অনিঃশেষ প্রাণ অনিঃশেষ মরণের স্রোতে ভাসমান, পদে পদে সংকটে সংকটে নামহীন সমুদ্রের উদ্দেশবিহীন কোন্ তটে পৌঁছিবারে অবিশ্রাম বাহিতেছে খেয়া, কোন্ সে অলক্ষ্য পাড়ি-দেয়া মর্মে বসি দিতেছে আদেশ, নাহি তার শেষ। চলিতেছে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি প্রাণী, এই শুধু জানি। চলিতে চলিতে থামে, পণ্য তার দিয়ে যায় কাকে, পশ্চাতে যে রহে নিতে ক্ষণপরে সেও নাহি থাকে। মৃত্যুর কবলে লুপ্ত নিরন্তর ফাঁকি-- তবু সে ফাঁকির নয়, ফুরাতে ফুরাতে রহে বাকি; পদে পদে আপনারে শেষ করি দিয়া পদে পদে তবু রহে জিয়া। অস্তিত্বের মহৈর্শ্বয শতছিদ্র ঘটতলে ভরা-- অফুরান লাভ তার অফুরান ক্ষতিপথে ঝরা; অবিশ্রাম অপচয়ে সঞ্চয়ের আলস্য ঘুচায়, শক্তি তাহে পায়। চলমান রূপহীন যে বিরাট, সেই মহাক্ষণে আছে তবু ক্ষণে ক্ষণে নেই। স্বরূপ যাহার থাকা আর নাই থাকা, খোলা আর ঢাকা, কী নামে ডাকিব তারে অস্তিত্বপ্রবাহে-- মোর নাম দেখা দিয়ে মিলে যাবে যাহে।
পথের নেশা আমায় লেগেছিল, পথ আমারে দিয়েছিল ডাক-- সূর্য তখন পূর্বগগনমূলে, নৌকা তখন বাঁধা নদীর কূলে, শিশির তখন শুকায় নিকো ফুলে, শিবালয়ে উঠল বেজে শাঁখ। পথের নেশা তখন লেগেছিল, পথ আমারে দিয়েছিল ডাক। আঁকাবাঁকা রাঙা মাটির লেখা ঘরছাড়া ওই নানা দেশের পথ-- প্রভাত-কালে অপার-পানে চেয়ে কী মোহগান উঠতেছিল গেয়ে, উদার সুরে ফেলতেছিল ছেয়ে বহুদূরের অরণ্য পর্বত। নানা দিনের নানা-পথিক-চলা ঘরছাড়া ওই নানা দেশের পথ। ভাবি নাইকো কেন কিসের লাগি ছুটে চলে এলেম পথের 'পরে। নিত্য কেবল এগিয়ে চলার সুখ, বাহির হওয়ার অনন্ত কৌতুক, প্রতি পদেই অন্তর উৎসুক অজানা কোন্ নিরুদ্দেশের তরে। ভোরের বেলা দুয়ার খুলে দিয়ে বাহির হয়ে এলেম পথের 'পরে। বেলা এখন অনেক হয়ে গেছে, পেরিয়ে চলে এলেম বহু দূর। ভেবেছিলেম পথের বাঁকে বাঁকে নব নব ভাগ্য আমায় ডাকে, হঠাৎ যেন দেখতে পাব কাকে, শুনতে যেন পাব নূতন সুর। তার পরে তো অনেক বেলা হল, পেরিয়ে চলে এলেম বহু দূর। অনেক দেখে ক্লান্ত এখন প্রাণ, ছেড়েছি সব অকস্মাতের আশা। এখন কেবল একটি পেলেই বাঁচি, এসেছি তাই ঘাটের কাছাকাছি-- এখন শুধু আকুল মনে যাচি তোমার পারে খেয়ার তরী ভাসা। জেনেছি আজ চলেছি কার লাগি ছেড়েছি সব অকস্মাতের আশা।