দুঃখের দিনে লেখনীকে বলি-- লজ্জা দিয়ো না। সকলের নয় যে আঘাত ধোরো না সবার চোখে। ঢেকো না মুখ অন্ধকারে, রেখো না দ্বারে আগল দিয়ে। জ্বালো সকল রঙের উজ্জ্বল বাতি, কৃপণ হোয়ো না। অতি বৃহৎ বিশ্ব, অম্লান তার মহিমা, অক্ষুব্ধ তার প্রকৃতি। মাথা তুলেছে দুর্দর্শ সূর্যলোকে, অবিচলিত অকরুণ দৃষ্টি তার অনিমেষ, অকম্পিত বক্ষ প্রসারিত গিরি নদী প্রান্তরে। আমার সে নয়, সে অসংখ্যের। বাজে তার ভেরী সকল দিকে, জ্বলে অনিভৃত আলো, দোলে পতাকা মহাকাশে। তার সমুখে লজ্জা দিয়ো না-- আমার ক্ষতি আমার ব্যথা তার সমুখে কণার কণা। এই ব্যথাকে আমার বলে ভুলব যখনি তখনি সে প্রকাশ পাবে বিশ্বরূপে। দেখতে পাব বেদনার বন্যা নামে কালের বুকে শাখাপ্রশাখায়; ধায় হৃদয়ের মহানদী সব মানুষের জীবনস্রোতে ঘরে ঘরে। অশ্রুধারার ব্রহ্মপুত্র উঠছে ফুলে ফুলে তরঙ্গে তরঙ্গে; সংসারের কূলে কূলে চলে তার বিপুল ভাঙাগড়া দেশে দেশান্তরে। চিরকালের সেই বিরহতাপ, চিরকালের সেই মানুষের শোক, নামল হঠাৎ আমার বুকে; এক প্লাবনে থর্থরিয়ে কাঁপিয়ে দিল পাঁজরগুলো-- সব ধরণীর কান্নার গর্জনে মিলে গিয়ে চলে গেল অনন্তে, কী উদ্দেশে কে তা জানে। আজকে আমি ডেকে বলি লেখনীকে, লজ্জা দিয়ো না। কূল ছাপিয়ে উঠুক তোমার দান। দাক্ষিণ্যে তোমার ঢাকা পড়ুক অন্তরালে আমার আপন ব্যথা। ক্রন্দন তার হাজার তানে মিলিয়ে দিয়ো বিশাল বিশ্বসুরে।