনে, "শীত যাবে কত ক্ষণে, গাছপালা ছাইবে মুকুলে-- তখন গাহিব মন খুলে।' কুয়াশা কাটিয়া যায়, বসন্ত হাসিয়া চায়, কানন কুসুমে ভরে গেল-- সে যে মরে গেল! ২ এত শীঘ্র ফুটিলি কেন রে! ফুটিলে পড়িতে হয় ঝরে-- মুকুলের দিন আছে তবু, ফোটা ফুল ফোটে না তো আর। বড়ো শীঘ্র গেলি মধুমাস, দু দিনেই ফুরালো নিশ্বাস। বসন্ত আবার আসে বটে, গেল যে সে ফেরে না আবার।
হেথায় তাহারে পাই কাছে-- যত কাছে ধরাতল, যত কাছে ফুলফল-- যত কাছে বায়ু জল আছে। যেমন পাখির গান, যেমন জলের তান, যেমনি এ প্রভাতের আলো, যেমনি এ কোমলতা, অরণ্যের শ্যামলতা, তেমনি তাহারে বাসি ভালো। যেমন সুন্দর সন্ধ্যা, যেমন রজনীগন্ধা, শুকতারা আকাশের ধারে, যেমন সে অকলুষা শিশিরনির্মলা উষা, তেমনি সুন্দর হেরি তারে। যেমন বৃষ্টির জল, যেমন আকাশতল, সুখসুপ্তি যেমন নিশার, যেমন তটিনীনীর, বটচ্ছায়া অটবীর, তেমনি সে মোর আপনার। যেমন নয়ন ভরি অশ্রুজল পড়ে ঝরি তেমনি সহজ মোর গীতি-- যেমন রয়েছে প্রাণ ব্যাপ্ত করি মর্মস্থান তেমনি রয়েছে তার প্রীতি।