ভাগ্য যখন কৃপণ হয়ে আসে, বিশ্ব যবে নিঃস্ব তিলে তিলে, মিষ্ট মুখে ভুবন-ভরা হাসি ওষ্ঠে শেষে ওজন-দরে মিলে, বন্ধুজনে বন্ধ করে প্রাণ, দীর্ঘদিন সঙ্গীহীন একা, হঠাৎ পড়ে ঋণশোধেরই পালা, ঋণীজনের না যায় পাওয়া দেখা, তখন ঘরে বন্ধ হ রে কবি, খিলের পরে খিল লাগাও খিল। কথার সাথে গাঁথো কথার মালা, মিলের সাথে মিল মিলাও মিল। কপাল যদি আবার ফিরে যায়, প্রভাত-কালে হঠাৎ জাগরণে, শূন্য নদী আবার যদি ভরে শরৎ-মেঘে ত্বরিত বরিষনে, বন্ধু ফিরে বন্দী করে বুকে, সন্ধি করে অন্ধ অরিদল, অরুণ ঠোঁটে তরুণ ফোটে হাসি, কাজল চোখে করুণ আঁখিজল, তখন খাতা পোড়াও খ্যাপা কবি, দিলের সাথে দিল লাগাও দিল। বাহুর সাথে বাঁধো মৃণাল-বাহু, চোখের সাথে চোখে মিলাও মিল।
মৃত্যুর পাত্রে খৃস্ট যেদিন মূত্যুহীন প্রাণ উৎসর্গ করলেন রবাহূত অনাহূতের জন্যে, তার পরে কেটে গেছে বহু শত বৎসর। আজ তিনি একবার নেমে এলেন নিত্যধাম থেকে মর্তধামে। চেয়ে দেখলেন, সেকালেও মানুষ ক্ষতবিক্ষত হত যে-সমস্ত পাপের মারে-- যে উদ্ধত শেল ও শল্য, যে চতুর ছোরা ও ছুরি, যে ক্রূর কুটিল তলোয়ারের আঘাতে-- বিদ্যুদ্বেগে আজ তাদের ফলায় শান দেওয়া হচ্ছে হিস্হিস্ শব্দে স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে বড়ো বড়ো মসীধূমকেতন কারখানাঘরে। কিন্তু দারুণতম যে মৃত্যুবাণ নূতন তৈরি হল, ঝক্ঝক্ করে উঠল নরঘাতকের হাতে, পূজারি তাতে লাগিয়েছে তাঁরই নামের ছাপ তীক্ষ্ণ নখে আঁচড় দিয়ে। খৃস্ট বুকে হাত চেপে ধরলেন; বুঝলেন শেষ হয় নি তাঁর নিরবচ্ছিন্ন মৃত্যুর মুহূর্ত, নূতন শূল তৈরি হচ্ছে বিজ্ঞানশালায়-- বিঁধছে তাঁর গ্রন্থিতে গ্রন্থিতে। সেদিন তাঁকে মেরেছিল যারা ধর্মমন্দিরের ছায়ায় দাঁড়িয়ে, তারাই আজ নূতন জন্ম নিল দলে দলে, তারাই আজ ধর্মমন্দিরের বেদীর সামনে থেকে পূজামন্ত্রের সুরে ডাকছে ঘাতক সৈন্যকে-- বলছে "মারো মারো'। মানবপুত্র যন্ত্রণায় বলে উঠলেন ঊর্ধ্বে চেয়ে, "হে ঈশ্বর, হে মানুষের ঈশ্বর, কেন আমাকে ত্যাগ করলে।'