দিন রাত্রি নাহি মানি, আয় তোরা আয় রে, চির সুখ-রসে রত আমরা হেথায় রে। বসন্তে মলয় বায় একটি মিলায়ে যায়, আরেকটি আসে পুনঃ মধুময় তেমনি, প্রেমের স্বপন হায় একটি যেমনি যায় আরেকটি সুস্বপন জাগি উঠে অমনি। নন্দন কানন যদি এ মরতে চাই রে তবে তা ইহাই রে! তবে তা ইহাই রে। প্রেমের নিশ্বাস হেথা ফেলিতেছি বালিকা, সুরভি নিশ্বাস যথা ফেলে ফুল-কলিকা, তাহাদের আঁখিজল এমন সে সুবিমল এমন সে সমুজল মুকুতার পারা রে, তাদের চুম্বন হাসি দিবে কত সুধারাশি যাদের মধুর এত নয়নের ধারা রে। নন্দনকানন যদি এ মরতে চাই রে তবে তা ইহাই রে। তবে তা ইহাই রে! থাকুক ও-সব সুখ চাই না, গো চাই না, যে সুখ-ভিখারী আমি তাহা যে গো পাই না। দুই হৃদি এক ঠাঁই প্রণয়ে মিলিতে চাই সুখে দুখে যে প্রেমের নাহি হবে শেষ রে। প্রেমে উদাসীন হৃদি শত যুগে যাপে যদি, তার চেয়ে কত ভালো এ সুখ নিমেষ রে! নন্দনকানন যদি এ মরতে চাই রে তবে তা ইহাই রে তবে তা ইহাই রে।
প্রভাতে প্রভাতে পাই আলোকের প্রসন্ন পরশে অস্তিত্বের স্বর্গীয় সম্মান, জ্যোতিঃস্রোতে মিশে যায় রক্তের প্রবাহ, নীরবে ধ্বনিত হয় দেহে মনে জ্যোতিষ্কের বাণী। রহি আমি দু চক্ষুর অঞ্জলি পাতিয়া প্রতিদিন ঊর্ধ্ব-পানে চেয়ে। এ আলো দিয়েছে মোরে জন্মের প্রথম অভ্যর্থনা, অস্তসমুদ্রের তীরে এ আলোর দ্বারে রবে মোর জীবনের শেষ নিবেদন। মনে হয়, বৃথা বাক্য বলি, সব কথা বলা হয় নাই; আকাশবাণীর সাথে প্রাণের বাণীর সুর বাঁধা হয় নাই পূর্ণ সুরে, ভাষা পাই নাই।
যৌবনের অনাহূত রবাহূত ভিড়-করা ভোজে কে ছিল কাহার খোঁজে, ভালো করে মনে ছিল না তা। ক্ষণে ক্ষণে হয়েছে আসন পাতা, ক্ষণে ক্ষণে নিয়েছে সরায়ে। মালা কেহ গিয়েছে পরায়ে জেনেছিনু, তবু কে যে জানি নাই তারে। মাঝখানে বারে বারে কত কী যে এলোমেলো কভু গেল, কভু এল। সার্থকতা ছিল যেইখানে ক্ষণিক পরশি তারে চলে গেছি জনতার টানে। সে যৌবনমধ্যাহ্নের অজস্রের পালা শেষ হয়ে গেছে আজি, সন্ধ্যার প্রদীপ হল জ্বালা। অনেকের মাঝে যারে কাছে দেখে হয় নাই দেখা একেলার ঘরে তারে একা চেয়ে দেখি, কথা কই চুপে চুপে, পাই তারে না-পাওয়ার রূপে।