ফসল কাটা হলে সারা মাঠ হয়ে যায় ফাঁক; অনাদরের শস্য গজায়, তুচ্ছ দামের শাক। আঁচল ভরে তুলতে আসে গরিব-ঘরের মেয়ে, খুশি হয়ে বাড়িতে যায়, যা জোটে তাই পেয়ে। আজকে আমার চাষ চলে না, নাই লাঙলের বালাই; পোড়ো মাঠের কুঁড়েমিতে মন্থর দিন চালাই। জমিতে রস কিছু আছে, শক্ত যায় নি আঁটি; ফলায় না সে ফল তবুও সবুজ রাখে মাটি। শ্রাবণ আমার গেছে চলে, নাই বাদলের ধারা; অঘ্রান সে সোনার ধানের দিন করেছে সারা। চৈত্র আমার রোদে পোড়া, শুকনো যখন নদী, বুনো ফলের ঝোপের তলায় ছায়া বিছায় যদি, জানব আমার শেষের মাসে ভাগ্য দেয় নি ফাঁকি, শ্যামল ধরার সঙ্গে আমার বাঁধন রইল বাকি।
দেখিলাম খানকয়েক পুরাতন চিঠি-- স্নেহমুগ্ধ জীবনের চিহ্ন দু-চারিটি স্মৃতির খেলনা-ক'টি বহু যত্নভরে গোপনে সঞ্চয় করি রেখেছিলে ঘরে। যে প্রবল কালস্রোতে প্রলয়ের ধারা ভাসাইয়া যায় কত রবিচন্দ্রতারা, তারি কাছ হতে তুমি বহু ভয়ে ভয়ে এই ক'টি তুচ্ছ বস্তু চুরি করে লয়ে লুকায়ে রাখিয়াছিলে, বলেছিলে মনে, "অধিকার নাই কারো আমার এ ধনে'। আশ্রয় আজিকে তারা পাবে কার কাছে? জগতের কারো নয়, তবু তারা আছে। তাদের যেমন তব রেখেছিল স্নেহ, তোমারে তেমনি আজ রাখে নি কি কেহ?